মহান মুক্তিযোদ্ধের কূটনৈতিক ফ্রন্টের অগ্রসৈনিক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুবই ঘনিষ্ঠ সহযোগি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ৯৪ তম জন্মবার্ষিকী আজ।দিবসটি উপলক্ষে পৃথক ভাবে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা।দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষে সিলেটে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ।আজ শনিবার বিকেল ৩টায় সিলেট নগরীর উপশহর জালালাবাদ গ্যাস ভবনের সভাকক্ষে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। মুখ্য আলোচক থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী।
সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। অনুষ্ঠান সফল করতে সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী।এদিকে মরহুম হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ৯৪তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’ এর এক প্রস্তুতি সভা গতকাল শুক্রবার রাতে দরগাহ গেইটস্থ স্টার প্যাসিফিক হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সিলেট জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও আজীবন সদস্য অধ্যাপক মো. জাকির হোসেনের পরিচালনায় প্রস্তুতি সভায় অনুষ্ঠানকে সফল করার লক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। যেহেতু ১৭ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য প্রদানে সদয় সম্মতি প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সেহেতু সভাকে সাফল্যমন্ডিত করতে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন সভাপতি মো. নজিবুর রহমান। তিনি সকলের সহযোগিতায় ও স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠান সফল করতে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন একাধারে কুটনীতিক, আমলা ও রাজনীতিক। তিনি ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। কূটনীতিক হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-৭২ সালে দিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন এবং স্বীকৃতি আদায়ে ৪০টির বেশি দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে অন্তত ৩৪টি দেশের স্বীকৃতি আদায়ে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলাদেশি হিসেবে একমাত্র তিনিই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ‘কলেজ অব উইলিয়াম এন্ড মেরি’ থেকে ১৯৮৪ সালে ‘মাহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ লাভ করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে।তিনি ১৯৭২ সালে জার্মানীতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্টিত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তিসংস্থা এবং জাতিসংঘের ( শিল্প উন্নয়ন সংস্থার প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।সিলেটের উন্নয়নে তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ। জীবদ্দশায় তিনি সিলেটের রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং দৃষ্টিনন্দন সিলেট রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণে তার অবদানের কথা সিলেটবাসী এখনও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।৭৫ এর ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সময় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আশ্রয়হীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী।১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলে জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত হন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং ২০০১ সালের ১০ জুলাই স্পিকার থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন। হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার প্রাঙ্গণে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত।মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেট শহরের দরগা গেইটস্থ রশিদ মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন।