অমর সাহা:: জমে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩টি আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে এখন ৩৪টি পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে আছে। কংগ্রেসের দখলে আছে ৪টি, আর বাম দল ও বিজেপির দখলে আছে ২টি করে আসন। এবার মমতা দাবি করেছেন, রাজ্যের সব আসনেই জয়ী হবে তৃণমূল। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি বলেছে, তারা এবার এই রাজ্যে জিততে চলেছে ২২টি আসনে। তবে বাম দল ও কংগ্রেস এখন পর্যন্ত ঘোষণা দেয়নি তারা কয়টি আসনে জিততে চলেছে।
জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে সব রাজনৈতিক দলই। তবে শক্তির দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। এত দিন এই রাজ্যের দ্বিতীয়
শক্তি ছিল বাম দল। কিন্তু ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের পর দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে কংগ্রেস। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হন কংগ্রেসের আবদুল মান্নান। তৃতীয় স্থানে থাকে বাম দল। কিন্তু চলতি বছরের গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে বিজেপি। তারা পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে।
রাজ্যজুড়ে নির্বাচনী ঝড় তোলার জন্য বিজেপি ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ নামে তিনটি প্রচার রথ বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রথ তিনটি বের হবে রাজ্যর তিন প্রান্ত থেকে। কোচবিহার থেকে শুরু হয়েছে ৭ ডিসেম্বর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ থেকে শুরু হবে ৯ ডিসেম্বর আর বীরভূমের তারাপীঠ থেকে শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বর। রথ তিনটি তৈরি হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত বাসে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই রথে থাকবে ইন্টারনেটের সুবিধাও। থাকবে বিশ্রামের জায়গা। রথগুলো পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র ঘুরে শেষ হবে কলকাতায়। প্রতিটি রথের সামনে–পেছনে থাকবে বিজেপির ২০০ কর্মীর মোটরসাইকেল বাহিনী। স্থানে স্থানে থেমে পথসভা করবে। পথসভার সংখ্যা হবে ২০০। চারটি মহাসমাবেশও করবে। প্রতিটি মহাসমাবেশেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত হবেন। সঙ্গে থাকবেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। থাকবেন বিজেপিশাসিত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। প্রথম সমাবেশ হবে বর্ধমানের দুর্গাপুরে ২৪ ডিসেম্বর, দ্বিতীয়টি হবে ২৮ ডিসেম্বর মালদহে, তৃতীয়টি হুগলির শ্রীরামপুরে ৫ জানুয়ারি। আর চতুর্থ সমাবেশ হবে ১১ জানুয়ারি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে।
এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস এবং বাম দল ঘোষণা করেছে, তারা বিজেপির এই রথযাত্রা রুখবে। তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে, তারা বীরভূম জেলাজুড়ে বের করবে খোল-করতাল নিয়ে সংকীর্তন যাত্রা। পথে পথে তারা গাইবে ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’। দলটির বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এই সংকীর্তন যাত্রায় ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৪ হাজার খোল আর ৮ হাজার করতাল। এগুলো বানিয়ে আনা হয়েছে নবদ্বীপ আর মুর্শিদাবাদ থেকে। এ জন্য খরচ হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ রুপি। ভক্তরা এই খোল-করতাল নিয়ে জেলার ১৯টি ব্লকজুড়ে সংকীর্তন করবেন। অনুব্রতর কথায়, বিজেপির ওই রথযাত্রা হবে ‘শ্মশান যাত্রা’। দলের ‘অন্তিম যাত্রা’। সিপিএমের বীরভূমের জেলা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ রামচন্দ্র ডোম প্রশ্ন তুলে বলেছেন, অনুব্রত মণ্ডল কোথা থেকে এই টাকা পেলেন তা জনগণকে জানানো হোক। স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মিলটন রশিদ বলেছেন, বিজেপির এ এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চক্রান্ত। এবার সাম্প্রদায়িকতার মুখোশ খসে পড়বে তৃণমূলেরও।
এর আগে বিজেপির রথযাত্রা ঘোষণার পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘এই রাজ্যের মেহনতি ও শান্তিপ্রিয় মানুষ রাস্তায় নেমে বিজেপির রথযাত্রা আটকে দেবে। প্রয়োজনে রাস্তায় মানুষের দেয়াল তুলে দেবে, যাতে বিজেপির রাস্তা স্তব্ধ হয়ে যায়, রথযাত্রা যেন কোনো পথ খুঁজে না পায়।’ এই মন্তব্যের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে বিজেপির মহিলা মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি লকেট চট্টোপাধ্যায় পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলায় রথযাত্রা আটকানোর চেষ্টা হলে যাঁরা তা করবেন, তাঁদের রথের চাকাতেই পিষে মারা হবে।’ হুগলির এক জনসভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘এবার মারের বদলা হবে মার। আর হাসপাতালে কাউকে পাঠানো হবে না।’
ফলে বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গের ৫০টি সংগঠন এই রথযাত্রার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে ‘সংহতি যাত্রা’ শুরু করেছে। বাম দলসহ বিভিন্ন দল পালন করবে সংহতি দিবস।