সিরিয়া সংকটে কী করবে রাশিয়া?

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ফের সরগরম হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার সাবেক গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ইস্যুকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে রাশিয়ার টানাপোড়েন শুরু হয়। যুক্তরাজ্য এবং এর মিত্রদেশগুলো ১৩০ জনের বেশি রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। জবাবে রাশিয়াও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সমানসংখ্যক কূটনীতিক বহিষ্কার করে।

সের্গেই স্ক্রিপাল ইস্যু কাটতে না কাটতেই এবার সিরিয়া সংকট আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল। মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার যে হুমকি দিয়েছিল, তা বাস্তবে রূপ নিল আজ শনিবার। এদিন ভোরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স একযোগে সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। সিরিয়া সংকট নিয়ে কার্যত এখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মুখোমুখি। তবে রাশিয়া ঝোপ বুঝেই কোপ মারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের এই আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি বৈঠকের আহ্বান করেছে রাশিয়া।
সিরিয়ায় পশ্চিমা জোটের সামরিক অভিযানে তীব্র নিন্দা জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রজোট আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ উপেক্ষ করে সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে শনিবার সকালে প্রকাশিত এক বার্তায় পুতিন বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে আঘাত হানা হয়। পুতিন সিরিয়ায় এই অভিযানকে স্বার্বভৌম দেশের ওপর রীতিমতো আগ্রাসন বলে উল্লেখ করেছেন।
সিরিয়ায় পশ্চিমা জোটের অতর্কিত সামরিক অভিযানে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শায়গু সিরিয়ায় সর্বশেষ পরিস্থিতি কেমন রয়েছে, সে বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়মিত অবহিত করছেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সিরিয়ার বিভিন্ন অবকাঠামোতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যৌথভাবে ১০০টিরও বেশি এয়ার-গ্রাউন্ড শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট করেছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী।
সম্প্রতি সিরিয়ার পূর্ব গৌতার বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত দুমা শহরে রাসায়নিক হামলা হয়। এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, রাসায়নিক হামলার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে সিরিয়ার সরকার ও তাদের সহযোগী দেশ রাশিয়া। আর দামেস্ক ও মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে হটাতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। আসাদ সরকারের অনুরোধে ২০১৫ সালে সিরিয়ায় সেনা মোতায়েন শুরু করে মিত্রদেশ রাশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নের আমল থেকেই সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার অন্যতম শরিক দেশ, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরে অবস্থিত লাটাকিয়ায় রয়েছে রাশিয়ার নৌঘাঁটি। কয়েক বছর ধরে রাশিয়া সেখানে জঙ্গি বিমান, ট্যাংক, সাঁজোয়া সৈন্যবাহী যান মোতায়েন করেছে। এত সব আয়োজনের কারণ হিসেবে বলা যেতেই পারে যে মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়াকে প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখতে চায় ক্রেমলিন। কিন্তু হঠাৎ সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁদের মিত্রদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ভূমিকা কেমন হতে পারে, তা-ই দেখার বিষয়।
এখন পর্যন্ত সিরিয়া পশ্চিমা জোটের অভিযানের ইস্যু নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান কী হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে এখন ক্রেমলিন থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
সিরিয়ায় পশ্চিমা জোটের সামরিক অভিযান নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছে রুশ ফেডারেল পরিষদ। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কমিটির উপপ্রধান ইভগেনি সেরেবরিনিকোভের রিয়া নভাসতিকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে পশ্চিমা জোট। আগামী সপ্তাহে এ বিষয় নিয়ে আমরা ফেডারেল পরিষদে আলোচনা করব।’
এদিকে রুশ ফেডারেল পরিষদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির উপপ্রধান ভ্লাদিমির জাবারোভ রুশ গণমাধ্যমকে বলেন, সিরিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানা পশ্চিমা জোটের ছোড়া দুই-তৃতীয়াংশ রকেট প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে সিরিয়ার রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি নিঃসন্দেহে সিরিয়ার সেনাবাহিনী যে আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে তা প্রমাণিত হলো।
কয়েক দিন ধরেই মার্কিন ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। আজ শনিবার রাশিয়ার পুঁজিবাজারে ডলারের বিপরীতে রুবলের বিনিময়মূল্য ছিল ৬১ দশমিক ৯৮। সিরিয়ায় পশ্চিমা জোটের হামলার করণে রাশিয়ার পুঁজিবাজার ও রুবলের ধস নামবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জেরিক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সহকারী পরিচালক আন্দ্রেই ভেরিনিকোভ রুশ গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী কয়েক দিন সিরিয়ার পরিস্থিতির ওপর রাশিয়ার পুঁজিবাজার নির্ভর করবে এবং একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। আর সিরিয়ায় পশ্চিমা জোটে সামরিক অভিযান দীর্ঘ হলে রাশিয়া একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দায় পড়তে পারে।
আর মাত্র দুই মাস পরই রাশিয়ায় বসতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের আসর। ১৪ জুন থেকে রাশিয়ার ১১টি শহরে মাসব্যাপী বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলাগুলো হবে। বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবলের এই আসরের আয়োজন করার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে রুশ সরকার। বিশ্বকাপ আয়োজন কোনো হুমকির মুখে পড়ুক, এমন কোনো পথে নিশ্চয়ই এগোবেন না পুতিন। এ একটি পরিস্থিতিতে সিরিয়াকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়াবে না রাশিয়া।

Advertisement