॥ ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী ॥
সরকার এবার ডিজিটাল পদ্বতিতে করোনা আক্রান্ত ৫০ লক্ষপরিবারের দেড় কোটি মানুষকে এক হাজার দুই শত সাতান্ন কোটিটাকা দিবে।
গত ১২ই মে বাংলাদেশে সংবাদ শিরোনাম ছিলো উপরের খবরটি। খবরে জানা যায়, গত ১১ই মে করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। আর আগামী ১৪ মে এ টাকা দেয়ার কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। ঈদুল ফিতরের আগে এই বিতরণ সম্পন্ন হবে। ১৪ মে প্রধামন্ত্রী উদ্বোধনের পর ১০ লাখ পরিবারকে এ অর্থ দেয়া হবে। এর পরবর্তী চার দিন ৪০ লাখ পরিবারকে এ অর্থ দেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার অর্থাৎ জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের এই তালিকা ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। তালিকায় রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মপরিবার, শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস–ট্রাকসহ পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানা পেশার মানুষকে রাখা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সহায়তায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে যেসব সহায়তা পাচ্ছে, এ তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
আর টাকা দেওয়া হবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে। এর মধ্যে ১৭ লাখ পরিবারকে দেওয়া হবে ডাকবিভাগের সেবা নগদের মাধ্যমে। ১৫ লাখ পরিবারকে দেবে বিকাশ। ১০ লাখ পরিবারকে দেবে রকেট এবং ৮ লাখ পরিবারকে দেবে শিউরক্যাশ। প্রতি হাজারে টাকা পাঠানোর সেবা মাশুল যা–ই থাকুকনা কেন, এসব এমএফএসকে সরকার দেবে প্রতি হাজারে মাত্র ৬টাকা। অর্থাৎ একটি পরিবারের কাছে আড়াই হাজার টাকা পৌঁছাতে সরকারকে বাড়তি ১৫ টাকা করে খরচ করতে হচ্ছে।
করোনা আক্রান্তদের সহায়তায় সরকারের ত্রান বন্টনে জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি যখন বারবার সংবাদের শিরোনাম হচ্ছিলো তখন এই দুর্নীতি বন্ধে সরকার সরাসরি ডিজিটাল পদ্বতিতে ত্রান বন্টনের সিদ্বান্ত নিলেন। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। স্থানীয় সরকারের বিরুদ্বে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। আগে সরকার থেকে ত্রান সহায়তা হিসাবে দেয়া হতো গম আর এখন দিন বদলেছে গমের পরিবর্তে এসেছে চাউল। চাউল নিয়ে বর্তমানে দুর্নীতি যেমন হয়েছে, গম নিয়ে অতীতে এর চেয়ে আরো ভয়ানক দুর্নীতি হয়েছে, আর এসকল দুর্নীতি নিয়ে সব সময় রাজনীতি হয়েছে কিন্ত কেউই এটি রোধ করার কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। এই দুর্নীতিবাজরা সমাজে দীর্ঘদিন থেকে খুব শক্ত সিন্ডিকেট করে তাদের কাজ চালিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষও ধরে নিয়েছে তাদের কাছ থেকে যা পাই তাই লাভ। অর্থাৎ এই দুর্নীতি যে হবে এটি স্বাভাবিক এবং এদের বিরুদ্বে রুখে দাঁড়ানোর কেউ নাই। অতীতে এইসকল দুর্নীতিবাজদের লালন পালন করা হতো, যার ফলে এদের দৌরাত্ব দিন দিন বেড়েই চলছিল।
ত্রান নিয়ে কেলেঙ্কারির খবর যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে তোলপাড় হচ্ছিলো তখন অনেকের মতো আমিও গত ১৩ই এপ্রিল ফেসবুকে একটি স্টেটাস দিয়েছিলাম – “দুর্নীতি নির্মূলে সরকারি সকল ত্রানসহায়তা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের কাছে প্রদানের অনুরোধ করছি“। আর অনেক বিজ্ঞজন এর পক্ষে এবং বিপক্ষে মন্তব্যও করেছেন। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পারেন এবং বাস্তবতাকে উপলব্দি করতে পারেন। আর এজন্যই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে দুর্নীতি মুক্ত ত্রান সহায়তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষে এই প্রথম ডিজিটাল পদ্বতিতে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করছেন। তাছাড়া দুর্নীতির দায়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৪৯ জন জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সেই সাথে মামলা হয়েছে অগণিত জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তার বিরুদ্বে। আশা করি পর্যায়ক্রমে সকল সরকারি ত্রান সহায়তা সরাসরি জনগণের কাছে প্রদান এখন শুরু হলো। দুর্নীতি নির্মূলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ এক ঐতিহাসিক মাইল ফলক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এজন্যই আপনি সেরাদের সেরা। আপনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
লেখক:
ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী
কন্ট্রিবিউটর, ব্রিট বাংলা২৪ এবং প্রিন্সিপাল সলিসিটার, কেসি সলিসিটর্স, লন্ডন।