পাকসেনাদের সঙ্গে রাঙামাটিয়া গ্রামে হত্যা-আগুন-ধর্ষণে মেতেছিল রাজাকাররা

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ১৯৭১ সালের ৬ জুলাই শেরপুরের ঝিনাইগাতীর রাঙামাটিয়া গ্রামে ঘটেছিল বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। দিনটি খাটুয়াপাড়া গণহত্যা দিবস হিসেবে পরিচিত।

এর দুই দিন আগে ৪ জুলাই ভোরে কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে ৫৩ জনের মুক্তিযোদ্ধার একটি দল অবস্থান নিয়েছিলেন মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের রাঙামাটিয়া গ্রামে আতর আলীর বাড়িতে। অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে আশ্রয় নেন খাটুয়াপাড়ার হাজী নঈমদ্দিন ও হাজী শুকুর মামুদের বাড়িতে।

বাড়ির চারপাশের বিল ছিল পানিতে টইটুম্বুর। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানতে পেরে স্থানীয় রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সহায়তায় পাকসেনারা ওই বাড়ি ঘেরাও করে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে কোম্পানি কমান্ডার ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের শেষ বর্ষে মেধাবী ছাত্র নাজমুল আহসান, তার চাচাত ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও ভাতিজা আলী হোসেন শহীদ হন। রক্তে রঞ্জিত হয় রাঙামাটি বিলের পানি। বাকি মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়ের চলে গেলেও হামলার শিকার হন রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের ৬০/৭০ জনকে কোমরে দড়ি বেঁধে লাঠিপেটা করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাড়ি-ঘর। ধর্ষিত হয় গৃহবধূরা। স্থানীয় রাজাকারা এতে অংশ নিয়ে চালায় লুটপাট।

লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ৬ জন গ্রামবাসীকে। তারা হলেন- আয়াতুল্লাহ, সামেছ মিস্ত্রি, মহেন্দ্র অধিকারী, আব্বাছ আলী, আমেজ উদ্দিন ও বাদশা আলী। আহত হন অনেকে। রাজাকারদের বাঁধার মুখে সেদিন লাশও দাফন করতে পারেননি শহীদের স্বজনরা। কলার ভেলায় লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। এলাকাবাসীর দাবি, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ হওয়া তিন বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি নিরীহ ছয়জন গ্রামবাসীকে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। দিবসটি পালন উপলক্ষে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে দিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

Advertisement