ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমালোচনা করে একটি নিবন্ধ লেখায় এক ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক ও সাংবাদিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, ভারতে বিদেশি নাগরিকত্ব (ওসিআই) বাতিলের অর্থ হচ্ছে এখন দেশটিতে তিনি কালোতালিকাভুক্ত হয়ে গেছেন। সম্ভবত আর ফিরতে পারবেন না দেশটিতে।
যুক্তরাজ্যে জন্ম নিলেও আতিশ তাসির নামের এই সাংবাদিক বড় হয়েছেন ভারতে। ২৫ বছর বয়স থেকে এক যুগেরও বছরেরও বেশি সময় তিনি ভারতে বসবাস করেছেন।
বৃহস্পতিবার তার ভারতের বিদেশি নাগরিকত্ব মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে।
হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে বেশ কিছু বই লিখেছেন তিনি। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে তিনি সর্বোচ্চ সন্দেহজনক ও পরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেন, তারা আমার কাছে একটি উদাহরণ তৈরি করেছেন এবং অন্য সাংবাদিকদেরও সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে মে মাসে মার্কিন টাইম সাময়িকীতে একটি কাভার স্টোরি লেখার পর তাকে এই কঠিন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘ভারতকে বিভাজনে নেতৃত্বদানকারী’। এতে ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেন তিনি।
আতিশ তাসির বলেন, ভারতের মধ্যে গণমাধ্যমের পরিস্থিতি নিয়ে সরকার বেশ সজাগ। প্রতিটি সমালোচনাকারীর লাগাম টেনে ধরা কিংবা নীরব করে দেয়া হচ্ছে।
‘এখন আমার ঘটনা বলে দিচ্ছে, বিদেশি পত্রিকা কিংবা প্রকাশনীতে লেখার কারণে যারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন, তারাও শেষ পর্যন্ত অনিশ্চয়তায়,’ বললেনও এই ব্রিটিশ লেখক।
তিনি বলেন, ভারতীয় জীবনে আমার কাজ এতটাই জড়িয়ে গেছে যে একজন লেখকের জন্য তা কষ্টদায়ক। এখানে যেসব উপদান আছে, সেগুলোর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারবো না।
এছাড়াও কিছু ব্যক্তিগত সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সত্তরোর্ধ্ব মা সেখানে বসবাস করেন। আমার দাদি, যিনি আমাকে বড় করেছেন, তিনিও ভারতে থাকেন। আগামী বছরে তিনি ৯০ বছরে পা দেবেন।
ঘটনাটি আদালতে তুললেও দাদিকে ফের দেখতে পারবেন বলেও তো নিশ্চিয়তা নেই বলে জানান এই লেখক।
নাগরিকত্ব বাতিলে দেশটির সরকার যে যুক্তি দেখিয়েছে, তা হচ্ছে- তার বাবা যে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত, তা গোপন রেখেছিলেন তাসির। আর এ কারণেই ওসিআই মর্যাদার ক্ষেত্রে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন।
কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে তাসির বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো গোপন রাখা হয়নি। বরং এ বিষয়টি দিয়ে তাকে সহজ নিশানা বানানো হয়েছে।
আতিশ তাসিরের বাবা সালমান তাসির ব্রিটিশ আমলে পাকিস্তানে জন্ম নিয়েছেন। ২০১১ সালে ধর্মাবমাননা আইনের বিরোধিতা করে গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার আগে পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর ছিলেন তিনি।
তবে তাসিরের বেড়ে ওঠার সঙ্গে তার বাবার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তা মাও একজন বিখ্যাত সাংবাদিক ও তার একমাত্র আইনি অভিভাবক।
কিন্তু ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার সব নথিতেই তার বাবা সালমান তাসিরের নাম ছিল। তিনি বলেন, টাইমে লেখাটি প্রকাশের আগে আমার নাগরিত্ব নিয়ে কখনো প্রশ্ন ওঠেনি। বিভিন্ন সময় দিনের আলোর মতোই আমার বাবার পাকিস্তানি জাতীয়তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
২১ বছর বয়সে বাবার খোঁজ পাওয়া নিয়ে আমি একটি বই লিখেছিলাম। ২০১১ সালে বাবা গুপ্তহত্যার শিকার হন। যেটা বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। সবাই জানেন, তিনি আমার বাবা।
এর আগে সরকারও কখনো এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। টাইমে লেখা প্রকাশের ৯০ দিনের মাথায় এটি ইস্যু হয়ে হঠাৎ সামনে চলে এসেছে।
মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির মুখপাত্র সামবিত পাত্রার নেতৃত্বে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে। টাইমে লেখা প্রকাশের পর মোদি নিজেই ইস্যুটি লুফে নেন।
পারিবারিকভাবে পাকিস্তানি রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণে ভারতবিরোধী এজেন্ডা প্রচার করছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
২০১৪ সালে হিন্দুত্ববাদী মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের গণমাধ্যম স্বাধীনতার সূচক ১৪০ থেকে ১৮০তে নেমে আসে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স ওই সূচক তৈরি করে।
গত বছর নিজেদের পেশাগত দায়িত্বপালনের কারণে অন্তত ছয় সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। চলতি বছরের নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিকদের ওপর হামলা বেড়ে গিয়েছিল।
দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) জানিয়েছে, আতিশ তাসিরের নাগরিত্ব বাতিলের এই ঘটনা বলে দিচ্ছে মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সমালোচনার ক্ষেত্রে অসহিষ্ণু।