বিলেতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা টাকা ফেরত চাচ্ছে

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে ব্রিটেন এখন থরহরিকম্প। স্কুল, কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ুয়াদের মুখোমুখি বসে শিক্ষকদের ক্লাস করানো বন্ধ রয়েছে। এরপরই টিউশন ফি ফেরতের দাবিতে সরব হয়েছেন অভিভাবক থেকে পড়ুয়ারা। বছরের শুরুর দিকেই করোনা থাবা বসানোয় হাজার হাজার নতুন বিদ্যার্থীরা আটকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে এক একজনকে গোটা বছরের পড়াশোনা এবং থাকার খরচ বাবদ প্রায় ৯২৫০ পাউন্ড করে দিতে হয়েছে। ছাত্রদের জাতীয় ইউনিয়নের সভাপতি লারিসা কেনেডি ‘দা মেইল’ কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে তখন কর্তৃপক্ষের উচিত ছাত্রদের বাকি বছরের টিউশন ফি ফেরত দিয়ে দেয়া। কারণ মহামারির জেরে তাদের পড়াশোনার ওপর ভীষণ প্রভাব পড়েছে। এর পাশাপাশি যারা ছাত্রদের বাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন তাদের কাছেও লারিসা অনুরোধ করেছেন , যাতে পড়ুয়াদের নিরাপদে বাড়ি পাঠানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয় এবং বাড়িভাড়া সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে ছাত্রদের অযথা হেনস্থা না করা হয়।

যুক্তরাজ্যের ডান্ডি থেকে এক্সেটর পর্যন্ত মোট ৩২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩,০০০ জন স্টুডেন্ট করোনাতে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে আছেন। শিক্ষা সচিব কেট গ্রীন একটি লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এভাবে পড়ুয়াদের বিপদের সময়ে সুস্থভাবে বাড়ি না পাঠিয়ে ঘরবন্দী করে রাখার সিদ্ধান্তটি মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাদের ক্রিস্টমাসের আগেই নিরাপদে বাড়ি পাঠানো উচিত। পাশাপাশি পরিস্থিতির কথা বিচার করে নতুন শিক্ষাবর্ষ কিছুটা পিছিয়ে দেবার অনুরোধও করেছেন গ্রীন। তার মতে , ‘এই দুঃসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিজে থেকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যার্থীদের বাড়ি পাঠানোর বন্দোবস্ত করতো তাহলে সেটি সবথেকে ভালো হতো, কিন্তু প্রশাসন সেই নির্দেশ না দেয়ায় ব্রিটেন সরকারের ওপর হতাশ তরুণরা’। ক্রিস্টমাসের আগে পড়ুয়াদের বাড়ি না যেতে দিয়ে ঘরবন্দী করে রাখার বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছেন না গ্রীন। পরীক্ষা না করে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে এতজন পড়ুয়াকে আটকে রাখা উচিত নয়। ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ১৭০০ জন পড়ুয়া জানিয়েছেন তাদের শরীরে কোনো লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও ২ সপ্তাহ ধরে তারা ঘরবন্দী দশায় জীবন কাটাচ্ছেন। এমনকি পুলিশের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে , যদি কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করে বাইরে বেরোয় তাহলে তাকে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। একটু সময়ের জন্য তাদের বাড়ির বাইরে বেরোতে দেয়া হচ্ছে খাবার সংগ্রহের জন্য। ম্যানচেষ্টার, লিভারপুলের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রথম বর্ষের ছাত্রদের অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। লিডস ইউনিভার্সিটি তাদের নতুন টার্ম শুরু হবার আগে স্পোর্টস ক্যাম্পাসে নতুন ছাত্রদের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন ৯,০০০ পাউন্ড দিয়ে ছেলেকে ভর্তি করার পর এখন তারা মনে করছেন পুরো টাকাটাই জলে গেলো। এই পরিস্থিতিতে সরকারের মানবিকতার ওপর ভরসা রাখছেন হতভাগ্য অভিভাবকরা। তারা চাইছেন প্রশাসন যদি নির্দেশ দেয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি-র খানিকটা নিশ্চয় মওকুফ করে দেবে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি এবং এডিনবার্গ নেপিয়ের ইউনিভার্সিটিতে ১৭২ জন পড়ুয়া এই মুহূর্তে আইসোলেশনে আছে। পাব , রেস্তোরাঁ , পার্টি কোনো জায়গাতেই তাদের যাবার অনুমতি নেই। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে মাথার ওপর ছাদটাও চলে যেতে পারে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবার থেকে দূরে এক দুঃসহ জীবন যাপন করছেন তারা। অভিভাবক থেকে পড়ুয়ারা সকলেই এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনিক সাহায্য চাইছেন।

Advertisement