ব্রিট বাংলা ডেস্ক : বিশ্বের অনেক দেশেই করোনাভাইরাস এখনো দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা এখন ভয়াবহ। এই সময়ে করোনার কারণে মানুষের সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের ওপর আনন্দ ও সামাজিকতার সব উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে জাতিসংঘ। এতে উঠে এসেছে আরেকটি আশংকাজনক তথ্য। সমীক্ষা বলছে, করোনাকালীন সময়ে আশংকাজনক ভাবে বেড়ে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ।
গবেষণা অনুযায়ী, সারা বিশ্বে মার্চ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে জন্ম নেবে ১১ কোটি ৬০ লক্ষ শিশু। যার মধ্যে শুধু ভারতেই জন্মাবে ২ কোটির মতো। চীনে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ, নাইজিরিয়ায় ৬৪ লক্ষ, পাকিস্তানে ৫০ লক্ষ আর ইন্দোনেশিয়ায় ৪০ লক্ষ। আমেরিকাও ব্যতিক্রম নয়। সেখানে জন্মাবে ৩৩ লক্ষ শিশু। তবে এসবই একটা জরিপের ফল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাস্তবে এর চেয়ে আরও অনেক বেশি শিশুর জন্ম হবে।
‘জার্নাল অব সাইকোসোম্যাটিক অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে আবার বলা হয়েছে যে, আর্থিক ও সামাজিক টালমাটালের সময়ে প্রায় ৮০ শতাংশ দম্পতি চাইছেন না এই মুহূর্তে সন্তান হোক। ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে ১,৪৮২ জন নারী-পুরুষের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়।
আসলে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই এই মুহূর্তে সন্তানধারণের বিপক্ষে। সেজন্য যে হারে গর্ভসঞ্চার হচ্ছে, গর্ভপাতের আবেদনও আসছে প্রায় সেই হারে! যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, অধিকাংশ গর্ভসঞ্চারই অনাকাঙ্ক্ষিত। তাহলে কেন এত নারী গর্ভবতী হয়ে পড়ছে? গবেষকেরা বলছেন, লকডাউনের অবসরে গৃহবন্দি অনেক দম্পতিই ঘন ঘন যৌনমিলন করেছেন। তার মধ্যে আবার ওষুধের দোকান খোলা না-থাকায় বা বাইরে বের হওয়া যায়নি বলে অনেকেই গর্ভনিরোধক কিনতে পারেননি।
করোনাকালে অনলাইন সেবাতেও সমস্যা হয়েছে। অনলাইন থেকে যে গর্ভনিরোধক কিনবেন- সেই পথও অনেকাংশেই বন্ধ ছিল। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ আবার দুশ্চিন্তার হাত থেকে মুক্তি পেতেও শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এরপর অধিকাংশ দম্পতি ছুটেছেন গর্ভপাত করাতে। যারা বিপদ বুঝে গর্ভপাত করিয়ে নিচ্ছেন, তাদের সমস্যা নেই। কিন্তু যারা করাবেন না, তাদের অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে এখন করোনাভাইরাসের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হয়েছে। কোভিড যে হারে বাড়ছে, কখন কে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন তার ঠিক নেই। সেই অবস্থায় সন্তানের জন্ম দেওয়া যথেষ্ট ঝুঁকির ব্যাপার। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তো মারাত্মক ঝুঁকি। তার ওপর আছে আর্থিক মন্দা। কত জনের চাকরি গেছে এবং যাবে, ব্যবসা বন্ধ হবে তার ঠিক নেই। সেই অবস্থায় সন্তানের জন্ম দেওয়া মানে শিশু ও প্রসূতির মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়া। সংসারে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হওয়া। সুতরাং ভেবেচিন্তে পার করতে হবে এই করোনাকাল।