ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: দেশে করোনা-ভাইরাসের টিকা বাণিজ্যিকভাবে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা বিনামূল্যের টিকা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে বিক্রি করতে চান। এজন্য ১০ লাখ ডোজ টিকা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা বলছেন, নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির বাইরে থাকায় অনেকে টিকা নিতে পারছেন না। বেসরকারিভাবে নেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বিত্তশালী অনেকে টিকা নিতে বিদেশ যেতে চাইছেন। তাদের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে টিকাদানের অনুমোদন প্রয়োজন।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) নেতারা এরই মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে এ দাবি জানিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে টিকার বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া ঠিক হবে না। এতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হবে।
এ পর্যন্ত সরকার সফলভাবে টিকা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পেরেছে। বিনামূল্যে টিকা পাওয়ায় সাধারণ মানুষও খুশি। এ অবস্থায় বেসরকারিভাবে টিকা দেয়া শুরু হলে টিকা নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
শনিবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই বিষয়ে জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতে টিকা দেয়ার আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত সরকার এখনো নেয়নি। বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তবে টিকা নিয়ে ব্যবসার প্রস্তাব এবং সরকারের সম্মতির সমালোচনা করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশিষ্টজন। তাদের অভিমত, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া জনগণের অধিকার। টিকা নিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াও মিলেছে। এ অবস্থায় টিকা নিয়ে বাণিজ্যিক চিন্তাভাবনা কাম্য নয়। বেসরকারি খাতকে টিকাদান কর্মসূচিতে যুক্ত করা হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে।
এ বিষয়ে বিপিএমসিএ’র সভাপতি এমএ মুবিন খান বলেন, আমরা সরকারের কাছে টিকা চেয়ে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। ১০ লাখ ডোজ টিকা চেয়েছি। এটা প্রাথমিক অবস্থায় আছে। সরকার আমাদেরকে চূড়ান্ত কিছুই জানায়নি। বহু অপশন নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকার বিনামূল্যে টিকা দিলে আমরাও মানুষকে তা বিনামূল্যে দেবো। আর সরকার বিক্রি করলে আমরাও বিক্রি করবো। তবে টিকার দাম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান মুবিন খান।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে টিকাদান কর্মসূচির শুরুর দিকে তেমন সাড়া না মিললেও এখন প্রতিদিনই কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে। সরকার এ ক্ষেত্রে সফলভাবে কাজ করছে। জনস্বার্থে এটি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এর মধ্যে বেসরকারি খাত যুক্ত হলে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাত তো লেপ তোষকের ব্যবসা না। এটা মানবতার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। এই জনস্বাস্থ্যবিদ আরো বলেন, সরকার ভুলেও বেসরকারি খাতে এটা দেবে বলে মনে হয় না। নমুনা পরীক্ষায় বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের খারাপ অভিজ্ঞতা আমাদের মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব বলেন, টিকা নিয়ে বাণিজ্য কাম্য নয়। করোনার নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলো টিকা নিয়েও বাণিজ্য করতে চাচ্ছে। তাদের এই সুযোগ দেয়া উচিত হবে না। কারণ, টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে একটি দেশে দুই ধরনের ব্যবস্থাপনা থাকতে পারে না।
সরকারের কাছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের ৭০ লাখ ডোজ এসেছে। এর মধ্যে ভারত সরকারের উপহারের টিকা ২০ লাখ ডোজ এবং কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ। প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।