জমকালো আয়োজন ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস পালন করেছে বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডন। ১৬ ডিসেম্বর, রবিবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে এক আলোচনা সভা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কবিতা আবৃত্তি,শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিশেষ নাটক ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্টানের শুরুতে বৃটেনের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী গৌরী চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের ম্যানেজমেন্ট কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যরা সমবেত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন করেন। সেন্টারের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমদ রাজুর সঞ্চালনায় ও সেন্টারের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান মুহিবুরের সভাপতিত্বে বিজয় দিবসের আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকার নাইন,মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) ড: শ্যামল কান্তি চৌধুরী, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সভাপতি ও সাপ্তাহিক জনমত’র প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, বাংলাদেশ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা ও জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দিন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকে’র সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক জিলু, কাউন্সিলার রীতা বেগম, সেন্টারের ভাইস-চেয়ারম্যান শাহানুর খান, কবির উদ্দিন,মানিক মিয়া,মিস গুলনাহার খান,আব্দুস সফিক,আবুল কালাম আজাদ ছোটন, জাহাঙ্গীর খান,দিলওয়ার হোসেন,গয়াসুর রহমান গয়াস, আলী আহমেদ বেবুল, জাকির হোসেন, শিব্বির আহমদ,করিম মিয়া শামীম, নিজাম উদ্দিন ও শামীম আহমদ। আলোচনার সভার ফাঁকে ফাঁকে কবিতা আবৃত্তি করেন সেলিনা আক্তার জোসনা,বর্ণালী চক্রবর্তী ও নজরুল ইসলাম। সেন্টারের সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহবায়ক শওকত মাহমুদ টিপুর সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উদীচী স্কুল এন্ড পারফরমিং আর্টসের নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের গান ও নৃত্য পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর। এছাড়া গৌরী চৌধুরী,সুমন শরীফ ও ড: শ্যামল কান্তি চৌধুরীর দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি প্রানবন্ত হয়ে ওঠে।
সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ কাব্যনাটক থেকে অংশ বিশেষ পাঠ অভিনয় করেন উর্মি মাজহার, উদয় শংকর দাস, এস এম মোস্তাফিজুর রহমান ও জিয়াউর রহমান সাকলাইন। প্রায় ১৭ মিনিটের অভিনয় চলাকালে পুরো ব্রাডি আর্ট সেন্টারে ছিল স্তব্ধতা।
নাটকটিতে ফুটে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে, তাদের অনেককেও দিতে হয়েছে চরম মূল্য। অন্যের স্ত্রী-কন্যাকে তারা যেমন তুলে দিয়েছিল পাকসেনাদের হাতে, তাদের কন্যা-স্ত্রীর সম্ভ্রমও ছিনিয়ে নিয়েছে ওই পাকবাহিনি- যুদ্ধকালীন এই চরম বাস্তবতাকে আঁকতে ভুল করেননি সৈয়দ হক তাঁর এ নাটকে। কাহিনিতে দেখা যায়, মুক্তিবাহিনির বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের ছোবলে মাতবরের কন্যার সম্ভ্রম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাতবর রক্ষা করতে পারেনি তার নিজের ঘরের মর্যাদা।
রাজনীতির ফাঁকা বুলি আর জনকল্যাণের জন্য পাকিস্তান বহাল রাখার তাবেদারিও তার পরিবারের সম্মানকে টিকিয়ে রাখতে বিন্দুমাত্র সহায়তা করেনি। মাতবরের কন্যা চরিত্রে অভিনয়কারী উর্মি মাজহার, তার সুখ-সম্ভ্রম লুটের ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছেন, সেই পাঠ নেওয়া যেতে পারে: ‘আমার কী আছে? গ্যাছে সুখ/ য্যান কেউ নিয়া গ্যাছে গাভীনের বাঁটে যতটুক/ দুধ আছে নিষ্ঠুর দোহন দিয়া।’ অবশেষে স্বাধীনতা-প্রত্যাশি গ্রামবাসী সমবেত জনতার সামনে বিষপানে আত্মহত্যা করে মাতবরের কন্যা। মৃত্যুর আগে সে বাবার অপকর্মের বিপক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে। জনতার কাতারে সামিল হয়ে সভ্যতার অগ্রগতির সত্যকে নিজের চেতনায় ধারণ করেছে। আর সবশেষে জীবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে ইচ্ছামৃত্যুর পথ!
অনুষ্ঠানে বিলেতে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের উপস্হিতি ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় ২৫ জন অংশ নেন। সেন্টারের পক্ষ থেকে তাদেরকে সনদপত্র ও পুরষ্কার প্রদান করা হয়।