পর পর দুই দিনে অন্তত পাঁচবার ভূ-কম্পনের ঘটনায় সিলেটের জনমনে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। বিশেষ করে বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের উদ্বেগ একটু বেশি। আতঙ্কে অনেক বাসিন্দা নগরী ছেড়ে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে। এদিকে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) পক্ষ থেকে নগরীর ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার (৩০ মে) বিকেলে এসব স্থাপনা ১০ দিন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।রোববার ভোর ৪টা ৩৫ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে সিলেটে দ্বিতীয় দিনের মতো ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ২.৮। এর আগে সিলেটে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩.০ মাত্রার , সকাল ১০টা ৫০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ৪.১ মাত্রার , ১১টা ৩০ মিনিটে ২.৮ মাত্রার , ১টা ৫৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর বাইরেও আরো কয়েকবার ভূমিকম্প হয়েছে। এ অবস্থায় নগরীর আতঙ্কিত বাসিন্দারা অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
নগরীর গার্ডেন টাওয়ারের ১১ তলার বাসিন্দা মাহমুদ আলম জানান, ফের ভূমিকম্প হতে পারে-এই আহঙ্কায় তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি ফের শহরে আসবেন বলে জানান।শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ জানান, ভূমিকম্পের আতঙ্কে শহর ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না। এজন্য সতর্কতামূলক কিছু পদক্ষেপ হিসেবে ভূমিকম্পের সময় তাৎক্ষণিক বিদ্যুত ও গ্যাসের সুইচ অফ করা, বালিশ মাথায় দিয়ে পিলারের নিচে অবস্থান করা ভালো।রোববার বিকেলে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট নগরীর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে পরিদর্শন করে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। এসময় তার সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা ছিলেন।বিভিন্ন মার্কেট পরিদর্শনকালে মেয়র আরিফ বলেন, নগরীতে দফায় দফায় ভূমিকম্পের কারণে সিলেটে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই, ঝুঁকি এড়াতে ঝুকিপূর্ণ সব মার্কেট অন্তত ১০ দিন বন্ধ রাখতে হবে।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশন ও বন্দরবাজারের সিটি সুপার এবং মধুবন সুপার মার্কেট আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত। এভাবে সিলেট নগরীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও ভবনের কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ বাসাবাড়ির বাসিন্দাদেরও আগামী ১০ দিন অন্যত্র থাকতে হবে।মেয়রের নির্দেশনার পর এই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বৈঠকে বসেছেন বিভিন্ন মার্কেটের মালিক ও ব্যবসায়ীরা।শাবিপ্রবি’র অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ মেয়রের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ১০ দিন নয়, একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া ভালো।
সিসিক কর্তৃক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ভবনগুলো হলো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেলরোডস্থ সমবায় ব্যাংক ভবন, একই এলাকায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারস্থ সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগাগেইটের হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় কালাশীলের মান্নান ভিউ, শেখঘাট শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, জিন্দাবাজারের রাজাম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানী-১৪, ধোপাদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণী মার্কেট ও ধোপাদিঘীরপাড়ের পৌর শপিং সেন্টার।এদিকে ভূমিকম্পে সিলেট নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানটুলা এলাকার দুটি ছয় তলা ভবন একে অপরের অপর হেলে পড়েছে মর্মে শনিবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ(এসএমপি)-এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।খবর পেয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) ভবন দুটি পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনের পর ভবনের বাসিন্দাদের ভবন হতে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।এদিকে, রোববার বিকেলে সিসিক মেয়রের নেতৃত্বে সিসিক ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা সরেজমিনে ভবন দুটি পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে মাপজোক দিয়ে ভবন দুটিতে কোনো ত্রুটি মেলেনি বলে সেখানে উপস্থিত একটি সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি জানান।