আ স ম মাসুম : নামেই বোয়িং ৭৭৭! কাজে ঢাকা সিলেট এসি বাসের মত! একটি আন্তর্জাতিক দীর্ঘ ফ্লাইটের বিনোদনের ব্যবস্থা ইন-ফ্লাইট ইন্টারটেইনমেন্ট সার্ভিসের অধিকাংশ নষ্ট।
স্ক্রীনে উঠে থাকে সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। কেবিন ক্রুদের যাত্রীরা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, নষ্ট! আবার যাত্রীর প্রশ্ন , ঠিক করেন না কেনো? তখন উত্তর আসে, আমরা কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা ঠিক না করলে আমরা কি করবো! ঢাকা থেকে লন্ডনের যাত্রার সময় প্রায় ১০ ঘন্টা। আবার সিলেট থেকে যেসব যাত্রী আসেন তাদের জন্য সেই যাত্রাটি হয়ে যায় ক্ষেত্র বিশেষ ২০ থেকে ২২ ঘন্টা। পরিবার পরিজন নিয়ে যারা ভ্রমন করে থাকের তাদের জন্য বিনোদনহীন এই দীর্ঘযাত্রা হয়ে উঠে মারাত্নক কষ্টের! এই প্রতিবেদক ১৫ জুন লন্ডন থেকে সিলেট এবং ৩০ জুন বিজি ০০১ ফ্লাইটে সিলেট থেকে ঢাকা হয়ে ব্রিটেন ফিরে আসেন। উভয় ফ্লাইটেই বিমানের বোয়িং ৭৭৭ এর বিনোদন ব্যবস্থাটি বন্ধ ছিলো। তবে বাংলাদেশ বিমানের ইন-ফ্লাইট বিনোদন সিষ্টেম কাজ না করার পেছনে যাত্রীদের অযত্নশীল ব্যবহারই দায়ী বলে জানান বিমানের একজন নিয়মিত কেবিন ক্রু।
১৫ জুনের ফ্লাইটে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করতে যাচ্ছিলেন সানোয়ারা ও সোহেল দম্পতি। দীর্ঘ ফ্লাইটে তাদের সাড়ে ৩ বছরের বাচ্চাকে সামলে রাখা প্রচন্ড কষ্ট হয়েছে। ঘন্টাখানেক মোবাইলে ডাউনলোড করা কার্টুন দেখে তারপর যখন মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেলো তখন পুরো ফ্লাইটই সে কান্না করেছে। অথচ বিমানের ইন-ফ্লাইট বিনোদন ব্যবস্থা চালু থাকলে বাচ্চার এই কষ্ট হতো না। সোহেল দম্পতি প্রায় পুরো সময়ই ফ্লাইটে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হেটেছেন। সোহেল অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, বর্তমান যুগে যেভাবে অন্যান্য এয়ারলাইন্সগুলো তাদের মার্কেটিংয়ের জন্য ইন-ফ্লাইট সার্ভিসের ব্যাপক প্রচারনা করে থাকে আমাদের রাষ্ট্রীয় বিমানের হয়েছে উল্টোটা।
বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স যে শুধুমাত্র ইনফ্লাইট বিনোদনের ব্যবস্থার ব্যাপারে সক্রিয় তা নয়, আকাশে ইন্টারনেটের সংযোগ দিয়ে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখছে। বিমানের ইকোনমি ফ্লাইটে নেই মোবাইল চার্জের ব্যবস্থা। এইসব জায়গায় উন্নতি না করলে বিমানের ব্যাপারে আগ্রহ কমে যাবে।
এদিকে সিলেট থেকে লন্ডন আগত যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অভূক্ত থাকতে হয়। রাত আড়াইটায় বিমান বন্দরে ঢুকার জন্য অনেকেই রাতে খেয়ে বের হোন। এরপর সিলেট থেকে ঢাকার ছোট ফ্লাইটে যে ছোট এক টুকরো কেক দেয়া হয় তাতে দীর্ঘ সময় অভূক্ত থাকাকে আরো চাঙ্গা করে। ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রীদের আগে নাস্তা করানোর ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে সেটিও নেই। ঢাকা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক লাউঞ্জের ভিতর স্থানীয়ভাবে বানানো বার্গার আর সেন্ডউইচ যেগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সেগুলো খাওয়াও প্রবাসীদের পক্ষে সম্ভব না। তাই দীর্ঘ সময় অভূক্ত থাকার পর ফ্লাইট ছাড়ারও দুই ঘন্টা পর যে সেট ম্যানু খাবার দেয়া হয় সেটার মান নিয়েও কথা রয়েছে। খাবারের ম্যানুতে কোন অপশন দেয়ার সুযোগ হয় না। তাই বাধ্য হয়েই বিমান থেকে যে সেট ম্যানু দেয়া হয় সেটিই খেতে হয়। যেমন যাদের গরু মাংশ নিষেধ তাদেরকে অনেক সময় বাধ্য হয়ে গরু মাংশ নিতে হয়। ইন-ফ্লাইট সার্ভিসের মান বাড়লেও খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেবিন ক্রুদের এ নিয়ে কিছু করার থাকে না।
সোলায়মান নামের একজন যাত্রী বলেন, বিমানের খাবার খোলার সাথে সাথেই একটি উঠকো গন্ধ নাকে লাগে। বাধ্য হয়েই এই খাবার খেতে হয়।