বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে কাউন্সিল

সাঈম চৌধুরী:টাওয়ার হ্যামলেটসের সিডনি স্ট্রিটের আবাসিক এলাকায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা আফসার খান সাদেকের বাড়ির সামনে স্থাপিত বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে কাউন্সিল। 

সূত্র মতে, কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ এবং আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকী এবং ভাস্কর্য নির্মাণে কাউন্সিলের প্ল্যানিং কমপ্ল্যায়েন্স সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের কারণে গত মার্চ মাসে টাওয়ার হ্যামলেটস এই নির্দেশ ইস্যু করে।

এদিকে কাউন্সিলের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন ভাস্কর্যটির মালিক আফসার খান। বিষয়টি বর্তমানে কাউন্সিলের প্ল্যানিং বিভাগে আপিল বিবেচনায় রয়েছে।   ভাস্কর্যটি বঙ্গবন্ধুর হওয়ার কারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল, মেয়র, বাংলাদেশ হাইকমিশন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর মধ্যে এক ধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ারও উপক্রম হয়েছে।

সূত্রমতে, ভাস্কর্যটি টাওয়ার হ্যামলেটসের সিডনি স্ট্রিটের আবাসিক এলাকায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা আফসার খানের ব্যক্তিগত খরচ এবং উদ্যোগে নির্মাণের কারণে আশেপাশের বাসিন্দাদের অভিযোগ নিয়ে দেখা দেয় প্রথম দফা জটিলতা।

কয়েকজন বাসিন্দা তাদের বাড়ির সামনে যখন তখন মানুষের ভিড়ের কারণে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি কাউন্সিলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকী দিয়ে কাউন্সিলকে চিঠি লিখেন বলে জানা গেছে। এসব বাসিন্দা জানতে চেয়েছেন কাউন্সিল কোন আইন বলে আবাসিক এলাকায় এমন ভাস্কর্য নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে?

কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, কয়েকজন বাসিন্দার কাছ থেকে অভিযোগ এবং আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি পাওয়ার পর কাউন্সিল তদন্ত করে দেখতে পায় যে, ভাস্কর্যটি নির্মাণে কাউন্সিলের প্ল্যানিং পারমিশন সংক্রান্ত আইন পরিষ্কারভাবে ভাঙা হয়েছে। অর্থাৎ কাউন্সিল যে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে এটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল তার চেয়ে অনেক বড় করে এটি বানানো হয়েছে। ফলে প্ল্যানিং কমপ্ল্যায়েন্স সংক্রান্ত আইন ভঙ্গের কারণে কাউন্সিলের প্ল্যানিং বিভাগ ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার জন্য এর মালিক আফসার খান সাদিককে লিখিতভাবে নির্দেশ দেয়।

আরেকটি জটিলতা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি একজনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হওয়ার কারণে ভাস্কর্যটি অন্যত্র স্থানান্তর বা এক ছোটবড় করার কোনো এখতিয়ার কাউন্সিলের নেই।  অন্যদিকে, ভাস্কর্যটি দান করা হলেও এটি সরকারি জায়গায় পুনঃস্থাপনের জন্য কাউন্সিলকে পাবলিক কনসালটেশন সহ বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এই আইনি প্রক্রিয়ার সময় আওয়ামী বিরোধী জোট আনুষ্ঠানিকভাবে বাধা দিলে এটা কখনোই সম্ভব নয় বলে অনেকেই মনে করছেন।

রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে এর নিরাপত্তার বিষয়টিকেও কাউন্সিলকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১২ সালে কেমডেন কাউন্সিল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েও একটি পক্ষের প্রকাশ্য বিরোধীতার কারণে তা আর বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক আফসার খান ২০০৯ সালে তার বাড়ির সামনের গার্ডেনে নিজ খরচে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের অনুমতির জন্য টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্টের কাছে আবেদন করেন।

তার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের জুন মাসে কাউন্সিল নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের শর্ত দিয়ে তার বাড়ির গার্ডেনে ভাস্কর্যটি নির্মাণের অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে নির্মাণ শেষে ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ঘটা করে তিনি এটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপি, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুকসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বাংলাদেশের আরো বেশকজন কেন্দ্রীয় নেতা লন্ডন সফরকালে এই ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি তীর্থস্থানে পরিনত হয় স্থানটি। বাড়ির সামনে প্রায়ই তাদের ভিড় লেগে থাকে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাও জানান।

এদিকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাথে যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিল ভাস্কর্যটি সরানোর জন্য নোটিশ প্রদানের কথা স্বীকার করে।

কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র জানান, বাসিন্দাদের অভিযোগের পটভূমিতে কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট অফিসাররা তদন্ত করে দেখতে পান যে, এটি নির্মাণে কাউন্সিলের বিধি ভাঙা হয়েছে। অর্থাৎ কাউন্সিল যে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে এটি বানানোর অনুমতি দিয়েছিল তা মানা হয়নি, এর চেয়ে বড় করে বানানো হয়েছে। ফলে কাউন্সিলকে বাধ্য হয়ে এটি সরানোর জন্য নোটিশ দিতে হয়েছে। তবে নোটিশ প্রাপ্তির পর ভাস্কর্যটির মালিক এর বিরুদ্ধে আপিল করেছেন এবং বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট আপিল বিভাগে রয়েছে।

কাউন্সিলের মুখপাত্র আরো জানান, ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের হওয়ার কারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বিষয়টি অত্যন্ত শ্রদ্ধা এবং গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। আর এজন্য মেয়র জন বিগস ভাস্কর্যের মালিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তার সাথে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলার জন্য। আপিলে তিনি হেরে গেলে বিষয়টির যাতে সম্মানজনক সমাধান হয় এ জন্যও মেয়র সক্রিয় রয়েছেন।

এ বিষয়ে আফসর খান সাদেকের মন্তব্য জানতে গত বুধবার (২২ নভেম্বর) যোগযোগ করা হলে তিনি ভাস্কর্য সরানোর নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলেন, এ ধরণের নোটিশ পাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

তিনি বলেন, কাউন্সিলের ফুল প্ল্যানিং পারমিশন নিয়ে আমি ভাস্কর্যটা নির্মাণ করেছি সুতরাং এটি সরানোরকোনো কারণ নেই।

Advertisement