আব্বার শেষ যাত্রা…

সাজু  আহমদ :আব্বার টুপিটা আগের জায়গায় ই আছে, আছে উনার নামাজের জায়নামাজ, তসবিহ কুরআন শরীফ শুধু নেই তিনি ।

আব্বার ৫০ বছরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটা মিস করছে আব্বাকে. বাজারের শত শত মানুষ এলাকার প্রবীণ মুরব্বি হিসাবে কুশল বিনিময় করে যেতেন দোকানে এসে,তারা ও পাবেন না আব্বাকে! তিনি মালিকের ডাকে চলে গেছেন গত ৩০ ডিসেম্বর।

আমাদের তিন ভাই বোনের চোখের সামনে ঘুমিয়ে গেলেন শিশুর মতো. মৃত্যু এত সহজ হতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না ।

তার জীবনটা ও ছিল বড় সহজ সরল. একটি দোকান, বাসার একটি রুম আর গরিব মানুষের উপকার করে কাটিয়ে দিলেন জীবনের ৮০টি বছর ।

 সাথে ছিল রাজনগর এর উন্নয়নের স্বপ্ন বছর ছিলেন রাজনগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি, নিজ হাতে করেছেন মুহাম্মদী মাদ্রাসা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন রাজনগর সরকারি ডিগ্রী কলেজ, রাজনগর ডি এস সিনিয়র মাদ্রাসা ও রাজনগর আইডিএল স্কুল এর. সভাপতি ছিলেন রাজনগর বাজার কমিটি ও ঈদগাহ কমিটির।

বাসার পাশের মসজিদের মোতওয়াল্লী ছিলেন মারা যাওার আগে পর্যন্ত ।

কিন্তূ আমাদের বঞ্চিত করে যাননি কিছু থেকে. স্কুলে থাকতে আব্বার হাত ধরে বন্ধুর বাসায় পড়তে যাওয়ার কথা এখনো মনে আছে

আব্বার লাশটা যখন কবরে নামালাম তখন মনে হলো আমাদের মরণটা কি রকম হবে 

এভাবে কি শত মানুষ সাক্ষী দিবে আমরা ভালো মানুষ ছিলাম !

আমাদের বাসায় ছিল গরিব মানুষের লাইন সবসময়. মানুষ লাইন ধরে আমাদের বাসায় আসতো. কারো মেয়ের বিয়ের জন্য লেপ থোশোক, কারো হালের গরু নেই, কারো ঘর দরকার কিংবা কারো মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য দরকার,কারো দরকার কাফনের কাপড় কিংবা পরার জন্য এক টুকরো কাপড় ।

আমার চাচার জাকাতের টাকা তো বিলিয়ে দিতেনই, আমাদের দোকানের ইনকাম থেকে ও বিলিয়ে দিতেন অকাতরে ।

দানে কোন হিসাব করতে দেখিনি আব্বাকে, আমার আব্বা চাচাদের একটাই ইচ্ছা দেখেছি কিভাবে একজনকে সাহায্য করলে পুরো পরিবারকে বাঁচে সেই চেষ্টা থাকতো সবসময় আমার ছোট চাচা আর আমার আব্বা ছিলেন মানিকজোড়! সব সিদ্ধান্ত নিতেন এক সাথে.. মারা গেলেন একই তারিখে! দু বছর আগে আর পরে । 

যারা মা বাবা দুজন হারিয়ে এতিম. তাদের কষ্ট শুধু এতিমরাই বুঝে! মা ও বাবা যে কত বড় নেয়ামত ও সম্পদ ছিলেন জীবনে, তা না হারালে বুঝা যায় না!

 আর কেউ ফোন করলে বলবে না,বাবা সব সময় মানুষের উপকার করো আর আল্লাহর পথে থাকো, জীবনে আটকাবে না!আর দোয়া নেয়ার মানুষ রইলো না জীবনে।

আর দেশে ফোন করলে ছোট ভাই বলবে না- আব্বা ভালো আছেন কিংবা আব্বাকে নিয়ে অ্যাপোলো তে যাচ্ছি চেক আপ করতে ।

বিলেতে আসার পর মনে হলো–বাবা মা আর চাচাদের আদর্শ ধরে রাখাই এখন জীবনের বড় চ্যালেঞ্জ!

আল্লাহ তুমি তাদের কবরে, হাশরে, ফুলছিরাতে ভালো রাখো..

আল্লাহ তাদের সকল গোনাহ তুমি মাফ করে দাও 

রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা হিয়ানি ছাগিরা ।

সাজু আহমদ (লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য)

 

Advertisement