সিলেট অফিস :: সিলেট বিভাগের কোটি মানুষের জন্য একমাত্র বিমানবন্দর হচ্ছে ‘ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’। এ বিভাগের প্রায় অর্ধ কোটি প্রবাসীর দেশে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই বিমানবন্দরটি শতভাগ আন্তর্জাতিক মানের নয়। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দু-একটি দেশে আর অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটেই সীমাবদ্ধ এ বিমানবন্দরের কার্যক্রম। প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরও বোয়িং ৭৭৭ উড়ার মতো সক্ষমতা না থাকায় এ বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যে নিয়মিত সরাসরি ফ্লাইট চালু করা যাচ্ছে না।
এরকম অবস্থায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পরিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে নেওয়া হয় প্রায় ৩৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প। বিমানবন্দরটির সক্ষমতা বৃদ্ধির এই প্রকল্পের মেয়াদ এক দফা পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি খুব বেশি হয়নি বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৪৫২ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়। পরে ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটি প্রকল্প সংশোধন করে ৩৮৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করে।
‘সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাল্লা গ্রুপ। এই প্রকল্পের আওতায় ওসমানী বিমানবন্দরের চেহারা বদলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী এবং প্রায় ১৬২ টন কার্গো পরিবহন করা হয়। সময়ের সাথে সাথে ব্যস্ততা বাড়তে থাকে এ বিমানবন্দরের। ২০১৭ সালে এ বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ ২০ হাজার যাত্রী এবং প্রায় সাড়ে সাত হাজার টন কার্গো পরিবহন করা হয়। ক্রমেই গুরুত্ব বাড়ায় এ বিমানবন্দরের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয় সরকার। এছাড়া এ বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সিলেটের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি রয়েছে। এমন প্রেক্ষিতেই নেওয়া হয় চারশত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প।
জানা গেছে, বৃহৎ এই প্রকল্পের আওতায় ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারিত হবে, শক্তি বাড়বে টেক্সিওয়ের। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ওসমানী বিমানবন্দরে বোয়িং ৭৭৭ অবতরণ ও উড্ডয়নে কোনো সমস্যা থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তখন সিলেট থেকে যুক্তরাজ্য বা ইউরোপের অন্য কোন দেশে নিয়মিত সরাসরি ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনাও বাড়বে। তাছাড়া কাজ শেষ হলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতোই সক্ষমতা লাভ করবে ওসমানীর রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজের অগ্রগতি ছিল একেবারেই কম। পরে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করে।
সামগ্রিক বিষয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ সিলেটভিউকে বলেন, ‘ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে বর্তমানে ৩৮৭ কোটি টাকার কাজ চলমান। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ওসমানী বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়বে।’