বেআইনি আচরণের অভিযোগে সংবাদপত্র কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি। ১৩০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ব্রিটিশ রাজপরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ সদস্যকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিতে দেখা গেল।ব্রিটিশ বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, মোবাইলে আড়ি পেতে বেআইনিভাবে ভয়েস কলসহ বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এমজিএন গ্রুপের পত্রিকা দ্য ডেইলি মিরর, সানডে মিরর, এবং সানডে পিপুল-এর বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রিন্স হ্যারি। এসব তথ্যের মধ্যে রাজপরিবার সংশ্লিষ্ট বেশকিছু সংবেদনশীল তথ্যও রয়েছে।প্রিন্স হ্যারি ছাড়াও এর আগে শতাধিক তারকা ও বিখ্যাত ব্যক্তি সংবাদ মাধ্যমটির বিরুদ্ধে আড়িপাতার অভিযোগে মামলা করেছেন। তাদের অভিযোগ, এমজিএন গ্রুপের পত্রিকা দ্য ডেইলি মিরর, সানডে মিরর, এবং সানডে পিপুল ১৯৯১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাপকভাবে বেআইনি পথে তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদ উপস্থাপন করেছে।প্রিন্স হ্যারি এই মামলায় মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে প্রেসের ওপর ভয়ঙ্কর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি তার কৈশোর এবং তার সম্পর্কগুলো ধ্বংস করার জন্য ট্যাবলয়েডগুলোকে দোষারোপ করেন।তিনি একজন ট্যাবলয়েড প্রকাশকের বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সাক্ষ্য দিয়েছেন।হ্যারি আরো বলেন, তার প্রয়াত মা প্রিন্সেস ডায়ানার ব্যক্তিগত জীবনে মিডিয়ার বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ করার কথা চিন্তা করলেই শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করেন। তার ৫০-পৃষ্ঠার লিখিত সাক্ষীর বিবৃতিতে হ্যারি বলেছেন, ১৯৯৬ সাল থেকে তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল যখন তিনি স্কুলে পড়তেন।
হ্যরি আরো অভিযোগ করেন, তাকে ‘প্লেবয় রাজপুত্র’, ‘ব্যর্থ’ এবং ‘ড্রপ আউট’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।এই ঘটনারগুলোর দিকে ফিরে তাকালে সম্পূর্ণ জঘন্য আচরন মনে হয় । ট্যাবলয়েডগুলো তার এবং তার স্ত্রী মেগানের ব্যক্তিগত জীবনেও ‘ঘৃণা ও হয়রানি’ উস্কে দিয়েছে।আইনজীবী অ্যান্ড্রু গ্রিন জেরার এক পর্যায়ে প্রিন্স হ্যারিকে প্রশ্ন করেন, সাক্ষী হিসেবে তিনি তার লিখিত বিবৃতিতে ‘কেউ একজন তাদের এই পাগলামি থামানোর কথা বলার আগেই তাদের টাইপিং করা আঙুলে আর কত রক্তের দাগ পড়তে হবে’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন।তিনি বলেন, ‘আপনি কী এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে এমজিএন এর যেসব সাংবাদিক ওইসব প্রতিবেদন লিখেছেন তাদের হাত রক্তাক্ত?’ জবাবে হ্যারি বলেন, ‘অনেক যন্ত্রণা, বিপর্যস্ত অবস্থা এবং কিছু ক্ষেত্রে সম্ভবত অসাবধানতাবশত মৃত্যু ঘটানোর জন্য দায়ী কয়েকজন সম্পাদক ও সাংবাদিক।হ্যারির অভিযোগ, পত্রিকাগুলো বেআইনিভাবে তথ্য সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে ৩৩টির বেশি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।এমজিএন এর আইনজীবী অ্যান্ড্রু গ্রিন এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারিকে জেরা করেন। এমজিএন একটি ঘটনায় বেআইনিভাবে তথ্য সংগ্রহের কথা স্বীকার করেছে এবং ওই ঘটনার জন্য আইনজীবী গ্রিন ব্যক্তিগতভাবে হ্যারির কাছে তার মক্কেলের পক্ষে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে জেরা শুরু করেন।তিনি বলেন, ‘এটা ঘটা একদমই উচিত হয়নি এবং ভবিষ্যতে এমনটা আর কখনো ঘটবে না।’
গ্রিন জেরার সময় তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি এমজিএন নিবন্ধগুলো পড়েছেন কিনা? সেখানে কোনো প্রশ্ন উঠেছে কিনা? গম্ভীর হ্যরি মৃদু কিন্তু দৃঢ়ভাবে বলেন, তাকে নিয়ে হাজার হাজার নয় লক্ষ লক্ষ গল্প লেখা হয়েছে। আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তিনি যে যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন তা সাধারণ প্রেস কভারেজের কারণে হয়েছিল। নির্দিষ্ট এমজিএন-এর গল্পের কারণে নয় এবং সেগুলো ইতিমধ্যেই জনগনের সামনে থাকা বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছিল।মামলার করার তথ্যের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে হ্যারি বারবার বলেন, আগে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা উচিত তারা এগুলো লিখেছিল কিনা? বিষয়গুলো লিখতে গিয়ে তাদের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে করেছিল কিনা?একটি নিবন্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, হ্যারি বলেন ২০০৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার নিবন্ধটি এখনো কষ্টদায়ক। তিনি আরো প্রমাণ দিতে বুধবার ফিরে আসবেন বলে জানান।ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আরোহণের অপেক্ষমাণ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছেন প্রিন্স হ্যারি। কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আইনি বিরোধ এবং স্মৃতিকথা প্রকাশ ও নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টারি সিরিজ ঘিরে গত ছয় মাস প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন তিনি। স্মৃতিকথা ও ডকুমেন্টারি সিরিজে হ্যারি ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর সঙ্গে রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আনেন। সূত্র : রয়টার্স