আ স ম মাসুম : ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্রিটেনে চিকিতসারত অবস্থায় যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সম্মেলন চলাকালীন সময়ে উপস্থিত থাকতে না পেরে ততকালীন ব্রিটেনস্থ বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহানকে পাঠিয়ে ঘোষনা দেন সিলেটে সরাসরি বোয়িং বিমান নামানোর উপযোগী করবেন এবং সিলেটের যাত্রীরা যাতে সরাসরি লন্ডন থেকে সিলেট ও সিলেট থেকে লন্ডন আসতে পারেন সেই ব্যবস্থা তিনি করবেন।
বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষনার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বারবার আন্তরিকভাবে কথা দিয়েছেন বাংলাদেশে ভ্রমনকারী ব্রিটেনের সিলেট কমিউনিটির যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য।
গত ৪৭ বছর ধরে দীর্ঘ দাবির পরও বাংলাদেশ বিমানের সিলেট-লন্ডন ফ্লাইটে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমছে না। মধ্যরাতে সিলেট থেকে ঢাকায় ছোট ছোট বিমানে যাত্রীদের ঢাকায় নিয়ে সেখানে আবার ৪/৫ ঘন্টা বসিয়ে রাখার ফলে ভয়ঙ্কর কষ্ট নিয়ে ব্রিটেনে আসছেন প্রবাসীরা। গত ৩০ জুন এই প্রতিবেদক সিলেট থেকে লন্ডনের ফ্লাইটে যাত্রী হোন। ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সিলেট থেকে ফ্লাইট দেয়ার কথা থাকলেও সেই ফ্লাইট ছোট ২টি বিমানে করে ৬টা ৩০ মিনিট ও ৬টা ৪৫ মিনিটে ছাড়া হয়। যেহেতু সিলেটে এই যাত্রীদের ইমিগ্রেশন হয় তাই যাত্রীদেরকে এয়ারপোর্টে আসতে হয় কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা আগে। যারা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ , বালাগঞ্জ থেকে এসেছেন তাদেরকে তো রওনা দিতে হয় রাত ১১টায়! এরপর দীর্ঘ সময় সিলেট বিমান বন্দরে বসে থাকা। সিলেট থেকে ঢাকা নিয়ে আবার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়।
কথা হয় সিলেট বিশ্বনাথ থেকে আসা ব্রিটেন প্রবাসী যাত্রী মোশাহিদ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল প্যাসেঞ্জার হিসাবে রাত আড়াইটার আগে এয়ারপোর্ট আসতে হবে তাই বাড়ী থেকে বের হয়েছি রাত ১টায়। এখন শুনি ফ্লাইট বিলম্ব। আবার ঢাকা নিয়ে এতো ঘন্টা বসিয়ে রাখবে।
মৌলভীবাজার থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন রুখসানা বেগম। তিনি বলেন, বাচ্চা নিয়ে এই দীর্ঘ যাত্রা অসহ্য মনে হয়। ঘুমের সমস্যার কারনে বাচ্চা কান্নাকাটি করছে।
এই দীর্ঘ সময়ে বিমান থেকে কোন খাবার সরবরাহ করা হয় না। গত বছর এই ধরনের ফ্লাইটে বিমানের যাত্রীদের ঢাকা এয়ারপোর্টে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরে রেষ্টুরেন্টে নাস্তা করানো হতো। কিন্তু বর্তমানে সিলেট থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভোরের দিকে ছোট ফ্লাইটে একপিস কেক আর পানি দেয়া হয়। সারারাত জেগে থেকে এই ইন ফ্লাইট নাস্তা দিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত বসে থাকা সমস্যা। আবার আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে উঠার অন্তত ২ ঘন্টা পর খাবার সরবরাহ করা হয়। ডুবাই এয়ারপোর্ট বা অন্যান্য দেশের এয়ারপোর্টের ভিতর যেভাবে বিশ্বের নামী সব ব্রান্ডের ফুড রেষ্টুরেন্ট থাকে ঢাকা বিমান বন্দরের ইন্টারন্যাশনাল লাউঞ্জে সব লোকাল মেইড ফুড যেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ভয়ে কেউ খান না। তাই অভূক্ত থাকতে হয় দীর্ঘ সময়।
ফ্লাইটে থাকা ব্রিটেন প্রবাসী মনোয়ার আলী বলেন, যেভাবে ব্রিটেন থেকে সরাসরি সাড়ে ৯ ঘন্টায় ফ্লাইট সিলেট অবতরন করে আগে সিলেটের প্যাসেঞ্জার নামিয়ে তারপর ঢাকা যায় ঠিক সেভাবে কেনো ঢাকার সব প্যাসেঞ্জার তুলে তারপর সিলেট থেকে সরাসরি লন্ডন ফ্লাইট দেয়া হয়না। যেহেতু বিমানে লন্ডন – বাংলাদেশ ফ্লাইটের বেশিরভাগ সিলেটের যাত্রী ভ্রমন করে থাকেন তাদের সুবিধা দেখা উচিত।
রবিউল হাসান নামের আরেকজন যাত্রী বলেন, সিলেটের যাত্রীদের প্রাধান্য দিয়ে বিমান অন্তত সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট লন্ডন-সিলেট-লন্ডন চালু করতে পারে। বাকি ফ্লাইটগুলো লন্ডন – সিলেট – ঢাকা, সিলেট-ঢাকা-লন্ডন রাখতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যাত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্তারিক থাকার পরও কার স্বার্থে বিমান এইরকম অবাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্রিটেন প্রবাসী সিলেটের যাত্রীদের হয়রানী ও দুর্ভোগে ফেলে কেনো কে জানে?