অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন বুস্টার্স’র উদ্যোগ পর পর ৯ অপারেশনের পর হাঁটতে শুরু করেছে স্কুল ছাত্র বিশ্ব

কাউসার চৌধুরী 

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুল ছাত্র বিশ্ব বিশ্বাসের পায়ে পচন ধরে গেছে।পায়ের ভাঙা অংশ থেকে মাংস খসে পড়ার উপক্রম।বিশ্বের এমন করুণ অবস্থা নিয়ে প্রতিবেশী যুবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিলে নজর কাড়ে একদল যুবকের।

‘বুস্টার্স’ নামক সংগঠনের সদস্য যুবকরা ছুটে যান বিশ্বের কাছে।এরপর বিশ্বকে রক্ষার প্রাণপণ লড়াই শুরু।এক বছরে পর পর ৯টি অপারেশন করা হয় ১৫ বছর বয়সী বিশ্বের পায়ে।

পর পর ৯ অপারেশনে বিশ্বের পা অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।এখন সামান্য হাঁটতেও শুরু করেছে।বুস্টার্সের সদস্যরা সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, কেবল বিশ্বই নয় মানবতার জন্যে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
মৃত্যুর দরজায় বিশ্ব: গত বছরের ৪ জুলাই বেলা দেড়টা।দিরাই বাসস্ট্যান্ড থেকে বোনের বাড়ি চরনারচর যেতে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে রওয়ানা দেয় বিশ্ব বিশ্বাস।

পথে সিএনজি’র সাথে বিপরীতমুখ থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় অটোরিক্সা।জীবন বাঁচাতে সড়কের পার্শ্বের ডোবায় লাফ দেয় বিশ্ব।

মৃত্যু দরজায় গিয়ে ফিরে আসলেও বোনের বাড়ি নয়, বিশ্বের ঠাই হয় ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে।বিশ্ব দিরাই পৌর এলাকার মজলিসপুরের অমল চান বিশ্বাসের একমাত্র পুত্র।ঘটনার সময় সে দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল।দিন মজুর পিতার ২ কন্যা ও ১পুত্র সন্তান থাকায় বিশ্বকে নিয়ে পরিবারের স্বপ্নেরও শেষ ছিল না।
একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস: ওসমানী হাসপাতালে ভর্তির পর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায় বিশ্বের ডান পায়ের হাঁটুর নিচে ভেঙে গেছে।অপারেশনের পরও কোনো পরিবর্তন না আসায় পরিবারের লোকজন হতাশ হয়ে পড়েন।এক সময় পায়ে পচন ধরে যায়।মাংস খসে পড়ার উপক্রম হয়ে যায়।এ অবস্থায় বিশ্বের প্রতিবেশী হিল্লোল পুরকায়স্থ ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বিশ্বের জন্যে হৃদয়বানদের সহযোগিতা কামনা করেন।

‘বুস্টার্স’ সদস্যদের উদ্যোগ:ফেসবুক স্ট্যাটাসটি মহানগর পুলিশের সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ ও তার বন্ধুদের নজরে পড়লে তারা ওসমানী হাসপাতালে বিশ্বের কাছে ছুটে যান।তারা বিশ্বের করুণ অবস্থা দেখে হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের ডাঃ বাকী বিল্লাহ’র সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

২৯ জুলাই তারা বিশ্বের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।সার্জেন্ট ফাহাদ ছাড়াও ডাঃ প্রশান্ত তালুকদার, সার্জেন্ট স্বপন তালুকদার ও সার্জেন্ট উজ্জ্বল রায় প্রথমে বিশ্বের জন্য এই উদ্যোগ নেন।এদের সকলেই ‘বুস্টার্স’ নামক একটি অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক সংগঠনের সদস্য।
পর পর ৯ অপারেশন বিশ্বের পরিবার সূত্র জানায়, ‘বুস্টার্স’ সদস্যদের উদ্যোগের ফলে নতুন করে স্বপ্ন দেখে বিশ্ব ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ডাঃ বাকী বিল্লাহ নিজ উদ্যোগে অপারেশন সামগ্রী সংগ্রহ করে দেন।পপুলার মেডিকেলের নুপুর দে, সিনিয়র নার্স কৃষ্ণা রানী দত্ত্, বীমা-কর্মকর্তা রাজীব কুমার রায়, সাদেক চৌধুরীও বিশ্বের জন্যে এগিয়ে আসেন।সকলের সহযোগিতায় পর পর ৯টি অপারেশন করা হয় বিশ্বের পায়ে।দিরাই থেকে প্রাইভেট কারে করে সিলেটে আসা-যাওয়ার ব্যয়সহ চিকিৎসার পুরো ব্যয়ের ব্যবস্থা করে ‘বুস্টার্স’।দিরাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান লিটন ‘বুস্টার্সের এই উদ্যোগে অংশ নেন।বর্তমানে বিশ্ব দিরাই পৌর এলাকার নিজ বাসায় অবস্থান করছে।পর পর ৯ অপারেশনে তার ডান পা কিছুটা খাটো হয়ে গেলেও সামান্য হাঁটতে শুরু করেছে।
আবারো স্কুলে যেতে চায় সে ঃ টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী বিশ্ব এবার নতুন করে আশার আলো দেখছে।চিকিৎসার ধারাবাহিকতার ফলে আবারো স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনেরও স্বপ্ন দেখছে।আবারো যেতে চায় তার প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ে।পড়ালেখা করে দরিদ্র পিতা-মাতার দুঃখ ঘোচাতে চায়।‘বুস্টার্সের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সে জানায়, তারা যদি এগিয়ে না আসতেন তাহলে হয়তো পা-ই কেটে ফেলতে হতো।সে ডাঃ বাকী বিল্লাহসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।
‘বুস্টার্স’ কাজ করে যাবে: অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘বুস্টার্স’ এর এডমিন সার্জেন্ট ফাহাদ মোহাম্মদ জানান, মানবতার জন্য কাজ করতেই আমাদের সংগঠন।

কেবল বিশ্বই নয় মানুষের জন্যে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে খাতা-কলম দেয়া, দরিদ্র রোগীদের সহযোগিতা করাসহ আমরা নানা কাজ করছি।

Advertisement