ভোলায় টেলিস্কোপ বানিয়ে তাক লাগিয়েছে এক যুবক

জেলা সদরে টেলিস্কোপ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নাজমুল আহসান জাহিদ (৩৬) নামের এক যুবক। বাজারে বেশি দামের কারণে টেলিস্কোপ কিনতে না পেরে নিজেই বানানো শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যেই আসে জাহিদের সফলতা। ফার্মাসিস্টের চাকুরীর পাশাপাশি একান্ত আগ্রহে কিছু বই, জার্নাল আর ইন্টারনেটের সহযোগিতায় বানানো টেলিস্কোপ এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করছেন। ইতোমধ্যে ৩টি টেলিস্কোপ বিক্রিও করেছেন। জাহিদের এ সৃষ্টি দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। আসছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। আর এতে দারুণ খুশি জাহিদ।
ভোলা শহরের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা তরুণ নাজমুল আহসান জাহিদের ঘরের ছোট্ট একটি কক্ষে চলছে টেলিস্কোপ তৈরির কাজ। এর জন্য নেই কোন ল্যাব বা বিশেষজ্ঞ। মহাবিশ্বকে জানার দীর্ঘদিনের প্রবল আগ্রহ থেকে ফার্মাসিস্টের চাকুরীর পাশাপাশি শুরু করেন টেলিস্কোপ বানানোর কাজ। দৃঢ় মনোবল আর একাগ্র প্রচেস্টায় মাত্র ৩ মাসেই সফলতা এসেছে তার। নিজের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি এখন বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত শুরু করেছেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

নাজমুল আহসান জাহিদ জানান, সৃস্টির রহস্য নিয়ে তার আগ্রহ ছিল কৈশর থেকেই। তাই ফার্মাসিস্ট পদে চাকুরী করা জাহিদের সকল ব্যস্ততার মধ্যেও মন পড়ে থাকত অধরা সৃস্টির সৌন্দর্য আর রহস্যের মধ্যে। তাই সৃষ্টির এসব রহস্য অবলোকন করার জন্য একটি টেলিস্কোপ কিনতে গিয়ে হোঁচট খান তিনি। বিদেশ থেকে আসা তার পছন্দের টেলিস্কোপটির দাম এক লাখ টাকা। কেনার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও অর্থের সংকুলান না হওয়ায় আর কেনা হয়নি তার। কিন্তু ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা থামিয়ে রাখেন নি তিনি।প্রায় দুই মাস ধরে অনলাইনে বেশ কিছু সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করেন। প্রস্তুত করেন ডিজাইন মেজারমেন্টসহ অন্যান্য কাজগুলো। এসব কাজের জন্য ছুটতে হয়েছে কাঠমিস্ত্রিী থেকে ওয়ার্কশপ পর্যন্ত। নিজের ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার জন্য ৩ মাসে তৈরি করেছেন ৫টি এস্ট্রোনমি গ্রেডর নিউটোনিয়ান টাইপ ডবসোনিয়ান বেজ টেলিস্কোপ। ইতোমধ্যে অনলাইনে ৩টি বিক্রি করেছেন।
অল্পদিনের মধ্যে জাহিদের এমন কাজের খবর ছড়িয়ে পড়লে জাহিদের টেলিস্কোপ দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদসহ বিভিন্ন গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্রপূঞ্জ দেখতে ভিড় জমান অনেকে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ নানান মানুষ জাহিদের বাড়িতে আসেন টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহ- উপগ্রহ দেখতে। রাকিব হাসান নামের একজন জানান, প্রথম দিকে জাহিদের এ কর্মকে গুরুত্ব না দিলেও এখন তার তৈরি টেলিস্ফোপে চাঁদ দেখে উচ্ছ্বাসিত তিনি। সহযোগিতার পাশপাশি এ কাজটি এগিয়ে নেয়ার জন্য উৎসাহও যোগান। লোকমুখে শুনে ছোট ভাইকে নিয়ে জাহিদের টেলিস্কোপ দেখতে আসেন ওই এলাকার বাসিন্দা মো: টিটব। তিনি জানান খালি চোখে এর আগে অনেকবার চাঁদ ও আকাশের তারকা দেখিছি। কিন্তু এ টেলিস্কোপে যেভাবে দেখলাম তার মজাই আলাদা। মারুফ হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি আসেন জাহিদের বাসায়। বাসার ছাঁদ থেকে টেলিস্কোপে বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্র দেখে খুশি মারুফ। তার প্রতিবেশি এমন একটা যন্ত্র তৈরি করেছে এ নিয়ে সে গর্বিতও। টেলিস্কোপ তৈরিতে সফলতার পর এখন নতুন করে আরও ডবসোনিয়ান বেজ টেলিস্কোপ এর সাথে ইকোটোরিয়াল প্লাটফর্ম তৈরিতে মনযোগ দিতে চান এ যুবক। যা পরবর্তীতে এস্ট্রোফটোগ্রাফীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এ ধরনের টেলিস্কোপগুলোর দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু তার তৈরি সমান সুযোগ সুবিধার টেলিস্কোপ বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। তার এ কাজকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতার দাবি জানিয়েছেন জাহিদ।এ ব্যাপারে ভোলা সরকারি কলেজের ভূগল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: মাহবুব আলম বলেন, আমি জাহিদের বানানো টেলিস্কোপ দেখেছি। এটি অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই। তবে এটার মান উন্নয়নে আরো কাজ করতে হবে। তাহলে অনেকেই অল্প টাকায় টেলিস্কোপ ক্রয় করতে পারবে।

Advertisement