কোভিড ১৯ মহামারি পর বিশ্বকূটনীতি কোন পথে

                    ॥ ইমরান আহমেদ চৌধুরী ॥

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষ ১৯৪৫ এবং কোল্ড ওয়ার এর সমাপ্তি ১৯৯০ সালের পর সম্পূর্ণ পৃথিবী আজ  প্রথম নতুন করে নিপাতিত এক মহা সংকটে, পৃথিবীর পরা শক্তিরা এত পরাক্রমশালী হয়েও কেমন জানি পরাভূত রাজনৈতিক মহাকাশে অনেক কালো মেঘের ঘনাঘটা, পররাষ্ট্রনীতিগুলো নিমজ্জিত এক নতুন সমুদ্রের স্রোতের ঘূর্ণিপাকে সবগুলো উত্তর গোলার্ধের দেশ  প্রায় হাবুডুবু খাচ্ছে স্বরাষ্ট্র নীতি, স্বাস্থ্য নীতি আর অর্থনীতি নিয়ে, সময়ের বিরুদ্ধে ধাবন করছে সবাই  মৃত্যু সংখ্যার গ্রাফ ঊর্ধ্বগামী থেকে মাঝারি পর্যায়ের নিম্নমুখী, ভ্যাক্সিন, সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে রোগী দিয়ে প্লাবিত হতে না দেওয়ার এক ম্যারাথনে ব্যস্ত

অবশেষে, হয়ত বাধা অতিক্রম করবে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো, বিশাল মুদ্রাস্ফীতি, মিলিওন মিলিওন জনগণ বেকার, জি,  ডি, পি কয়েক শতাংশ নিম্নগামী, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অবিন্যস্ত এসব নিয়ে করতে থাকবে নতুন অগ্রগতি নতুন উদ্যোগে ; তখনই  রাষ্ট্রগুলো ক্রমাগত ভাবে তলিয়ে দেখতে শুরু করবে , প্রকাশ করতে থাকবে বৈজ্ঞানিক উপাত্ত, বিশ্লেষণ, উৎপত্তি, নমুনাগুলো এই সদ্য ঘটিত মহামারীর শুরু হবে এইভাইরাস এর সুরত হাল ( পোস্ট মরটেম ) আর বেরিয়ে আসতে থাকবে অনেক অনিভেপ্রেত দুসংবাদ

আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখা দিবে নতুনসমীকরণ, দোষারূপ, দায় দায়িত্ব, মানবিধিকার, স্বচ্ছতা, এসপিওনাজ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিশুদ্ধতা বা সাধুতা , গণতন্ত্র, জবাদিহিতা, গোপনীয়তা, প্রেস এবং মিডিয়া স্বাধীনতা এবং বংশীবাদকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আর এই সবগুলো কামানই হয়ত চীন এর দিকে তাক করেই  গুলিবর্ষণ করা হতে পারে এখানে এটা স্ফটিকের মত স্বচ্ছ যে কোথায় যেন একটা বা একের অধিক প্রশ্ন ওদের দোরগোড়ায় যেয়ে থেমে যাচ্ছে । চায়না এই রোষানলের একমাত্র  সন্দেহদোষী  – প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু, সবচেযে বড় সমস্যা এই মহামারী দিয়েছে সেটা হল উন্নত বিশ্ব হটাৎ করে আবিষ্কার করেছে যে গত দুই দশকে এই সকল একদা বিশ্বের সবচেবৃহৎ শিল্প উন্নত দেশ কি নিদারুণ ভাবে অন্য দেশের অনুকম্পা শিকারে পরিণত হয়েছে

শুরু হবে হয়ত তখনি এক নতুন  কুটনৈতিক মেরুকরণ , আর এই মেরুকরণের নতুন অনুভূত প্রতিপক্ষ কি হয়ে যাবে চায়না উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ? যদি তা হয় তাহলে আশ্চর্য হবার কিছুই নাই এমন হতে পারে, শুরু হবে এক নতুন স্নায়ু যুদ্ধ ইউরোপ, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা এক জোটে সাথে সাপোর্ট পাবে তাইওয়ান এবং জাপান এর   উঠে পরে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপ আসতে থাকবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার, মানবধিকার প্রণয়নের, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার নতুন কূটনৈতিকতার আবর্তে চায়নার একছত্র বাজার গ্রাসের অভিপ্রায়কে স্তিমিত করতে জোটগুলো চায়না থেকে আমদানির উপর প্রয়োগ করবে  চড়া দরে আমদানি শুল্ক। নতুন কূটনীতি শুরু হবে চায়নার  একছত্র বাজার আফ্রিকা এবং সাব সাহারান দেশগুলোকে আধিপত্য মুক্তা করার । ভারত তখন ক্রমে ক্রমে আরও বিশ্বাস ভাজন দেশ হিসেবে পশ্চিমা এবং উন্নত বিশ্বের জোটগুলোর কাছে। টেক ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে ভারত পর্যবসিত হবে সবে চেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী বন্ধুতে

এমন হতে পারে  চায়নার প্রতিবেশী দেশ হিসেবে, কাউন্টারব্যালেন্স এর কারণে এবং বিশ্বের সবচেবড় গণতন্ত্র হিসেবে ভারতকে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য করাও হতে পারে নব্যকূটনৈতিক মেরুকরণের ফলে যদিও জাপান এবং জার্মানিএটার বাধ সাদবে হয়ত কিন্তু সেই কূটনীতি আসতে একটু সময় নিতে পারে

কোভিড ১৯ এর সামগ্রিক মূল্য হয়ত দাঁড়াবে গিয়ে বিশ্বব্যাপী ১ ট্রিলিয়ন ইউ এস ডলার এবং বন্ধুবিহীন চায়না ( সম্পূর্ণ ভাবেনা ) কে সকল সময় এক অযাচিত কূটনৈতিক চাপের মাঝে রাখবে আন্তর্জাতিক ক্ষতিপূরন মামলায় আগামী এক দশক

মুক্ত বাণিজ্য এবং পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোই  হয়ত এই  নতুন এবং আধুনিক কূটনীতি সুরু করবে, তরুণ, একটু সেন্টার রাইট রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নিয়ে।

এটা সম্পূর্ণই  একটা কল্পনা !  তবে, যদি এই রকম কিছু ভবিষ্যতে ঘটে তাহলে আশ্চর্য হবার কিছুই নাই !

ইমরান আহমেদ চৌধুরী : লেখক এবং কলামিস্ট। নর্থাম্পটন

Advertisement