লন্ডন:এলাকার কৃতী শিক্ষার্থীদেরকে অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করেছে গ্রেটার দাওরাই কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন (জিডিসিএ)।
১৮ নভেম্বর রোববার বিকেলে পূর্ব লন্ডনের মারিয়াম সেন্টারে এলাকার বিপুলসংখ্যক নারী পুরুষ, শিশু কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক জমজমাট অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া ১৩ জন শিক্ষার্থীকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
অ্যাওয়ার্ডস প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিরা নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে বৃটেনের ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করতে অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান। বক্তারা সংগঠনের এই উদ্যোগের ভূয়শী প্রশংসা করে বলেন, এই অ্যাওয়ার্ড শিক্ষার্থীদেরকে ভবিষ্যতে বড় কিছু অর্জনের জন্য অনুপ্রেরণা যুগাবে। তাঁরা বলেন, আজকে যাদেরকে অ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে তাদের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে আগামী দিনের এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, লন্ডন মেয়র, একজন সিভিল সার্ভেন্ট, ডাক্তার, সার্জন অথবা একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁদেরকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে অভিভাবকদের ভুমিকা অপরিসীম।
গ্রেটার দাওরাই কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জনাব আনহার মিয়ার সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি সাদিক মিয়া লেবুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন নিউহ্যাম কাউন্সিলের ডেপুটি স্পীকার, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজির আহমদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রেডব্রিজ কাউন্সিলের কাউন্সিলার ও হ্যাভেরীং কলেজের লেকচারার শিক্ষাবিদ মোঃ জামাল উদ্দিন, সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক সংবাদিক-কলামিস্ট তাইসির মাহমুদ ও সাপ্তাহিক পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সাংবাদিক লেখক মতিউর রহমান চৌধুরী।
গ্রেটার দাওরাই কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আমির হোসাইন, সাবেক চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া ফারুক, প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসাইন খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আইয়ুব খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল মতিন ও সাবেক ট্রেজারার ফারুক মিয়া জিলু।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, সন্তানরাই আমাদের ভবিষ্যত। আমাদের সব ইনভেস্টমেন্ট হওয়া উচিৎ তাদের উন্নয়নে। কিন্তু আমরা তা না করে যতসব অনুৎপাদনশীল খাতে ইনভেস্ট করে থাকি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশে গড়ে তুলি দালান বাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি নানা কিছু। যা সন্তানদের তো কোনো উপকারে আসেইনা, প্রকৃত অর্থে আমাদেরও কোনো কাজে আসেনা। তাই আমাদের সব ইনভেস্টমেন্ট হতে হবে সন্তানদের উন্নয়নে। আমরা যদি তাদেরকে ভালোভাবে নার্সিং করি তাহলে তাদের মধ্যেই কেউ হয়েতা একদিন এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় পৌঁছবে।তিনি বলেন, আমরা যখন লেখাপড়া করি তখন আমাদের সামনে কোনো রুল মডেল ছিলেননা। এখনকার নতুন প্রজন্মের সামনে শতশত রুল মডেল রয়েছেন। তাদেরকে তারা অনুকরণ ও অনুসরন করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে।
শিক্ষাবিদ মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েদেরকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বড় হতে হবে। তারা ব্রিটেনে বড় হয়েছে তাই বৃটিশ, তাদের বাবা-মা বাংলাদেশী তাই তারা বৃটিশ-বাঙালি, আর তারা মুসলিম তাই তারা বৃটিশ-মুসলিম। যদি তারা এসব ভেল্যু বা মূল্যবোধ ধারণ করে আত“বিশ্বাসের সাথে বড় হতে পারে তাহলে সাফল্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। চাকরি হোক আর রাজনীতি হোক, সকল অঙ্গনেই তাঁরা সাহসিকতা ও সাফল্যের সাথে এগিয়ে যেতে পারবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিক তাইসির মাহমুদ বলেন, ব্রিটেন বিভিন্ন ধরনের অ্যাওয়ার্ডস চালু আছে। এর মধ্যে এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডটি হচ্ছে সবচেয়ে ইউনিক। এই অ্যাওয়ার্ড শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগানোর জন্য নিঃস্বার্থ ভাবেই দেয়া হয়। এই অ্যাওয়ার্ডে কোনো গিভ এন্ড টেইক হয়না। তাই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটি প্রতি বছর চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান জানান। তিনি বলেন, যাঁরা আজ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করলেন তাদের মধ্য থেকেই আমরা আমাদের ভবিষত কর্ণধার খুঁজে পাবো। যাঁরা এ দেশে নেতৃত্ব দেবেন, এমপি-মন্ত্রী হবেন।
সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ভালো কিছু অর্জন করতে কঠোর অধ্যাবসায়ের বিকল্প নেই। এদেশে চাকরির বাজার দিনদিনই কঠিন হয়ে পড়ছে। নিজেদের একটি ভালো অবস্থানে স্থান করে নিতে উচ্চ শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার আহবান জানান।
অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ১৩ জন শিক্ষার্থী হলেন- রেজওয়ানা ফেরদৌস আঁখি, আফসানা শাকিলা বেগম, নাঈম হোসাইন, সায়মাহ বেগম, সোমাইয়া তাসনিম, জাকিয়া বেগম, আরমানী শাহীন, নাঈন হোসাইন খান, ইমন আলী, শাহ হাবিবা বেগম আলী, নাঈম খান, জুমা হোসাইন ও রাসেলআহমদ।
উল্লেখ্য, জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের অন্তর্গত বৃহত্তর দাওরাইয়ের যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের নিয়ে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় গ্রেটার দাওরাই কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন ইউকে। প্রায় এগারো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি এবার তৃতীয়বারের মতো কৃতী শিক্ষার্থী অ্যাওয়ার্ড প্রদান করলো। অনুষ্ঠানে সকলকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয়।। সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব আনহার মিয়া অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও স্বার্থক করে তোলায় সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।