লন্ডনের বৃহত্তম বারা ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা, সমাজসেবী, রাজনীতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব কাউন্সিলার শেরওয়ান চৌধুরী। ৪ মে, মঙ্গলবার বিকালে ভার্চূয়ালি অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের বার্ষিক সভায় তিনি সর্বসম্মতভাবে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন এবং পরপরই নতুন দায়িত্বে অভিষিক্ত হন। আগামী এক বছর ক্রয়ডন বারা’র মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন গত এক বছর ডেপুটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী শেরওয়ান চৌধুরী। এখন থেকে তিনি ফার্স্ট সিটিজেন হিসেবে ক্রয়ডন বারাতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতিনিধিত্ব করবেন।কাউন্সিলের বার্ষিক সভায় তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দেন সদ্য বিদায়ী মেয়র মেডি হেন্ডসন। পুরো অনুষ্ঠানটি ভার্চূয়েলি অনুষ্ঠিত হলেও কাউন্সিল চেম্বারে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের উপস্থিতিতে শেরওয়ান চৌধুরীর গলায় ৫ কেজি ওজনের গোল্ড মেডেল পরিয়ে নতুন মেয়র হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়। এসময় নবনির্বাচিত মেয়রের স্ত্রী মেয়রেস রহিমা চৌধুরী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বার্ষিক সভায় কাউন্সিলের ৭০ জন কাউন্সিলর ছাড়াও কমিউনিটির কর্তাব্যক্তিরা ওয়েবকাস্টে যোগ দেন।
কাউন্সিল ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচারিত এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র শেরওয়ান চৌধুরীকে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান আগত অতিথিরা।ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সদালাপি এবং কমিউনিটি অন্ত প্রাণ শেরওয়ান চৌধুরী জীবনভর মানুষের কল্যানে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থার জন্য ফান্ড সংগ্রহে তিনি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জিং কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন। মেয়র হিসেবে তিনি তার কর্মবছর ২০২১-২২ এর জন্য তিনটি চ্যারিটি সংস্থাকে বাছাই করেছেন, যেগুলোর জন্য তিনি তহবিল সংগ্রহ করবেন। এই তিনটি দাতব্য সংস্থা হচ্ছে, ‘দ্যা লিলি প্যাড আপিল’ – যার মাধ্যমে ক্রয়ডন ইউনিভার্সিটি হসপিটালে নতুন একটি অত্যাধুনিক চিলড্রেন্স অনকোলোজী ইউনিট স্থাপনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হচ্ছে, ক্রাইসিস ইউকে, যা জাতীয়ভাবে হোমলেস লোকদের জন্য কাজ করছে এবং বিয়ানী বাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হসপিটাল – যারা সিলেটের বিয়ানী বাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ক্যান্সাসের লক্ষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।পেশাগত জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি আবাসন সেক্টরের সাথে জড়িত রয়েছেন।
কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব শেরওয়ান চৌধুরীর দেশের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায়। আটগ্রাম এলাকার চারিগ্রামের মরহুম আব্দুর রকিব চৌধুরীর ছেলে শেরওয়ান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন ১৯৭৬ সালের দিকে। বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে সিলেট সরকারি কলেজে ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার কারণে সেখানে গিয়েও যুক্ত হন রাজনীতির অঙ্গনে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি তিনি মূলধারার রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। ১৯৯০ সালের দিকে যোগ দেন লেবার পার্টিতে। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য শেরওয়ান বেতার বাংলার প্রোগ্রাম প্রডিউসার ও ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
রানারমিডিয়াটুয়েন্টিফোর জানায়, মাত্র চার বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে রাজনীতির অঙ্গনে পাকাপোক্ত করে নিতে সক্ষম হন। ১৯৯৪ সালে সেন্ট্রাল লন্ডনের ক্রয়ডনের বেউলা ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন। স্থানীয়ভাবে একজন সফল কাউন্সিলর হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন শেরওয়ান চৌধুরী। এরপর আর পেছনের দিকে থাকাতে হয়নি তাঁকে।২০০৬ সালে নরবারি ওয়ার্ড থেকে পুণরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১০,২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে নির্বাচিত হন কাউন্সিলর। এভাবেই মোট ৫ বার লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হিসেবে বিজয়ের মালা বরণ করে নেন তিনি।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্রয়ডন কাউন্সিলে মোট ৭০ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। একজন মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে একজন ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর দল অর্থাৎ লেবার পার্টি থেকে তিনি ডেপুটি মেয়রের জন্য সিলেক্ট হন শেরওয়ান চৌধুরী। এরপর কাউন্সিল অধিবেশনে তাঁকে ডেপুটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। একই পদ্ধতিতে এবার তিনি ক্রয়ডন বারার সর্বোচ্চ মেয়র পদে আসীন হলেন। এই বারার মোট ৩ লাখ ৮৪ হাজার ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।ব্যক্তিগত জীবনে শেরওয়ান এক কন্যা ও দুই পুত্রের জনক। তাঁর স্ত্রী রহিমা চৌধুরী ক্রয়ডনের স্থানীয় একটি স্কুলে দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন।