লন্ডনে এক টুকরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ময় সন্ধ্যা!

আ স ম মাসুম : মঞ্চে লাল সবুজের বিশাল পতাকা, তার সামনে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে অপরাজেয় বাংলা! মূহুর্তে নষ্টালজিক হয়ে যাবেন, স্মৃতির মনিকোঠায় উকি দিয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন! এভাবেই শনিবার রাতে লন্ডনের মে ফেয়ার হয়ে উঠেছিল এক টুকরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ যেনো টিএসসি থেকে মল চত্বরের অবিরাম আড্ডা!

ব্রিটেনে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশন ইউকের উদ্যোগে প্রথমবারে মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বর্ণাঢ্য এই পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান ।

শনিবার পূর্ব লন্ডনের বিখ্যাত মে ফেয়ার ভেন্যুতে অর্ধ সহস্রাধিক সাবেক ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই মিলনমেলায় ১৯৫৭ সালের গ্রাজুয়েট থেকে শুরু করে বিভিন্ন দশকের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। যারা নিজেদের মেধা ও কর্মক্ষেত্রে ব্রিটেনে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক বুলবুল হাসান ও একই বিভাগের সাবেক ছাত্রী সৈয়দা সায়মা আহমেদের দ্বৈরথ সাবলিল উপস্থাপনা ছিল মনোমুগ্ধকর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি রহমান জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার খান।

প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ব্রিটেনের বাঙালি সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার অনেকেই আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছিলেন সেই মিলন মেলায়।

অপারজেয় বাংলার ভাস্কর্য ছিল মঞ্চের মূল থিম। যেন এর পাদদেশেই মিলিত হয়েছেন নিজেদের সোনালী দিনের স্মৃতিগুলো নিয়ে। ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে ছুটে চলা কর্মব্যস্ততাকে পিছনে ফেলে প্রাণের টানে নিজেদের ছেলে মেয়েসহ এসে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরা। এমন অনেকে ছিলেন যাদের দীর্ঘ বিশ-ত্রিশ বছর পরে আবার সাক্ষাৎ হয়েছে। বুকে জড়িয়ে ধরেছেন প্রিয় বন্ধুকে। নিজের অজান্তেই ঝাপসা হয়ে উঠেছে চোখ। শুধু আনন্দ আর আড্ডাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের প্রতি তাদের ঋণ স্বীকার করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুলবুল হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাঝে উচ্চ শিক্ষার উন্মেষ ঘটিয়েছে। আমাদের দায় আছে দেশের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই হয়তো দেশের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলমুনি সম্মিলিতভাবে দেশের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, শিক্ষার জন্য কিছু করতে চাই।

সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

কর্নওয়াল থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা খালেদা আক্তার বলেন, কলাভবন কিংবা টিএসসির আশ্চর্য সুন্দর দিনগুলো আজও আমাকে হাতছানি দেয়। আর সে কারণেই এই ছুটে আসা।

ব্রিটেনের মাটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এই প্রাণের উৎসবে যোগ দিতে ইংল্যান্ড ছাড়াও স্কটল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও ওয়েলসের বিভিন্ন শহর থেকে সাবেকরা যোগ দেন। পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী ফাহমিদা নবী।

ফাহামিদা নবী যখন গাড়ি চলে না চলে না গানটি গেয়ে উঠেন, সময়, বয়সের ব্যবধান ঘুচিয়ে সিনিয়র জুনিয়র সবাই একসাথে নেচে উঠেন। রাত ৯টায় অনুষ্ঠান শেষ করার কথা থাকলেও কখন রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে কেউ টেরই পাননি। বিদায় বেলায় যেন ছোট গল্পের মতো ‘হইয়া ও হইলনা শেষ’ অনুভূতির সেই রেশ নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন সবাই।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে আরো বড়ো পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে সংগঠনের সদস্যরা।

 

Advertisement