কর্পোরেটদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকারে ‘বড়সড় ত্রুটি’

অনেক কোম্পানি কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ এবং অস্পষ্ট বলে জানিয়েছে নেট জিরো ট্র্যাকার।প্রতিবেদনে কার্বন নিঃসরণের বিষয়ে কর্পোরেটদের নেয়া ব্যবস্থা সম্পর্কেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে৷ কারণ এটি একাধিক কোম্পানির জলবায়ু লক্ষ্যপূরণের মূল কৌশল৷সোমবার নেট জিরো ট্র্যাকারের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷ সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় কর্পোরেটগুলি কার্বন নিঃসরণ বিপুল পরিমাণে কমাবে বলে যে পরিকল্পনা করেছিল, তাতে ‘বড়সড় ত্রুটি’ রয়েছে৷ তাতে ‘বিশ্বাসযোগ্যতার মারাত্মক অভাব’ও রয়েছে৷নিউক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের জলবায়ুনীতির গবেষক তাকেশি কুরামোচি বলেন, ‘‘আমরা এখন এমন সময়ে রয়েছি যেখানে দ্রুত নেট জিরো অঙ্গীকারের জন্য (বিশেষ করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে) যথেষ্ট চাপ রয়েছে৷ গ্রিন ওয়াশিং বা ডিকার্বনাইজেশনের দিকে একটি মৌলিক পরিবর্তন হতে পারে৷’’

যাই হোক, ফোর্বস ২০০০ এর বৃহত্তম কোম্পানিগুলির অর্ধেকই এখনও নেট জিরোতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেনি৷পৃথিবীতে এখনও কার্বন নিঃসরণ কমেনি৷ ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন হিসাবে ধরলে ২০১৯ সালে ৫৯ গিগাটন কার্বন নিঃসরণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ৫২ দশমিক পাঁচ গিগাটনের তুলনায় এ পরিমাণ বেড়েছে ১২ শতাংশ৷ অর্থাৎ গত এক দশকে কার্বন নিঃসরণ প্রতি বছর এক দশমিক তিন শতাংশ হারে বেড়েছে৷ তবে ভালো খবর হচ্ছে, আগের দশকে এ হার ছিল দুই দশমিক এক শতাংশ৷ ফলে আগের দশকের চেয়ে গত দশকে নিঃসরণ কমেছে৷

কী এই নেট জিরো?

নেট জিরো বলতে কার্বন নিউট্রালিটিকে বোঝানো হয়৷ এর অর্থ এই নয় যে, কোনো দেশ একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনতে পারবে কার্বন নিঃসরণ৷ তবে নেট জিরোর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণের পাশাপাশি গ্রিনহাউজ গ্যাস দূর করারও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়৷রিপোর্ট বলছে, অ্যামাজন, অ্যাপল এবং ফল্কসভাগেনসহ নেট জিরো লক্ষ্যমাত্রা নেয়া ৭০২টি কোম্পানির মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ স্পষ্ট করেনি যে তারা কীভাবে সেই লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা করেছে৷

‘অগ্রহণযোগ্যভাবে কম’ লক্ষ্য

যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইসিআইইউ) এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত, প্রায় ২০০টি দেশের পাশাপাশি বৃহৎ বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলির জন্য সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ ডেটা মূল্যায়ন করে নেট জিরো ট্র্যাকার৷জার্মান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নিউক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের জলবায়ু নীতি বিশ্লেষক ফ্রেডেরিক হ্যানস রিপোর্টের সহ-লেখক বলেছেন, ‘‘বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে৷ এই লক্ষ্যমাত্রাগুলির গুণমান এবং পাকাপোক্তভাবে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা দেখতে পাচ্ছি৷’’প্রতিবেদনটিতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য অনেক কোম্পানির নেয়া ‘অগ্রহণযোগ্যভাবে কম’ লক্ষ্যমাত্রাগুলিও উল্লেখ করা হয়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আগামী আট বছরে এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কার্বন নিঃসরণ অর্ধেক করতে খুব একটা কার্যকর হবে না৷নিজেদের গ্রহকে নিজেদের রক্ষা করার লড়াই৷ তাই কোথাও বিনিয়োগ করতে হলে এই গ্রহই প্রকৃত জায়গা৷ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলার একমাত্র চাবিকাঠি সবুজ অর্থনীতি৷ ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সই হয়েছিল৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা মাথায় রেখে ওই চুক্তিতে স্থির হয়, অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে বাড়তে না পারে, তার দিকে নজর রাখা হবে৷সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Advertisement