জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ কামালের ৭৪ তম জন্মদিন আজ।১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বিপথগামী একদল সেনাকর্মকর্তার নির্মম বুলেটে মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি প্রাণ হারান।দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একজন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা সুকুমার মনোবৃত্তির মানুষ এ কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি (শেখ কামাল) দেশের ক্রীড়াজগতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ব্যক্তিগত প্রজ্ঞা ও নিজস্ব ক্রীড়া ভাবনায় এদেশে আধুনিক ফুটবলের পথিকৃৎ তিনি। খেলাধুলার সব শাখাতেই ছিল তাঁর মুন্সিয়ানার ছাপ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে তাঁর নির্মম হত্যাকান্ডের পর দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের অগ্রযাত্রা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খেলাধুলা, সংগীত, অভিনয়, বির্তক, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। ‘স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি সংস্কৃতি জগতে অমর হয়ে আছেন। অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী মানুষটি একই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র, নির্লোভ, নিরহংকারী ও সদালাপী। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন অতি সাধারণ হয়ে। তিনি যেকোনো মানুষের প্রয়োজনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, পচাঁত্তরের ১৫ আগস্ট এক ঘোর অমানিশায় স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকের দল জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই কালরাতে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকে খুনিরা প্রথমেই হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালকে। কাপুরুষ হন্তারকদের দল শারীরিকভাবে শেখ কামালকে হত্যা করলেও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অভিযাত্রায় তাঁর প্রদর্শিত পথ, আদর্শ এবং দিক-নির্দেশনা আজও এক অনুকরণীয় মডেল।দিনটি পালন উপলক্ষে রাজনীতিক বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন সকালে ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও বনানী কররস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরে অনুষ্ঠিত হবে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল ।সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৫টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ।
শেখ কামাল ছিলেন ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমনা সুকুমার মনোবৃত্তির একজন মানুষ। বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি এ অনার্স পাস করেন। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না। তিনি ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে সুপরিচিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধূলায় প্রচন্ড উৎসাহ ছিল তাঁর। শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন এবং শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণের সময় তিনি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন।আজ শেখ কামাল এর জন্মদিন পালনে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ) এর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতিকৃতিতে ও সমাধীতে পুস্পস্তবক অর্পণ, স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এ ছাড়াও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৭টি ক্যাটাগরিতে ৯ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও ২টি প্রতিষ্ঠানকে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার প্রদান করবে । বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় বিকেলে দুটি প্রদর্শনী হ্যান্ডবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।