কুয়াকাটা-সুন্দরবন-পদ্মাসেতু ভ্রমণ

|| বিপ্লব আচার্য ||

পদ্মা সেতু নিয়ে সবার মতো আমার ও দেখার কৌতুহল হলো।তাই শৈশবের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম। চার জনের একটা গ্রুপ হয়ে গেলাম। মনি, মিটন, বাবুল আর আমি। সিদ্ধান্ত হলো কুয়াকাটা যাব আর পদ্মা সেতু দেখা হয়ে যাবে। সৃষ্টি কর্তার অশেষ কৃপায় ১১ জুলাই,২০২২ ইং তারিখ ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে বসি। শায়েস্তাগঞ্জে তাদের সাথে একত্রিত হই। ঢাকা পৌঁছে যাই ৩ঃ৫০ মিনিটে। প্রস্তাব রাখলাম লঞ্চে যাব। সম্মতি পাওয়া মাত্র সদরঘাটে উপস্থিত। ভাগ্যক্রমে সুন্দরবন-৭ লঞ্চের একটি স্পেশাল কেবিন পেয়ে যাই। সন্ধ্যা ৬ টায় লঞ্চ ছাড়ে। রাত ৯ টা পর্যন্ত লঞ্চের ছাদে বসে আকাশের চাঁদের আলোয় জমজমাট আড্ডা হয়ে গেল। ইলিশ মাছ, ডাল, আলুভর্তা দিয়ে রাতের খাবার শেষ হলো। লঞ্চের কেবিনটি আমাদের জন্য বেশ সুবিধাজনক ছিল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল। অবশেষে এসি বন্ধ করে জানালা খুলে দেই। রাত ২ টা পর্যন্ত চলে তাসের আড্ডা। ঘুমের সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নির্ঘুম রাত কাটাই। ভোর ৬ টায় বরগুনা জেলার আমতলী ঘাটে পৌঁছে যাই। আকাশে মেঘ জমে আছে। একটা অটো নিয়ে কুয়াকাটা চলে যাই। শুরু হয় বৃষ্টি। তিনটি নদী পাড়ি দিয়ে পরিপাটি একটা বাজারে পৌঁছে যাই। অটো থেকে নেমে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়লো বিশাল সমদ্রের ঢেউ। সমুদ্রের গর্জন সকল ক্লান্তি দূর করে দিল। হোটেল রিজার্ভেশন করা ছিল। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নেই। এবার কুয়াকাটা ভ্রমণ শুরু হবে। কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার একটি শহর ও পর্যটনকেন্দ্র। এটি বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত। এখানে আছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত যা পর্যটকদের কাছে “সাগরকন্যা” হিসেবে পরিচিত। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়।

হোটেল থেকে রাস্তায় আসি। একটি ছেলে এসে আমাদের বাইকে ঘুরানোর অফার করল। অনেক দর কষাকষি করে দুটো মটর সাইকেল সারাদিনের জন্য এবং পরের দিন সূর্য উদয় দেখানো সহ ২৪০০ টাকায় ভাড়া করি। শুরু করি কুয়াকাটার ‘কুয়া’ দেখে।কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কাছে রাখাইন পল্লী কেরানীপাড়ার শুরুতেই একটা বৌদ্ধ বিহারের কাছে রয়েছে একটি প্রাচীন কুয়া।কুয়াকাটা নামের পেছনে রয়েছে আরাকানদের এদেশে আগমনের সাথে জড়িত ইতিহাস। ‘কুয়া’ শব্দটি এসেছে ‘কুপ’ থেকে। ধারণা করা হয় ১৮ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতাড়িত হয়ে আরাকানরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তখন এখানে সুপেয় জলের অভাব পূরণ করতে তারা প্রচুর কুয়ো বা কুপ খনন করেছিলেন, সেই থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা।

প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন সীমা বৌদ্ধ বিহার, যাতে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।সীমা বৌদ্ধ বিহারের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া। সেখানে দেখেছি তাদের ব্যতিক্রমী পিঠা তৈরি। যদিও স্বাদ নিতে পারিনি। সমুদ্রের জল এখনো ভাটা হয়নি। তাই গ্রামের রাস্তা ধরে বাইক নিয়ে আবার যাত্রা শুরু। কাওয়ার চর তারপর গঙ্গামতির জঙ্গল।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতির খালের পাশে গঙ্গামতি বা গজমতির জঙ্গল। এখান থেকে সূর্য উদয় দেখা হয়। গজমতি জঙলের প্রবেশ পথ ছিল এডভেঞ্চার ভ্রমণ। বনের ভিতরে গিয়ে খাল পার হতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি। এখানে বর্ষাকালে যখন তখন বৃষ্টি হয় এবং ১৫ মিনিট পর আবার আকাশ নীল বর্ণ ধারণ করে। আকাশে মেঘ আর সূর্যের দারুণ লুকোচুরি খেলা! বৃষ্টি ভেজানোর কারণে ভ্রমণ যাত্রায় মধ্যাহ্ন বিরতি দিতে হলো। দুপরের খাবারে সামুদ্রিক মাছ না হলে কি হয়? সাথে ১ ঘন্টা ঘুম ফ্রি। বিকেল ৫ টা বাইক চালক সজীব প্রস্তুত। দায়িত্বশীল চালক বটে! একটানে লেম্বুর বন। লেম্বু দুরের কথা, একটা লেম্বু গাছ ও নেই। কি আশ্চর্য!! আসলে লেম্বু ছিল রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি মেয়ে। তার বাড়ি ও বাগান এখানে ছিল। সমুদ্রে সে বাড়ি হারিয়ে গেছে। এখান থেকে পশ্চিমে ফাতরার বন দেখা যায়। লেম্বু বাগান থেকে সূর্যাস্ত সবথেকে ভাল দেখা যায়। এখানে সামুদ্রিক শামুক ঝিনুকের প্রচুর খোলস পাওয়া যায়। এখানে বেশ কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। কাঁকড়া বা মাছ ফ্রাই করে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ফিস ফ্রাই মিস করা যাবেনা। কিন্তু খানিকটা পথ এগিয়ে গেলে ফাতরার বন। এদিকে জোয়ার আসার পূর্বে ফাতরার বন ঘুরে আসা জরুরী। সজীব ভাই রেডি। চলে গেলাম ফাতরার বনে। সেখানে আন্ধারমানিক নদীর মোহনা পার হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেষে এ ম্যানগ্রোভ বন গড়ে উঠেছে। এ বনের মধ্যে হরিণ, বানর, শুকর, বন মোরগ, শিয়াল, বাঘডাস, মেছোবাঘ, ভোদর, খরগোশ, অজগর দেখতে পাওয়া যায়। বনের দক্ষিন পশ্চিম পাশে সরকারের অর্থায়নে ইকোপার্ক তৈরি হয়েছে। যা আমাদের দেখা হয়নি।

লাল কাঁকড়ার চরের কথা তো বলা হয়নি। কাঁকড়ার পিছনে ছুটা যেন মরুভূমিতে মরীচিকা পিছনে ছুটা। কুয়াকাটার বেশ কিছু স্থানেই লাল কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়।

তাড়াহুড়ো করে ফিরে আসলাম লেম্বুর চর। পশ্চিম আকাশে কালো মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্য তার বিদায়ী লাল আলো প্রজ্জ্বলিত করছে। দেখা হয়নি সূর্যাস্ত! গুরুপূর্ণিমার চাঁদের আলো স্পষ্ট হতে চলেছে। সেলমন ফিস আর কাঁকড়া ফ্রাই অর্ডার করেছি। মাছ যেন পরিবর্তন না হয় তাই পরিদর্শক সেট করা হয়েছে। সামুদ্রিক মাছের ফ্রাই কি যে মজা!! রাত ৯ টায় হোটেলে যাই। বর্ষাকালে কুয়াকাটায় সূর্যোদয় দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় সূর্যোদয় দেখা বাতিল করা হলো।স্নান করে ফ্রেশ হয়ে সমুদ্র সৈকতের পাশে রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে যাই। রাত ১টা পর্যন্ত সৈকতে বসে চাঁদের আলোয় সমুদ্রের তরঙ্গ নৃত্য উপভোগ করলাম। সৈকতে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, সুন্দরবন যাব। টিকেট হয়ে গেল। সকালে সমুদ্র স্নান শেষে সকাল ১০ঃ২০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশ্যে বি আর টি সি বাসে লং ড্রাইভার। এ সি বাস থাকায় ক্লান্তি আসেনি। উত্তর বঙ্গের রাস্তা চমৎকার। বিকাল ৫ টায় কাটাখালি নেমে মংলার বাসে উঠি। ১ ঘন্টা পর মোংলা পৌঁছে যাই। খেয়া পার হতে হলো। পশুর নদীর দুই তীরে মোংলা বিভক্ত। মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। মোংলা আসার পূর্বে আমরা সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য একটা নৌকা রিজার্ভ করেছি। নৌকা ভাড়া এবং ফরেস্ট অনুমতি টিকেট, সিকিউরিটি গার্ড সহ সাত হাজার টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত “হোটেল পশুর” বুকিং দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে থাকা হয়নি। রাত কাটে হোটেল টাইগারে। রাতের খাবার ভালো হয়নি। বলা যায় অনেক খুঁজাখুঁজির পরও ভাল খাবার খাওয়ার মতো কোন হোটেল নেই। এরমধ্যেই নৌকার মাঝির সাথে স্বাক্ষাত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় নৌকায় পা রাখি। নৌকায় পা রাখতেই নতুন কেনা জুতাটি খরস্রোতা পশুরে ভেসে যায়। মনটা খারাপ হয়ে গেল। যাইহোক, জুতার জন্য দুঃখ করে আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা যাবেনা। পশুর নদী বুক দিয়ে ঢেউয়ের তালে দ্রুত গতিতে চলছে সুন্দর বনের হাড়বাড়িয়া জঙ্গলের দিকে।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের বেশিরভাগটাই বাংলাদেশে পড়েছে, কিছু অংশ পড়েছে ভারতে। এখানে দেখা যায় বাঘ, হরিণ, বানর থেকে শুরু করে নানা রকম জীব। সুন্দরবন এতটাই বিশাল যে এটাকে পূর্ণভাবে অনুভব করতে হলে থাকতে হয় বেশ কদিন।

কিন্তু আমাদের কাছে এত সময় নেই।তাই এক দিনে সুন্দরবনের স্বাদ নিতে হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র এবং করমজল সিলেক্ট করি। মংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২ কিঃ মিঃ দূরে। সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া টহল ফাঁড়ির পাশেই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। এর সামনের খালটি কুমিরের অভয়ারণ্য, প্রায়ই লোনা পানির কুমিরকে রোদ পোহাতে দেখা যায় এই খালের চরে। তবে কুমির দেখার ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। তাই আমরা দেখতে পাইনি।এখানে হরিণের দেখা পেয়েছি। এখানকার ছোট ছোট খালগুলোতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙ্গা-সহ নানান জাতের পাখি। হাড়বাড়িয়া খালের পাড়ে দেখা যাবে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের সোনালী নাম-ফলক। এর পরে একটু সামনে এগোলেই বন কার্যালয়। এরপরে ছোট খালের উপরে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমশ বেড়েছে। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে একটু সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের মাঝে গোলপাতার ছাউনি সমেত একটি বিশ্রামাগার। ঘরটির চারপাশে বসার জন্য বেঞ্চ পাতা। পুকুরের পাড় থেকে কাঠের তৈরি সেতু গিয়ে ঠেকেছে ঘরটিতে।পুকুরের দুই পাশ থেকে সামনে চলে গেছে ইট বিছানো পথ। অল্প দূরত্বের দুটি পথই শেষ হয়েছে কাঠের তৈরি হাঁটাপথে। যে কোনও একদিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলে অন্য-প্রান্তে এসে শেষ হবে এই পথ। তবে হাতের ডান দিকের ইট বিছানো পথের শেষে রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি জঙ্গল পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। কাঠের তৈরি এই টাওয়ার উঠে উপর থেকে জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তবে বেশ পুরোনো অবকাঠামো বিধায় এটাতে ওঠা একটু ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। হাড়বাড়িয়ার জায়গাটিতে বাঘের আনাগোনা আছে।যদিও আমরা বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছি। হাড়বাড়িয়ার পূর্ব প্রান্তে বেশ খানিকটা জল পথ ধরে এগিয়ে ছিলাম বনের সৌন্দর্য দেখতে।এবার করমজল।

দেখা হলো না করমজল। আজ এখানে বনের বড় কত্তা আসবে। তাই জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। সুন্দর বনের এই অঞ্চলটি তিন মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। মাঝি আমাদের এই তথ্য গোপন করেছে।সে যতটুকু দেখিয়েছে সেটা হয়তো ব্যাক্তিগত পরিচয়ের কারণে। অবশেষে তাড়াহুড়ো করে পদ্মা সেতু দেখার প্রয়াসে মোংলা ত্যাগ করি। বিকালে ৫ঃ ৩০ মিনিটে পদ্মা সেতু দেখার জন্য মাওয়াতে যাত্রা বিরতি দেই। নৌকায় বসে পদ্মায় সূর্যাস্ত আর সেতু দুটোই মুগ্ধ করেছে। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”আমার টাকায় আমার সেতু” এই শ্লোগানে ২৫ জুন ২০২২ সালে সেতুর উদ্ভোদন হয়।এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে।সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি (৩.৮২ মাইল) এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। সন্ধ্যার পর ইলিশায় ক্ষুধা নিবারণ হয়। রাত তখন ৯ঃ৩০। ঢাকার যাত্রা বাড়িতে নামি। ক্লান্ত শরীরে পেট্রোল শেষ। বাড়ির উদ্দেশ্যে মন ছুটে চলে কিন্তু দেহ চলে না। তাই আবার ও ঢাকায় ইট-পাথরের চারদেয়ালের ঘরে রাত কাটাই। ১১ জুলাই, ২০২২ খ্রিঃ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত দিন গুলো ছিল খুব রোমাঞ্চকর ও আনন্দময়। সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে বাস ভ্রমণ শুরু হয়।

লেখক : বিপ্লব আচার্য।

Advertisement