মুহম্মদ জাফর ইকবাল ::
নুসরাত নামের একটি কিশোরী মেয়ের জন্য পুরো বাংলাদেশের মানুষ এক ধরনের বিষণ্ণতায় ডুবে আছে। প্রথম যখন ঘটনাটি পত্রপত্রিকায় আসতে শুরু করেছে, আমি হেডলাইনগুলো পড়ে থেমে গেছি। ভেতরে কী লেখা আছে, পড়ার মতো সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি। অগ্নিদগ্ধ মেয়েটিকে ঢাকা আনা হয়েছে, তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে- জানার পর থেকে দেশের সব মানুষের সঙ্গে আমিও তার জন্য দোয়া করেছি। তার মৃত্যু সংবাদটি দেশের সব মানুষের সঙ্গে সঙ্গে আমারও বুক ভেঙে দিয়েছে। আমার শুধু মনে হয়েছিল, এ রকম দুঃসাহসী একটা মেয়ে দেশের একটা সম্পদ। এই দেশের জন্য তার বেঁচে থাকা প্রয়োজন। ছেলেমেয়েদের জন্য গল্প-উপন্যাস লেখার সময় আমরা বানিয়ে বানিয়ে নুসরাতের মতো কাল্পনিক চরিত্র তৈরি করার চেষ্টা করি; কিন্তু সত্যিকার জীবনেও যে এ রকম চরিত্র থাকতে পারে, সেটা কে জানত!
নুসরাতের ঘটনাটি শুরু হয়েছিল তার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং তার সরাসরি শিক্ষকের যৌন নিপীড়নের ঘটনা দিয়ে। আমি কত সহজে ‘যৌন নিপীড়ন’ কথাটি লিখে ফেললাম! কিন্তু সবাই কি জানে এই কথাটি কী ভয়ঙ্কর একটি কথা? আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদের জন্য লেখালেখি করি বলে তাদের সঙ্গে আমার এক ধরনের সম্পর্ক আছে। যে কথাটি তারা তাদের বাবা-মা, ভাইবোন এমনকি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও বলতে পারে না, অনেক সময় তারা সেটি আমাকে লিখে জানায়। না, তারা আমার কাছ থেকে কোনো প্রতিকার চায় না, বেশিরভাগ সময়েই বুকের ভেতর ভার হয়ে চেপে থাকা একটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথাটুকু আমাকে বলে হালকা হতে চায়। চিঠি লেখার সময় চোখ থেকে টপটপ করে চোখের পানি পড়ে চিঠির অনেক লেখা অস্পষ্ট হয়ে যায়। কিশোরী কিংবা বালিকা একটি মেয়ে পুরোপুরি হতবুদ্ধি হয়ে যায়, কী করবে বুঝতে পারে না। কারও কাছে যেতে পারে না, নিজের ভেতর চেপে রাখে; কিন্তু তার জীবনটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আমাদের দেশে এ রকম কত ঘটনা আছে, তার কোনো হিসাব নেই। আমরা সেগুলোর কথা জানতে পারিনি। নুসরাতের ঘটনাটার কথা আমরা জানতে পেরেছি। কারণ এই দুঃসাহসী একরোখা জেদি মেয়েটি তার যৌন নিপীড়নের একটা শাস্তি চেয়েছিল।
প্রত্যেকবার ‘যৌন নিপীড়ন’ কথাটি লেখার সময় আমার হাত কেঁপে ওঠে; কিন্তু পুরো কথাটি আরও অনেক ভয়ঙ্কর- সেটা হচ্ছে, ‘শিক্ষকের যৌন নিপীড়ন’। আমরা সবাই জানি, পৃথিবীতে নানা ধরনের অন্যায়-অবিচার হয়। পৃথিবীতে নানা ধরনের অপরাধী আছে, তারা এমন এমন অপরাধ করে যে আমরা সেগুলোর কথা শুনে শিউরে উঠি। তারপরও কিছু কিছু অপরাধ আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। যেমন নারায়ণগঞ্জে র্যাবের হাতে সাতটি হত্যাকাণ্ডের কথা। রাষ্ট্র যাদের শরীরে ইউনিফর্ম এবং হাতে অস্ত্র দিয়ে দেশের অন্যায়-অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছে, তারা যখন সেই ইউনিফর্ম এবং অস্ত্র হাতে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে টাকার জন্য হত্যা করে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। ঠিক সে রকম আমরা যখন জানতে পারি, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াবা চালান করার সময় ধরা পড়েছে, আমরা সেটাও মানতে পারি না। আমাদের দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য এই মাদক চোরাচালানকারীদের চোখ বন্ধ করে ক্রসফায়ারে মারা হচ্ছে। সবাই সেই হত্যাকাণ্ডে এমনই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, এই দেশের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সেটা নিয়ে কোনো কথা বলে না। যে পুলিশ বাহিনী মাদক চোরাচালানের জন্য অন্যদের ক্রসফায়ারে মেরে ফেলছে, তারা নিজেরা যদি মাদক চোরাচালান করে, সেটা আমরা কীভাবে মেনে নেব? এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, র্যাব বাহিনী কিংবা পুলিশ বাহিনীর কোনো দায়দায়িত্ব নেই, দায়দায়িত্ব অপরাধী সদস্যদের বলা হলেও কেউ সেটা মেনে নেবে না। পুরো প্রতিষ্ঠানকে মাথা নিচু করে এই বিশাল অপরাধের নৈতিক দায়িত্ব নিতে হবে।
ঠিক সে রকম একটি ব্যাপার হচ্ছে শিক্ষকদের হাতে তাদের ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা। এর চেয়ে বড় অমানবিক ব্যাপার আর কী হতে পারে? পৃথিবীটা টিকেই আছে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কারণে। মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে রকম প্রায় অলৌকিক এক ধরনের সম্পর্ক থাকে, শিক্ষকের সঙ্গে তার ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কটা অনেকটা সে রকম। একজন শিক্ষক শুধু যে তার ছাত্রছাত্রীদের বীজগণিতের কয়টা নিয়ম শিখিয়ে দেন কিংবা বিজ্ঞানের কয়েকটা সূত্র শিখিয়ে দেন, তা তো নয়। শিক্ষক তার ছাত্রছাত্রীদের মানুষ হতে শেখান। সেই শৈশবে আমার যে শিক্ষকটি আমাদের স্নেহ করে লেখাপড়া শিখিয়েছেন, আমার এখনও তার সব কথা মনে আছে। একজন শিক্ষক তার ছাত্র এবং ছাত্রীদের সঙ্গে ক্লাসরুমে সময় কাটানোর সময় পান। সে কারণে তার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের এক ধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাত্রছাত্রীদের দিক থেকে সেটি সম্মানের সম্পর্ক, সেই সম্মানের সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে শিক্ষক যখন একজন ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন করেন, তার চেয়ে জঘন্য অপরাধ কী হতে পারে? এই দেশের কত অসংখ্য ছাত্রীকে না জানি এই ভয়ঙ্কর অবমাননার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, আমরা তার খোঁজ রাখি না। নুসরাত নামের একজন দুঃসাহসী কিশোরী অন্তত একটি ঘটনার কথা আমাদের জানিয়ে
দিয়ে গেছে। সেই অপরাধে তাকে যদি পুড়িয়ে মারা না হতো, আমরা কি এই ঘটনাটি নিয়ে এত হৈচৈ করতাম?
২.
নুসরাতের ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে আসার পরপরই হঠাৎ করে শিক্ষকদের নিয়ে বেশ কয়েকটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার সঙ্গে ধর্ষণের খবর আছে, মুক্তিপণের জন্য কিডন্যাপের খবর আছে, খুন করে মসজিদে মৃতদেহ লুকিয়ে রাখার খবর আছে। শিক্ষকদের নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর করা অপরাধের খবর পড়ে আমরা সবসময়ই অনেক বিচলিত হই; কিন্তু যখন মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে এই ভয়াবহ খবরগুলো দেখি, তখন কোথায় যেন হিসাব মেলাতে পারি না। যারা ধর্মের বিধিনিষেধ শুধু যে জানেন তা নয়, ছাত্রছাত্রীদের সেগুলো শেখান, তারা কীভাবে সেই ধর্মের সবচেয়ে বড় অবমাননা করে ফেলেন? তাহলে কি আসলে তারা ধর্মকে বিশ্বাস করেন না, তার নিয়মনীতিকেও বিশ্বাস করেন না?
এ ব্যাপারে আমার একটি ব্যাখ্যা আছে, আমি সেটা বেশ কয়েক বছর আগে একবার একটি ঈদের জামাতে লক্ষ্য করেছি। নামাজ শেষে দোয়া করার সময় ইমাম সাহেব খোদার কাছে প্রার্থনা করলেন, খোদা যেন উপস্থিত সবার সব গুনাহ মাফ করে দেন। একজন মানুষ অনেক বড় একটি অপরাধ করার পর তার যদি সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়, তার নিশ্চয়ই বিবেকের যন্ত্রণা থাকে না। শুধু তাই নয়, পরকালে নরক যন্ত্রণা নিয়েও তার কোনো ভয় থাকে না। তবে আমি শুধু গুনাহ মাফ করে দেওয়ার প্রার্থনার কথা লিখতে বসিনি। এরপর তিনি খোদার কাছে যে প্রার্থনা করলেন, সেই কথাটি শুনে আমি রীতিমতো চমকে উঠলাম। তিনি খোদার কাছে প্রার্থনা করলেন, খোদা যেন সেখানে উপস্থিত সবার গুনাহকে সওয়াবে পরিবর্তন করে দেন। আমি নিশ্চিত সেখানে উপস্থিত যারা ছিল, তাদের ভেতরে যে যত বড় অপরাধী তার মুখে তত বড় আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছিল! শুধু যে তাদের অপরাধের কোনো দায়দায়িত্ব নেই তা নয়, যে যত বড় অপরাধ করেছে, সে পরকালে তত বড় সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। কী আনন্দ!
আমি নিশ্চিত, এগুলো ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা নয়। যারা সত্যিকারের ধর্ম পালন করেন, ধর্মকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেন, তারা এই বিষয়গুলো ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত, কোনো একটি ধর্মীয় প্রক্রিয়ায় সব অপরাধ মুছে দেবে- ঠিক করে রেখে অনেক বড় বড় অপরাধ করে ফেলেছে, এ রকম মানুষের সংখ্যা কম নয়। আমরা সবাই আমাদের চারপাশে সেই মানুষজনকে দেখেছি। সামনে রোজা আসছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি, রোজা শুরু হওয়ার আগের রাতে তাড়াহুড়ো করে অনেকে ঘুষের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ রোজার সময় তারা ঘুষ পেতে চায় না। খবরের কাগজে দেখেছি, ডাকাতি করে, ধর্ষণ করে সেহেরি খেয়ে নিচ্ছে পরের দিন রোজা রাখার জন্য। অর্থাৎ প্রবলভাবে ধার্মিক এবং একই সঙ্গে প্রবলভাবে অপরাধী, এই দেশে খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তাই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার নামের ফেনীর একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল অবলীলায় নুসরাতের ওপর যৌন নিপীড়ন করতে দ্বিধা করেনি এবং যখন কোনোভাবেই নুসরাত তার মামলা তুলে নিতে রাজি হয়নি, তখন তাকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি। এত বড় একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা কেমন করে ঘটানো সম্ভব, সেটা নিয়ে আমরা সবাই হতবাক হয়েছিলাম। পত্রপত্রিকায় দেখছি, এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে এবং তাদের মাঝে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাও আছেন। পুলিশ অফিসার ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নানা ধরনের অবহেলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং পক্ষপাতিত্বের খবর আসছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী একেবারে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলে এই হত্যাকাণ্ডটিও কি তনু হত্যাকাণ্ড বা সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের মতো হয়ে যেত না?
৩.
পত্রপত্রিকায় দেখছি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল তৈরি করা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা চলছে। নিউইয়র্কের বেশিরভাগ স্কুলের গেটে মেটাল ডিটেক্টর বসানো থাকে, যেন ছাত্রছাত্রীরা রিভলবার-পিস্তল নিয়ে ঢুকতে না পারে। একটা স্কুলের জন্য এটি অনেক বড় একটা গ্লানি, অনেক বড় কালিমা। ঠিক সে রকম আমাদের স্কুল-কলেজে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল তৈরি করার বিষয়টিও সবার জন্য এক ধরনের গ্লানির বিষয়। যার অর্থ, আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা যৌন নিপীড়ন করেন। কিন্তু তারপরও আমাদের এই গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে আপত্তি নেই; যদি আমরা এই আইনি সহায়তা দিয়ে স্কুল-কলেজের হিংস্র লোলুপ মানুষগুলো থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের একটুখানি রক্ষা করতে পারি।
কিন্তু আমরা কি সত্যি রক্ষা করতে পারব? আমি অন্তত একটি ঘটনার কথা জানি, যেখানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল দিয়েও আমাদের ছেলেমেয়েদের রক্ষা করা যায়নি। এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। ২০১৩ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা একজন শিক্ষকের যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য তার বিচার দাবি করে বিভাগে তালা মেরে দিয়েছিল। এ রকম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলররা যা করেন, তাই করা হলো। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। ছাত্রছাত্রীরা তাদের আন্দোলন থামিয়ে ক্লাসরুমে ফিরে গেল। হাইকোর্টের নির্দেশে আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এই কেন্দ্র রয়েছে; কিন্তু সব জায়গায় সেগুলো সমানভাবে কাজ করে, তা নয়। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি যথেষ্ট কার্যকর ছিল। যাই হোক, এই যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র যথেষ্ট পরিশ্রম করে তাদের সব সদস্য নিয়ে (তাদের কেউ কেউ ঢাকা থেকে আসতেন) দীর্ঘদিন তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত একটি রিপোর্ট জমা দিল। সেই রিপোর্ট সিন্ডিকেটে খোলার কথা এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্ত মানুষটির বিচার করে শাস্তি দেওয়ার কথা। সেই রিপোর্টটি কখনও খোলা হয়নি, কখনও সিন্ডিকেটে ওঠানো হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক খুবই দ্রুত চেষ্টা-চরিত্র করে উচ্চ শিক্ষার্থে অস্ট্রেলিয়া চলে গেলেন। ভাইস চ্যান্সেলরকে অনেকবার এই তদন্ত এবং বিচার কাজটি শেষ করার কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সেই ভাইস চ্যান্সেলর তার সময় শেষ করে চলে গিয়েছেন এবং নতুন ভাইস চ্যান্সেলর আসার পর আরও দুই বছর কেটে গেছে; কিন্তু এখনও কেউ জানে না সেই রিপোর্টে কী আছে!
আমাদের দেশে ভাইস চ্যান্সেলরদের অনেক ক্ষমতা। তার সঙ্গে মধুর সম্পর্ক থাকলে যৌন হয়রানি কিংবা যৌন নির্যাতন করেও মাথা উঁচু করে থাকা যায়, উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশে যাওয়া যায়। সে জন্য আমি নিশ্চিত নই, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল থাকলেই অভিযুক্ত কিংবা অপরাধীর বিচার হবে। কিংবা হিংস্র লোলুপ মানুষগুলো সেই সেলের ভয়ে নিজেদের সংবরণ করে রাখবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত এই দেশে অপরাধীর বিচার হয় না। তিনি কত জায়গায় হস্তক্ষেপ করবেন!
৪.
নুসরাত নামের এই কম বয়সী মেয়েটি অনেক কষ্ট পেয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তার সঙ্গে আর কোনো দিন দেখা হবে না। দেখা হলে নিশ্চয়ই তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতাম, ‘জানো নুসরাত! পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর খারাপ মানুষ আছে। তাদের দেখে দেখে মাঝে মাঝে পৃথিবীর মানুষের মনুষ্যত্বের ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে যেতে চায়। কিন্তু যখন তোমার মতো একজন সাহসী একরোখা জেদি মেয়ে দেখি তখন মনে হয়, না, পৃথিবীর মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।’
এই পৃথিবী নিশ্চয়ই আরও নতুন নুসরাতের জন্ম দেবে।