ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে সিলেট বিএনপির সকল কমিটি

সিলেট অফিস :: ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন সকল সাংগঠনিক কমিটি। আগামী ১০দিনের মধ্যে সিলেটের ১৩ উপজেলা বিএনপি ও ৫টি পৌরসভার নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার সিলেটভিউকে বুধবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত দুই অক্টোবর সিলেট জেলা বিএনপির ২৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রবীণ ও নবীনদের মিশ্রণে গঠিত এ কমিটি এক মাসের মাথায় বেশ ভালো কার্যক্রম দেখিয়েছে বলে মনে করেন দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য শাহিন আহমদ বলেন, দল পুনর্গঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিলেট জেলা বিএনপির যে কমিটি দিয়েছেন এক মাসেই তারা আশাব্যঞ্জক কাজ দেখিয়েছে। তিনি বলেন, পাগলা ঘোড়ার মত নতুন এ কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।

তবে জকিগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ইকবাল আহমদ তাপাদার বলেন, নতুন এ কমিটি তিন মাসের ভিতরে জেলা শাখার সম্মেলন করতে হবে। সবাইকে সম্পৃক্ত করে দলের ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি প্রতিবাদ সভা করেছিল। সেখানে গোয়াইনঘাট উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিমকে দাওয়াত দিলেও তাকে জানানো হয়নি।আগামীদিনের সকল কার্যক্রমে সবাইকে সম্পৃক্ত করে দল গোছাতে কাজ করার আহবান জানান তিনি।

আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামকে জোরদার করতে দেশব্যাপী বিএনপির পুনর্গঠনের কাজ চলছে।এরই লক্ষে সিলেট বিএনপির নতুন কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেট শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করে শুরু হয় তাদের কার্যক্রম। পরবর্তীতে শহীদ সুলেমান হলে নতুন কমিটির পরিচিতি সভা হয়। এরপরেই ১৭ অক্টোবর তারা চলে যান ঢাকায় দলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়ার রহমানের মাজার জিয়ারত করতে। ঐ দিন রাতেই দলের নয়া পল্টনের কার্যালয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে জেলা বিএনপির নেতারা বৈঠক করেন। তারেক রহমানের সাথে এ বৈঠকে জেলা বিএনপির নেতারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য পেয়ে অনেকটা নড়েচড়ে বসেন। সিলেট ফিরেই আহবায়ক কমিটি আগামীদিনে কিভাবে দলকে সংগঠিত করবে এ নিয়ে শুরু করে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা।

সে লক্ষেই গত সোমবার জেলা বিএনপি নগরীর একটি আভিজাত হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। এতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা তাহসীনা রুশদীর লুনা, আলহাজ¦ এম. এ হক ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম ও কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা: শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি।

সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আগামী ১০ দিনের মধ্যে সিলেটের সকল উপজেলা ও পৌরসভার নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হবে। সে সাথে ভেঙ্গে যাবে সিলেটের ১৮টি সাংগঠনিক কমিটি। জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জানান, আগামী দু’চার দিনের মধ্যে সকল উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করা হবে। বৈঠকে তৃণমূলের পরামর্শ নিয়ে ১৮টি সাংগঠনিক কমিটি করা হবে। এসব কমিটি দ্রুত সম্মেলন করে নেতৃত্ব নির্বাচন করবে। তবে জেলা বিএনপির আহবায়ক জানান, প্রতিটি কমিটি ২৫ সদস্য বিশিষ্ট করা হবে। একজনকে আহবায়ক করে ২৪ জনকে সদস্য রাখা হবে। দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী, বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন এমন ব্যক্তিদের দিয়েই এবার কমিটি হবে বলে তিনি জানান।

সিলেটে জেলার ১৮টি সাংগঠনিক কমিটি হল, সিলেট সদর, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও নবগঠিত বিশ্বনাথ পৌরসভা, দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভা, বিয়ানীবাজার ও বিয়ানীবাজার পৌরসভা, জকিগঞ্জ ও জকিগঞ্জ পৌরসভা, কানাইঘাট ও কানাইঘাট পৌরসভা, গোইয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ওসমানীনগর, জৈন্তাপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ।

এদিকে বিভিন্ন উপজেলা কমিটিতে আসতে লবিং শুরু করেছেন উপজেলার নেতারা। জানা গেছে, মঙ্গলবারের বিএনপির সভার পর উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বেশ সরব হয়ে উঠেছেন। জেলা নেতাদের কাছে অনেকে ধরনা দেওয়া শুরু করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিএনপি নেতা জানান, দলের এই বিপদের মুহূর্তেও মৌসুমি নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। যেকোন কমিটি আসার আগেই তারা তৎপর হয়ে উঠে। মৌসুমি নেতারা এবার সুযোগ পেলে তৃনমূল বিএনপিতে আগুন জ্বলবে বলে বিএনপির এ নেতা হুঁশিয়ারি দেন।

Advertisement