লন্ডনে বাংলাদেশ সেন্টারের দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ হবে শিঘ্রই : ৩১ শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান

লন্ডনে ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সেন্টারে বিগত দিনের দুর্নীতির চিত্র অতিদ্রুত প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে সেন্টারের বর্তমান ম্যানেজমেন্ট কমিটি। শুক্রবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সেক্রেটারী এ কথা জানিয়েছেন।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ সেন্টারের সাথে যুক্ত বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ যুক্তরাজ্যে গড় ওঠা আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন ও অর্থ তহবিল সংগ্রহে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যুক্তরাজ্যের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানাতে এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন, সেই সাথে নব নির্বাচিত ম্যানেজমেন্ট কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান আগামী ৩১ মার্চ রবিবার বিকাল ৫ টায় পূর্ব লন্ডনের রয়েল রিজেন্সি ব্যাংকুটিং হলে জাকজমকপূর্ণ ভাবে আয়োজনের কথা জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা প্রশ্ন থেকে উঠে আসে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে অনিয়মের কথা। বছরের পর পর কেন এই অনিয়মের তদন্ত শেষ হচ্ছে না তারও ব্যাখ্যা দেন ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা।

মিডিয়া ও প্রকাশনা কমিটির আহবায়ক আলী আহমেদ বেবুল এর পরিচালনায় সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শুনান সেন্টারের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা নবাব উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান মুহিব, শাহানুর খান, কবির উদ্দিন, গুলনাহার খান, চীফ ট্রেজারার মামুন রশীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আহমদ রাজু, তারাউল ইসলাম, সাংস্কৃতিক কমিটির আহবায়ক শওকত মাহমুদ টিপু , নিজাম উদ্দিন ও সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ভবনের সংস্কার কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী এক বছরের মধ্যে তারা বাংলাদেশ সেন্টারের মূল ভবন থেকে কাজ করতে পারবেন। সেখানে পূর্বের মতোই আরবী শিক্ষা, শিশুদের বাংলাদেশী সংস্কৃতির শিক্ষার ব্যবস্থা, বয়স্কদের জন্য হেলথ প্রোগ্রামসহ নানান কার্যক্রম চালু করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সেন্টারের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ ও সময়ের স্বল্পতার কারণে এবার সমগ্র যুক্তরাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মহান সকল সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা প্রদান করা যাচ্ছেনা । সেজন্য তারা দু:খ প্রকাশ করেন। তবে আগামীতে সমগ্র যুক্তরাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মহান সকল সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিশাল পরিসরে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ ব্যাপারে তারা সকলের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেন। ।
লিখিত বক্তব্যে তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ সেন্টারের সেন্ট্রাল লন্ডনের ২৪ প্রেমব্রিজ গার্ডেনের এ ভবনটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতি বিজড়িত । এ ভবনটি থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যুদ্ধকালীন সময় এখানে বসেই বাংলাদেশ স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এ ভবনটিতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিক ভাবে উত্তোলন করা হয়। বহির্বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘটনা হিসেবে ছিল এটি সর্বপ্রথম । ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এ ভবনটিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন হিসেবে পরিচালিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সেন্টারের এ ভবন আমাদের পূর্ব পুরুষের সূদুরপ্রসারী চিন্তা-চেতনার ফসল। সেন্ট্রাল লন্ডনের চেলসি এন্ড কেনসিংটন বারায় অবস্থিত এ ভবনটি বাংলাদেশের গৌরবের পতাকা বহন করে। এ সেন্টার প্রতিষ্ঠায় আমাদের মুরুব্বীয়ানরা যে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন, এজন্য তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এটি এখন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐতিহ্য , গৌরব ও মর্যাদার অন্যতম প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শতবছরের পুরনো এই লিষ্টেড বিল্ডিংটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি , এ বছরের মধ্যে সেন্টারের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশ সেন্টারের এ অগ্রযাত্রার পেছনে বাংলাদেশ হাইকমিশন, সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, স্থায়ী সদস্য, আজীবন সদস্য ও সাধারণ সদস্যসহ কমিনিউটির সর্বস্তরের জনগণের সার্বিক সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থন ছিল উল্লেখ করার মতো। ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো হয়।

Advertisement