কারি শিল্প রক্ষায় ইমিগ্রেশন পলিসি পরিবর্তনের দাবীতে ১০ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিসিএ’র বিক্ষোভ

ব্রিটবাংলা রিপোর্ট : বিলেতে বাংলাদেশী মালিকানাধীন বা সাউথ এশিয়ান কারি শিল্প নানামুখি সমস্যা আর সংকটে নিমজ্জিত। এর মধ্যে অন্যতম সংকট হল স্টাফ সংকট। এই সংকট আরো তীব্র হয়েছে টোরি সরকারের কঠোর ইমিগ্রেশন পলিসির কারণে। বৃটেনের বৃহত্তম কারি শিল্পকে রক্ষায় বিদ্যমান ইমিগ্রেশন পলিসি পুর্ণবিবেচনার দাবী জানিয়েছে দি বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন সংক্ষেপে বিসিএ। এ দাবী বাস্তবায়নে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে আগামি ১০ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছ বিসিএ। তাতে যোগ দিতে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিসিএ নেতৃবৃন্দ।

বুধবার বিসিএ হাউজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রায় এক যুগ আগে সরকার কর্তৃক দক্ষ জনশক্তি বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় বর্তমানে বৃটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রি চরম দুর্যোগময় সময় অতিবাহিত করছে। সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে লিখিত বক্তব্য রাখেন, বিসিএ‘র প্রেস এন্ড পাবলিকেশনস সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু।

বিসিএ প্রেসিডেন্ট কামাল ইয়াকুবের সভাপতিত্বে এবং হেলাল মালিকের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল ওলি খান, চীফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুল, সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল এম এ মুনিম, কাউন্সিলার পারভেজ আহমদ, মুজাহিদ আলী চৌধুরী, অর্গানাইজিং সেক্রেটারী মিঠু চৌধুরী, ফয়জুল হক, টিপু রহমান, কামরুজ্জামান জুয়েল, আলতাফুর রহমান শাহিন, আতিকুর রহমান, রহিমা বেগম, ফজলে রাব্বি ও শামসুল আলম খান।

সংবাদ সম্মেলনে বিসিএ প্রেসিডেন্ট কামাল ইয়াকুব বলেন, কারী শিল্পের জনবল সংকটের প্রেক্ষিতে আমরা যুক্তরাজ্য সরকারকে তাদের ইমিগ্রেশন পলিসি পুণবিবেচনার দাবী জানাচ্ছি। সরকারের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির কারনে বর্তমানে ক্যাটারিং খাতে দক্ষ জনবলের চরম শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষ শেফ তৈরী না হওয়ায় এক সময়ের বিকশিত কারি শিল্প এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকার ও ভূতপূর্ব সরকার কারি শিল্পের জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শেফ তৈরীর লক্ষ্যে এবং শেফদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। কিন্তু, এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দক্ষ শেফ তৈরীর উদ্যোগ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, কারি শিল্পে চরম জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এদেশে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ টি রেস্টুরেন্ট শুধুমাত্র জনবল সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইউকে বর্ডার এজেন্সি (ইকেবিএ) কর্তৃক রেস্টুরেন্টগুলোতে কঠোর অভিযান এবং অবৈধ শ্রমিকের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জরিমানার বিধান কার্যকর করার কারণে বিরাজমান বৈরী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেস্টুরেন্ট মালিকদেরকে বিনিয়োগ থেকে নিরুৎসাহিত করছে।

এ অবস্থায় বিসিএ এর পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ছয় দফা দাবী তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

১. ব্যতিক্রমী জাতিগত বৈশিষ্ট বিচারের মাধ্যমে রন্ধন শিল্পের স্বাতন্ত্রের বিষয়টি সরকার কর্তৃক অনুমোদন করতে হবে। এক্ষেত্রে খাতওয়ারী শ্রমিক সংকট ও বেতন কাঠামোর বিষয়টিকে পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

২. ইউকে বর্ডার এজেন্সি (ইউকেবিএ)-এর হটকারী কর্মকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

৩. কারি শিল্পে দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে মর্মে এখনই স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে এবং এ শিল্পে জনবল নিয়োগের শর্তাবলী দ্রুত শিথিল করতে হবে।

৪. কারি শিল্পের নৃতাত্বিক গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য এবং এর স্বাতন্ত্রকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।

৫. বৃটেনের নৃতাত্বিক গোষ্টি ভিত্তিক কারি শিল্পের দীর্ঘ মেয়াদী শ্রমিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কমিউনিটির সাথে এক যোগে বিশেষ দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে, যার মাধ্যমে কমিউনিটির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।

৬. বৃটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ শেফের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে বৈধ কাগজপত্রবিহীন কর্মীদেরকে প্রয়োজনে এড-হক ভিত্তিতে বৈধতা প্রদান করতে হবে।

বিসিএ জেনারেল সেক্রেটারী ওলি খান বলেন, ২০০৮ সালের ঐতিহাসিক ট্রাফালগার রেলিতে বৃটেনের অভিবাসী জনগোষ্টিগুলোর প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ এক কাতারে সামিল হয়ে কারি শিল্প খাতের সমস্যা সমাধানে সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের এক যোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে কারি শিল্প এদেশের অর্থনীতিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। এ শিল্প থেকে ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ড ট্যাক্স রেভিনিউ পরিশোধ করা হয়েছে। এখন আমাদের সমস্যাগুলো রাজনীতিবিদদের নজরে আনার সময় হয়েছে। আমাদের অতি জরুরী প্রয়োজনীয়তার দিকে তাদের নজর দিতে হবে। কারি শিল্পকে রক্ষার লক্ষ্যে আমাদের সাথে নিবিড়ভাবে রাজনীতিবিদ ও সরকারের নীতি নির্ধারকদেরকেও কাজ করতে হবে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের গৌরবোজ্জল প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত কারি শিল্পের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি এ খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে, যার মাধ্যমে আমাদের উত্তর প্রজন্মের উদ্যোক্তারা এ শিল্পে খুঁজে নিতে পারে সমৃদ্ধি ও গৌরব।

Advertisement