বিচারকার্যে বাধা দেয়ায় আদালতক্ষেই নিজেকে নিজে গুলি করলেন বিচারক

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বিচারকার্যে বাধা দেয়ায় আদালতকক্ষেই নিজের বুকে নিজে গুলি করেছেন থাইল্যান্ডের একজন বিচারক। থাইল্যান্ডের ইয়ালা আদালতে একটি মামলার শুনানি শেষ করেই এই কাণ্ড ঘটান খানাকর্ন পিয়াঞ্চানা নামের ওই বিচারক।

ইয়ালা আদালতের তিনতলার একটি কক্ষে ৫ জন মুসলিম নাগরিকের বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলার শুনানি চলছিল শুক্রবার। ওইদিন সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ শেষে অভিযুক্তদের সকলের পক্ষে নিঃশর্ত মুক্তি রায় দেন খানাকর্ন। সঙ্গে সঙ্গে আদালতকক্ষে হই-হল্লা শুরু হয়ে যায় এই রায়ের বিপক্ষে। বিচারব্যবস্থার সমালোচনা করে তখন তিনি বলেন, ‘কোন ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে তার বিরুদ্ধে যৌক্তিক ও স্পষ্ট প্রমাণ দাখিল করতে হবে আপনাদের। যদি অপরাধ প্রমাণ করতে না পারেন, শাস্তি দেবেন না।’ এরপরই ডেস্ক থেকে একটি রিভলবার বের করে নিজের বুকে নিজে গুলি করেন এই বিচারক। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, খানাকর্ন এখন শঙ্কামুক্ত আছেন।

ধনী ও ক্ষমতাবানদের পক্ষে রায় দেয়ার জন্য থাইল্যান্ডের আদালতগুলো বরাবরই সমালোচিত হয়ে থাকে। সাধারণ জনগণের দাবি, সংখ্যালঘু ও দূর্বলরা কখনই দেশটিতে সুষ্ঠু বিচার পায় না। তবে কোন বিচারকের বিচার ব্যবস্থার এমন কঠোর সমালোচনা করার ঘটনা আগে কখনও শোনা যায়নি।

এর আগে ফেসবুক লাইভে এসে বিচারক খানাকর্ন উক্ত বিচারকার্য সম্পর্কে নিজের একটি বার্তা প্রচার করেন। ওই ফেসবুক লাইভ বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না যে ওই ৫ জন অভিযুক্ত নির্দোষ। তারা অপরাধ করেও থাকতে পারে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া অবশ্যই স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হওয়া দরকার। নিরপরাধ মানুষকে শাস্তি দিলে আসল অপরাধীরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়।’ পরে ওই ফেসবুক পোস্টটি নিউজ ফিড থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খানাকর্ন গুলি চালানোর আগে রাজাকে সাক্ষী রেখে জোরে জোরে আইনের শপথবাক্য পাঠ করে আদালতকক্ষের সকলকে শোনান।

আবদুল্লাহ হাইয়ি আবু নামে থাইল্যান্ডের মুসলিম অ্যাটর্নি সেন্টারের একজন মুখপাত্র জানান, ওই ৫ জন মুসলিম অভিযুক্তকে এখনও আটক রাখা হয়েছে। তারা মুক্তির জন্য ইতিমধ্যে আপিল করেছেন।

গত ১৫ বছরে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতে মালে-মুসলিম কোন্দলে ৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সংঘাতের দায়ে হাজার হাজার মানুষকে কারাদন্ড দেয়া হয় দেশটিতে। অভিযোগ আছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলিম সংখ্যালঘুরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের আইনজীবীরা দাবি করেন, নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়ই মুসলিমদের বিপক্ষে নির্বিচারে মামলা দেয় এবং তাদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত মামলার শুনানিকার্য শেষ করা হয়।

Advertisement