আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান গ্রেফতার

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধানকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।গ্রেফতারকৃতের নাম হাসিবুর রহমান ওরফে আযযাম আল গালিব। হাসিব পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানার হাবিবুর রহমানের পুত্র। সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এল.এল.বি (সম্মান) ১ম বর্ষের ছাত্র।রোববার রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।আজ সোমবার দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

সিটিটিসির প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃত হাসিবুর রহমানের সাথে টেলিগ্রামে একই মতাদর্শ প্রচারের সাথে জড়িত ‘জায়েদ ইবনে আলী’ ও ‘শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডির সাথে যোগাযোগ হয় এবং তারা একত্রে সংগঠনের প্রচার প্রচারণা, সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। হাসিবুর রহমান ‘জায়েদ ইবনে আলী ও শাফায়েত মুসান্না ইসারের’ সাথে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের তথাকথিত “ত্রি-রতেœ’র প্রধান হিসেবে অনলাইন র‌্যাডিকালাইজেশনের নেতৃত্ব প্রদান করে।হাসিবুর রহমানের নিকট হতে জব্দকৃত মোবাইল পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম অ্যাপসসহ বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ‘জায়েদ ইবনে আলী ও শাফায়েত মুসান্না ইসা’ আইডি পরিচালনাকারী আল আমিন সিদ্দিকী এবং নারী জঙ্গি জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা সিটিটিসি’র হাতে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত হাসিবুর রহমান বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়া ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করতো। নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের ছায়াতলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য ছিল তার। এই লক্ষ্যে সে কথিত সশস্ত্র জিহাদের অপরিহার্যতা ও কার্যকারিতা বর্ণনা করে বিভিন্ন পোস্ট দেয়ার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সহিংস উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে র‌্যাডিকালাইজ করতো।
তিনি বলেন, সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ্ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। সে ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করে ঢাকা অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নকালে সহিংস উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদের আদর্শে দীক্ষিত হয়। এসময় সে বিপুল পরিমাণে উগ্রবাদী বই পড়তে শুরু করে। সে প্রাথমিকভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আন্তর্জাতিক সহিংস উগ্রবাদী সংগঠন আল কায়েদার আদর্শ ও মতবাদ প্রচারকারী আইডি Zamil Hasan & Md Jamsed Hossain আইডি দু’টির সাথে যুক্ত হয়। এই আইডিগুলোতে তালেবান ও আল কায়েদা বিষয়ে বিভিন্ন লেখালেখি হতো এবং তাদের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করতো। হাসিবুর রহমান তাদের লেখালেখি দ্বারা আল-কায়েদা ও আনসার আল ইসলামের মতাদর্শের প্রতি আগ্রহী হয় এবং তাদের আইডিতে প্রচারিত dawahilallah.com, darulilm.org, gazwa.net সাইট সম্পর্কে জানতে পারে। সে ভিপিএন ব্যবহার করে নিয়মিত এসকল সাইটে প্রবেশ করে সহিংস উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধকারী বিভিন্ন অডিও, ভিডিও ও পিডিএফ বই পড়তে শুরু করে এবং ক্রমশ উগ্রবাদী মতাদর্শের প্রতি ঝুঁকে পরে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের দিকে সে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার মতাদর্শ সমর্থন করে লেখালেখি শুরু করে এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, সংবিধান, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমূহের ব্যাপারে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে রাষ্ট্র বিরোধী ও উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রচার করা শুরু করে। এ সকল বিষয় প্রচার করার জন্য সে প্রথমে “আযযাম আল

গালিব” নামে ফেসবুকে আইডি খুলে এবং এই নামেই টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলে ফেসবুক ও টেলিগ্রামে আনসার আল ইসলাম ও আল কায়েদার সমর্থনে লেখালেখি শুরু করে। এর পাশাপাশি সে ফেসবুকে Muwahhid Muslim নামে একটি পেইজ পরিচালনা করে সংগঠনের সদস্য সংগ্রহের জন্য দাওয়াত দিতো। বিভিন্ন সময় উগ্রবাদী মতবাদ ছড়ানোর জন্য ফেসবুক কর্তৃক তার একাধিক আইডি ডিজেবল হয়। সর্বশেষ সে আব্দুল্লাহ গালিব আযযাম নামে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতো। এছাড়াও কারাগারে আটক আনসার আল ইসলাম সদস্যদের জামিনের জন্য সে গোপনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এবং কারাগারে আটক আনসার আল ইসলাম সদস্যদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সংগৃহীত অর্থ তাদের কাছে পৌঁছে দিতো।সিটিটিসি তথা পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করার কারণে বাংলাদেশে আনসার আল ইসলামের অফলাইন কেন্দ্রিক তৎপরতা একেবারে নেই। যতটুকু আছে তা অনলাইন কেন্দ্রিক। আনসার আল ইসলামের অনলাইন দাওয়াহ শাখার প্রধান হাসিবুর রহমানকে গ্রেফতারের কারণে অনলাইন র‌্যাডিকালাইজ অনেকাংশে দূরীভূত হবে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান।গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় একটি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Advertisement