ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলসহ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ‘প্রভাবশালীদের’ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক। এরই মধ্যে তাদের ব্যাংক লেনদেন স্থগিত করা হচ্ছে।
অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রথম ধাপের তালিকায় আছেন ৫০ জন এবং দ্বিতীয়টিতে ২১ প্রভাবশালীর নাম আছে। তারা যাতে সম্পদ স্থানান্তর-হস্তান্তর, পাচার বা বিক্রি করতে না পারেন সেজন্য দুদক এ উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্পদ ক্রোকের জন্য কমিশনের অনুমতি নিয়ে আদালতে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের মধ্যে আছে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ। তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি।
এছাড়া অন্যান্য সংস্থাও অনুসন্ধান-তদন্তে একযোগে কাজ করছে। দুদকের এক মহাপরিচালকের তত্ত্বাবধানে ও এক পরিচালকের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের টিম এদের অবৈধ সম্পদ ও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে।
ওই কর্মকর্তাদের হাতে অনুসন্ধানের অন্য যেসব কাজ ছিল সেগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলেন, তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামনে এগোচ্ছেন।
দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, অন্তত ১শ’ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রক্রিয়াধীন। কাজ শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
এ তালিকা আরও দীর্ঘ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দুদক এখন আর নখ-দন্তহীন বাঘ নয়। দুদক এখন একটি শক্তিশালী স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাবর- অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে জি কে শামীম ও তার স্ত্রী, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গেণ্ডারিয়ার এনামুল হক এনু, রুপন চৌধুরী, পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (কারা) বজলুর রশিদের অবৈধ সম্পদ ক্রোকের অনুমতি চেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন।
কমিশনের অনুমোদনসাপেক্ষে আজকালের মধ্যে আদালতে আবেদন করা হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে জি কে শামীম ও খালেদসহ ৬ জনের কাছে ৩৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে জি কে শামীম ও তার স্ত্রীর নামে ২৯৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুদক।
এছাড়া খালেদের ৫ কোটি টাকার ও এনামুল হক এনু এবং তার ভাই রুপন ভূঁইয়ার ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ আছে। একইভাবে পুলিশের ডিআইজি (কারা) বজলুর রশিদের ৩ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা।
এদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তাদের কাছেও বিপুল অঙ্কের টাকার অবৈধ সম্পদ আছে- এমন তথ্য পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলওয়ার বখত শনিবার বলেন, মামলা হওয়ার পর এমনকি অনুসন্ধানকালেও প্রয়োজনে তদন্ত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সম্পদ ক্রোকের আবেদন করতে পারেন।
দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত অনুসন্ধান টিম এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজের একটি তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে।
দুদকের আরেক পরিচালক কাজী শফিকুল আলমকেও এ অনুসন্ধান কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দুদক কর্মকর্তারা অফিস সময়ের বাইরেও অনুসন্ধান কাজে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউউ), এনবিআরের গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ, সিআইডি ও অন্যান্য সংস্থা থেকে দুর্নীতির তথ্য ও নামের তালিকা সংগ্রহ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
সবাই একযোগে কাজ করায় অভিযুক্তদের তালিকায় প্রতিদিনই নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে।
সূত্র জানায় প্রথম ধাপের তালিকায় আছেন- যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন, ইসমাইল, জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, আনিসুর রহমান আনিস, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু, তার ভাই রুপন, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কৃষক লীগের শফিকুল আলম ফিরোজ, কারা পুলিশের ডিআইজি বজলুর রশিদ, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, মোমিনুল হক সাঈদ, তারেকুজ্জামান রাজিবসহ অন্তত ৫০ জন।
দুদকের অনুসন্ধানে থাকা সম্পদ ক্রোকের দ্বিতীয় তালিকায় আছেন- এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী সায়মা আফরোজ, চট্টগ্রামের এমপি শামসুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও নরসিংদীর এক এমপি, যুবলীগের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার ও তার স্ত্রী পারভীন লুনা, অর্থবিষয়ক সম্পাদক কেএম মাসুদুর রহমান ও তার স্ত্রী লুতফুর নাহার লুনা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি সোহবার হোসেন স্বপন, সরোয়ার হোসেন মনা, মুরসালিক আহমেদ ও তার স্ত্রী কাওসারী আজাদসহ ২১ জন।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকেই মূলত শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে সরকার। এদিন থেকেই ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরু। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
ক্ষমতার অপব্যবহার, অপকর্মের মাধ্যমে যারা রাজনীতির নামে শত শত কোটি টাকা বানিয়েছেন, দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযানকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে প্রথমে দৃশ্যমান অভিযান শুরু হলেও বিভিন্ন সংস্থার তদন্তে ‘প্রভাবশালীদের’ বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। দেশে মানি লন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্যও আসছে তাদের বিরুদ্ধে।
প্রভাবশালীরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেজন্য তাদের বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। দুদক এরই মধ্যে তিন এমপিসহ ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
দুদক ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর প্রভাবশালী অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।