অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাবি ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

তিনি বলেছেন, ভিসির নৈতিক স্খলন যদি তদন্তে প্রমাণ হয়, তাহলে তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে নন। তিনি যদি কোনো অন্যায় করেন, এখানে যদি তার কোনো অপকর্মের সংশ্লিষ্টতা থাকে, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

জাবি ভিসির পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, উনি তো (মির্জা ফখরুল) সবার পদত্যাগ দাবি করছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি নিজেই নিজের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি নির্বাচনে জিতেও পদত্যাগ করেছেন।

আবার কথা রাখতে পারেননি, ওই শূন্য জায়গায় নিজেই আরেকজনকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছেন। এই দ্বিচারিতায় তাদের ভালো ভালো কথারও দাম নেই। তারা নিজেরা বলে একটা, করে আরেকটা। তারা নিজেরাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নিজের দলের মধ্যে গণতন্ত্রের সংকটে যারা তারা যদি দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন, তখন সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে হাস্যকরই মনে করে।

সংবাদ সম্মেলনে দলে শুদ্ধি অভিযান চলছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মানসিকতায় দুর্নীতিপ্রবণ নেতাকর্মীদের দলের ভেতরে না থাকাই যথার্থ মনে করি। আমাদের মতো দেশে ক্ষমতাসীন দলে সবসময় একটা সমস্যা থেকে যায়। কিছু আগাছা-পরগাছা, সুবিধাবাদী স্রোতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশ করে। এরাই বেশিরভাগ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখার জন্য ক্লিনজিংয়ের প্রয়োজনটা দেখা দেয়।

মন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগ নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। যুবলীগও বলেছে, তাদের নিজেদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের শুনানি নেয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করছে। এখানে পরিষ্কার বিষয় হচ্ছে, সরকার এবং দলের ইমেজটা ক্লিন হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রীর ক্লিনইমেজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত ও সমাদৃত।

তিনি বলেন, যারা অনিয়ম ও অপকর্ম করে, যারা মানসিকতায় দুর্নীতিপ্রবণ- এ ধরনের নেতাকর্মীদের দলের ভেতরে না থাকাই আমরা যথার্থ মনে করি। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।

কেউ কেউ অপকর্ম করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ম্লান করে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দশটা ভালো কাজ একটা খারাপ আচরণ ম্লান করে দিতে পারে। সে জন্য কিছু কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কিছু অভিযোগ এসেছে। অভিযোগের কারণে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেই অপকর্ম করুক- ছাড় পাবে না। শাস্তি পেতে হবে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেয়া হবে, যেখানে প্রয়োজন।

মন্ত্রী জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও বলা হয়েছে রিপোর্ট নেয়ার জন্য। কোথাও অপকর্ম হলে যথাযথ ইনফর্মেশন দেয়ার জন্য এবং সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। কাউকে যেন ছাড় না দেয়া হয়, তিনি দলের যেই হোন, যত শক্তিশালীই হোন। ভালো কাজের পুরস্কার থাকবে, খারাপ কাজের তিরস্কার। এটাই খুব স্বাভাবিক, এই নীতিতেই আমরা চলব। সেটাই আমাদের নেত্রীর নির্দেশনা।

সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেয়া হল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের দলের কিংবা সরকারের কাউকে কিন্তু ছাড় দেয়া হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনে আমাদের অনেক এমপি ও মন্ত্রীও হাজিরা দিচ্ছেন। কারও কারও চার্জশিট হয়ে গেছে, অনেকে জেলে রয়েছেন। কারও কারও কনভিকশনও হয়ে গেছে।

যুবলীগের চাঁদাবাজির বিষয়টি অনেক আগেই পত্র-পত্রিকায় এসেছে। আগে কেন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সবকিছুতে কেন প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তারা হয়তো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাও তো হতে পারে। রুলিং পার্টিতে নানা রকমের লেম্যান থাকে। প্রধানমন্ত্রী একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এখানে প্রত্যেকে আপন ঘরে শুদ্ধি অভিযান চালাতে পারে, সেটা তো খুবই ভালো।

নেত্রী চাইলে প্রার্থী : আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে নেত্রী শেখ হাসিনা চাইলে প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পারসোনালি আমি কোনো প্রকার প্রার্থিতা ঘোষণা করব না। নেত্রী যাকে ইচ্ছে দেবেন। আমাকে যদি তিনি থাকতে বলেন, সেটা তিনি বলতে পারেন। আবার বলতে পারেন বিদায়, আরেকজন আসবেন, নতুন মুখ আসবে। ওয়েলকাম! কোনো অসুবিধা নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পার্টির সভাপতি শেখ হাসিনা। আমাদের পার্টিতে বারে বারে যেটা হয়, দলের কাউন্সিলরা সব সময় নেতৃত্ব নির্বাচনে নেত্রীর মাইন্ড সেটের ওপর সবকিছু ছেড়ে দেন।

তিনি বলেন, নেত্রীর ইচ্ছের বাইরে আসলে কিছু হয় না। নেত্রী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাকেই পছন্দ করেন, আওয়ামী লীগের কর্মী-কাউন্সিলররা তার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। আমি ভাগ্যবান মানুষ, আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। অনেক কর্মী আজীবন ত্যাগ করেও এ পদটি পাননি। একবার হয়েছি, এটা বিরাট সম্মানের ব্যাপার। আরেকবার থাকব কি না, এটা নির্ভর করে নেত্রীর ওপর। তিনি নতুন কিছুও ভাবতে পারেন। নতুন মুখও চাইতে পারেন। তিনি যেটা চাইবেন, সেটাই হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি, আমার চেষ্টা ও আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি ছিল না। অসুস্থ ছিলাম কিছুদিন। অসুস্থতার পরও আমি দল ও সরকারে সমানভাবে সময় দিচ্ছি। যখন যেখানে প্রয়োজন, সেখানে আমি নিজেকে এনগেজড করছি। এবার নেত্রী কাকে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পছন্দ করবেন, তিনি যাকে পছন্দ করবেন, তার প্রতি আমাদের সবারই পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

Advertisement