মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আবারও নীতি সুদহার বাড়াল ব্যাংক অব ইংল্যান্ড

আবারও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে নীতি সুদ বাড়িয়েছে দেশটির ব্যাংক অব ইংল্যান্ড; শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশ। খবর রয়টার্সের ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মুদ্রানীতি কমিটি ৭-২ ভোটে নীতি সুদহার বৃদ্ধির পক্ষে রায় দেয়। ফলে ২০০৮ সালের পর দেশটির নীতি সুদহার এখন সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতির হার ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অসন্তোষ থাকার কারণে আবারও নীতি সুদহার বৃদ্ধির পথে গেল ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি বলেছে, ‘আমাদের হাতে যেসব তথ্য আছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার আরও কিছুদিন থাকবে’। তবে অর্থনীতিবিদদের ওপর বার্তা সংস্থা রয়টার্স যে জরিপে চালিয়েছিল, সেখানে অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হতে পারে। তবে গত বুধবার মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রত্যাশার চেয়ে বাড়তি থাকায় আর্থিক বাজারের বিশ্লেষকেরা অবশ্য ধারণা করেছিলেন, নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হবে।এদিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নীতি প্রণেতারা অবশ্য তেমন কোনো ইঙ্গিত দেননি যে তাঁরা শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কথা ভাবছেন।ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মুদ্রানীতি কমিটির যে দুজন সদস্য নীতি সুদহার বৃদ্ধির বিরোধিতা করেছেন, তাঁরা হলেন—সিলভানা টেনরেইরো ও সোয়াতি ধিংগ্রা। তাঁদের যুক্তি, এক বছর ধরে মুদ্রা প্রবাহের রাশ যেভাবে টেনে ধরা হয়েছে, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি অনুভূত হয়নি। তাঁরা আরও বলেন, ভবিষ্যৎমুখী বিভিন্ন সূচকে দেখা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হার প্রণিধানযোগ্য হারে কমবে।

তাঁদের কথা ধোপে টেকেনি। মুদ্রানীতি কমিটি শেষমেশ বিপুল ভোটে নীতি সুদহার বৃদ্ধির পক্ষে অবস্থান নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টের কাছে মুদ্রানীতি কমিটির ভাষ্যই উপস্থাপন করেছেন।গভর্নর বলেছেন, মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে মুদ্রানীতি কমিটিকে যা যা করা দরকার, তা তারা করবে।সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয় যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মুদ্রানীতিতে আরও কঠোর অবস্থান নেবে। আর্থিক বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করেছিলেন, নীতি সুদহার ৬ শতাংশে উঠবে, অথচ রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদেরা বললেন, নীতি সুদহার ৫ শতাংশে উঠতে পারে।কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাজ্যের অবস্থা ভালো নয়। সেই ব্রেক্সিট থেকে শুরু, এরপর কোভিড-১৯-এর কারণে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে গত বছর দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠল। ধারণা করা হয়েছিল, ২০২০ সালের পর ২০২২ সালে আবারও সংকুচিত হবে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি, কিন্তু শেষমেশ তারা সংকোচন এড়াতে পেরেছে। ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত তারা ভালোই আছে।তবে অন্যান্য বড় দেশের মতো যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যায়নি। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস, ২০২৩ সালে সামান্য হলেও যুক্তরাজ্যের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ।এদিকে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াও একই পথ অনুসরণ করে। তবে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় হারে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। সেই পথ ধরে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে।বিষয়টি হলো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতির হার গত এক বছরে প্রণিধানযোগ্য হারে কমেছে, সে কারণে তারা এখন আর নীতি সুদহার বাড়াচ্ছে না। কিন্তু গত মে মাসেও যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এই বাস্তবতায় নীতি সুদহার না বাড়িয়ে উপায় ছিল না ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের।

Advertisement