বোরহানউদ্দিনের ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি দিল বিএনপি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘর্ষের ঘটনাকে সরকারের পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে এর প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী বুধবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় এবং সারাদেশে জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।

আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশাররফ বলেন, ঘটনার শুরু শুক্রবার। ঘটনার পর পুলিশের ব্যাখ্যায় মনে হয় তারা পুরো বিষয়টি আগে থেকেই জানতো। তাহলে এত সময় পেয়েও সামাল দিতে পারলো না কেন। এর কারণ সরকার ও পুলিশের কাছে জনতার কোনো মূল্য নেই। তিনি সরকারে উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, ‘ভোলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে দিলে সরকারের কি পতন হয়ে যেত? কিসের এত ভয়। কাদের প্রতি ভয়?’

ড. মোশাররফ বলেন, আমরা মনে করি ভোলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। যে কারণে ভোলাকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরী আরা সাফা প্রমুখ।

গত শুক্রবার ভোলার বোরহানউদ্দিনে এক তরুণের ফেসবুক আইডি হ্যাক করা হয়। এরপর সেই আইডির মেসেঞ্জারে ‘ধর্ম অবমাননাকর’ কথাবার্তা চালানো হয়। সেই কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে দেওয়া হলে সেটি ভাইরাল হয়। এরপর ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে ডাক দেওয়া হয় বিক্ষোভ সমাবেশের। ওই তরুণ শুক্রবারেই থানায় গিয়ে তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি জানান। পুলিশ এ নিয়ে ঝামেলা হওয়ার বিষয়টি আঁচ করে তরুণকে নিজেদের হেফাজতে রেখে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই অভিযান চালিয়ে হ্যাকারদের ধরে ফেলে। পাশাপাশি আলেম-উলামাদের নিয়ে প্রশাসন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। আইডি হ্যাক করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্ম অবমাননার প্রচারণার বিষয়টি অবগত হয়ে উলামারা গতকাল রবিবারের কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রশাসনকে আশ্বস্ত করেন।

কিন্তু এর পরও একদল তরুণের লিফলেট ও মাইকে প্রচারণা চালানোর কারণে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ঈদগাহ মাঠে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে চারজন নিহত হন। আহত হন শতাধিক। আটক করা হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে। আহতদের অনেককে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ও ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহতরা হলেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদরাসাপড়ুয়া ছেলে মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দেলওয়ার হোসেনের কলেজপড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫) ও মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)।

ঘটনার পর সেখানে এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব, চার প্লাটুন বিজিবি ও দুই প্লাটুন কোস্ট গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজিকে প্রধান করে গত রাতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

Advertisement