ব্রিটেনে নির্বাচন: আলোচনায় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পাঁচ নারী

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বের হবে কিনা অর্থাৎ ব্রেক্সিট কার্যকর হবে কিনা সেই ইস্যুতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের কাছে পার্টির চেয়ে বড়ো ইস্যু হয়ে উঠছে ব্রেক্সিট। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কমপক্ষে ১০ জন প্রার্থী লড়াইয়ে রয়েছেন।

মধ্যবর্তী এই নির্বাচনে একটি ইস্যু প্রাধান্য পেলেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এবার বাংলাদেশি প্রতিনিধিত্ব বাড়বে, এটা নিশ্চিত। তবে আলোচনা বেশি হচ্ছে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পাঁচ নারীকে নিয়ে, যাদের তিনজন এখন সংসদ সদস্য। নিজ আসন ধরে রাখতে লড়ছেন রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হক। তাদের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগম এবং বাবলিন মল্লিক। এর মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিক জয়ী হলে এবার হ্যাটট্রিক করবেন।

এ ছাড়া কনজারভেটিভ পার্টি থেকে ডা. আনোয়ারা আলী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে রাবিনা খান মনোনয়ন পেয়েছেন। লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে রোশনারা আলী ২০১০ সাল থেকে লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও বো আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এই আসনটিতে সব সময় লেবার পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়ে থাকেন।

রুশনারা আলী: ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশি-বংশোদ্ভূত প্রথম এমপি রুশনারা আলি। ২০১০ সালে তিনি লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সিলেটের বিশ্বনাথের মেয়ে রুশনারা। তিনি পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আরও পাঁচ বছর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে থাকতে লড়ছেন।

২০১৭ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির চার্লট চিরিকোর চেয়ে ৩৫ হাজার ৫৯৩ ভোট বেশি পেয়ে তিনি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার অধীন রুশনারার আসনটি লেবার দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

সাধারণ এক কর্মজীবী বাঙালির মেয়ে রুশনারা পরিবারের প্রথম সদস্য, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ডিগ্রি নিয়েছেন অক্সফোর্ডের সেইন্ট জন’স কলেজ থেকে।

টিউলিপ সিদ্দিক: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড কিলবার্ন থেকে নির্বাচিত লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ২০১৫ সালে লেবার পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হন। পরের দফায় ২০১৭ সালের নির্বাচনে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন।

৩৭ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিককে পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। টিউলিপ প্রথমে ইংরেজি এবং পরে রাজনীতি, নীতি ও সরকার বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন যুক্তরাজ্যের অন্যতম শীর্ষ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলের বারাক ওবামার প্রচারাভিযানে অংশ নেন।

রূপা হক: লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে টানা দুই বারের এমপি রূপা হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে। বাংলাদেশে আদি বাড়ি পাবনায়। ৪৮ বছর বয়সী রূপা অল্প ভোটের ব্যবধানে হলেও ২০১৫ সালের নির্বাচনে রক্ষণশীলদের হাত থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনেও তিনি ব্যবধান বাড়িয়ে আসনটি ধরে রাখেন।

রূপ হক কেমব্রিজে রাজনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন পড়েছেন। তিনি পড়াচ্ছেন সমাজবিজ্ঞান, অপরাধবিজ্ঞান, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের মতো বিষয়। শিক্ষক রূপা এর আগে ডেপুটি মেয়র হিসাবে স্থানীয় সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আফসানা বেগম: টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে লেবার পার্টি থেকে এবার প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফসানা বেগম। আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসে হলেও বাংলাদেশে তাদের আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে কর্মরত আছেন তিনি।

আরো পড়ুন: মিয়ানমার সেনাপ্রধানের অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে ফেসবুক

বাবলিন মল্লিক: ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনের জন্য ড. বাবলিন মল্লিককে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে সে দেশের উদার ধারার রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট (লিবডেম)। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলা থেকে ব্রিটেনে স্থায়ী আবাস গড়া বাবলিন কার্ডিফ সেন্ট্রাল আসনের জন্য প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন। সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

বাবলিন মল্লিক মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামের মোহাম্মদ ফিরোজের মেয়ে। ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে আসেন তিনি। পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ বাবলিন বায়ো কেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন তিনি।

নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি পার্টি) এবং জেরেমি করবিনের লেবার পার্টির মধ্যে। এছাড়া আরো ছোটো দল রয়েছে যারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এদের মধ্যে কেউ ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থি ও কেউ ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত।

টোরি ও লেবার পার্টি রাজনৈতিক সংকটের সমাধান তথা ব্রেক্সিট ইস্যুতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। বিশেষ করে বাজেটে কাটছাঁট ইস্যুও আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। জরিপে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি লেবার পার্টির চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছে।

Advertisement