ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী।
গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০২২, রাশিয়া অনুষ্টানিক ভাবে সামরিকঅভিযান শুরু করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে। এক সপ্তাহের মধ্যে ধারণাকরা হয় প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নেয় ইউরোপে।ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ড বর্ডার খুলে দেয়। সাথেসাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ গুলো বিনা ভিসায় ৩ বছরথাকা সেই সাথে কাজের অনুমতি দেয়। এই লেখা যখন লেখছি সেইসময় পর্যন্ত ধারণা করা হয় প্রায় দুই ৩০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন থেকেইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ গুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। আর অবস্থাদৃষ্টি মনে হচ্ছে ক্রমে ক্রমে এই আশ্রয়হীন উদ্বাস্তু মানুষের মিছিলআরো বাড়বে।
শুরু থেকেই ব্রিটেনের এসাইলাম নীতি এবং উদ্বাস্তু মানুষদের আশ্রয়না দেয়া নিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও হোম মিনিস্টার তোপের মুখে।প্রতিদিন মন্ত্রী ও এমপিরা সরকার ও বিরোধী দল থেকে এক প্রকারচাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে সরকারের উপর। ইউকে যেহেতু আরইউরোপের সাথে নেই সেজন্য ইউরোপের এসাইলাম নীতি এখানেঅকার্যকর। সেজন্য ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপের আইন ইউকেতে কোনপ্রভাব ফেলেনি। ইউরোপ যেখানে ৩০ লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দেয়ারকথা বলছে সেখানে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ও হোম সেক্রেটারি একহাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়ার কথা বলছেন। এটা ব্রিটিশ সমাজেরজন্য আসলেই বেমানান। অনেক অভিযোগ অনুযোগ শেষে ব্রিটিশহোম সেক্রেটারির ঘোষণা অনুযায়ী গত মঙ্গলবার থেকে অর্থাৎ ১৪ইমার্চ থেকে ইউক্রেনের ন্যাশনালরা অনলাইনে ব্রিটেনে আসারআবেদন করতে পারবেন। এই স্কিমকে বলা হয়েছে ফ্যামিলি স্কিম। অর্থাৎ যদি আবেদনকারীর কোন পরিবার ব্রিটেনে থাকেন তাহলেআবেদনকারী পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে আবেদনকরতে পারবেন। আবেদন গৃহীত হলে আবেদনকারী ব্রিটেনের পোর্টেআসতে পারবেন যেখানে তার আনুসাঙ্গিক প্রসেস সমাপ্ত করে ব্রিটেনেপ্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে। আর এজন্য এয়ারপোর্টে এবং কালেতেখোলা হচ্ছে বিশেষ সেন্টার। আর পরিবার ছাড়া সাধারণ মানুষেরজন্য এসাইলাম নীতিমালা বর্তমানে প্রস্তুত করা হচ্ছে। হয়তোঅচিরেই আমরা দেখতে পাবো বিস্তারিত নীতিমালা।
সার্বিক বিবেচনায় দেখা যায় পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের ব্যাপারে খুবইসহানুভূতি দেখাচ্ছে। যদি ও ব্রিটেনের অবস্থান অন্যান্য দেশেরঅবস্থানের চাইতে খুবই রক্ষণশীল। যা শুধু বহির্বিশ্বে নয় খোদব্রিটেনের পার্লামেন্টে সমালোচিত। পশ্চিমা বিশ্বের এই সমানসহানুভুতি আমরা দেখেছি বাংলাদেশে। বার্মার রাখাইন রাজ্য থেকেযখন রোহিঙ্গা জনগুষ্টি উদ্বাস্তু হয় তখন বাংলাদেশের বর্তমানপ্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় দিতে বর্ডার খোলে দিয়েছিলেন। প্রায় ১০লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এটাই মানবতা। সুতরাং পশ্চিমাবিশ্ব ইউক্রেনের আশ্রয়হীন মানুষের জন্য যা করেছেতা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার প্রশ্ন হলো সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া কিংবা আফগানিস্তান থেকেযারা আশ্রয় নিতে চেয়েছিলো, তাদের প্রতি পশ্চিমাবিশ্ব কেন এরকমউদ্যোগ নেয়নি। আশ্রয়হীন মানুষকে সমুদ্রতীরে ডুবে মরতে দেখেছি।ছুট্ট ডিঙিতে যখন এই মানুষগুলো সাগর পাড়ি দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বেআশ্রয় নিতে চেয়েছিলো তখন তাদের জন্য কি করা হয়েছিলো? পয়সাদিয়ে তখন তুর্কিতে ক্যাম্প করা হয়েছিল যাতে এই মানুষগুলোপশ্চিমাবিশ্বে না আসতে পারে। অনেক আশ্রয়াহীন মানুষ নৌকাডুবিতে নিহত হতে দেখেছি। পত্রিকায় হেডলাইন হয়েছে কিন্ত কার্যতকোন ব্যবস্থা নিতে দিতে দেখিনি।বর্তমান বিশ্ব জ্ঞান-বিজ্ঞানে যেমন সমৃদ্ধ তেমনি মানবতা ও সভ্যতারউচ্চ শিখরে। বিপদগ্রস্থ আশ্রয়হীন মানুষ সবসময় খুঁজে ফিয়ে শান্তিরআবাসস্থলের। এই আশ্রয়হীন বিপদগ্রস্থ মানুষের ধর্ম, বর্ণ কিংবাসংস্কৃতি ভিন্ন হতে পারে কিন্ত তারা একটি জায়গায় এক আর সেটাহলো তারা সবাই মানুষ। প্রত্যাশা রইলো আগামী দিনেরপশ্চিমাবিশ্বের আশ্রয় কিংবা এসাইলাম নীতি যেন কোন বিশেষ কোনধর্ম কিংবা বর্ণের উপর ভিত্তি করে না হয়।
লেখক: প্রিন্সিপাল সলিসিটর, কেসি সলিসিটর্স, ইউকে কন্ট্রিবিউটর, ব্রিটবাংলা।