চীন থেকে বলছি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: চীনের কুনমিং শহরে চলছে ‘বাংলাদেশ-চীন ইয়ুথ ক্যাম্প ২০১৮’। বাংলাদেশ-চীন শিক্ষা-সংস্কৃতি বিনিময় প্রকল্পের আওতায় এই ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের বন্ধু কামরুন্নাহার মৌসুমী ওই ক্যাম্পে অংশ নিচ্ছেন। কুনমিং (চীন) থেকে তিনি জানাচ্ছেন সেই গল্প

এই লেখা যখন লিখছি, তখন আমি আছি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৯০০ মিটার ওপরে চীনের ইউনান প্রদেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী কুনমিংয়ে।

বাংলাদেশ-চীন শিক্ষা-সংস্কৃতি বিনিময় প্রকল্পের আওতায় ‘বাংলাদেশ-চীন ইয়ুথ ক্যাম্প ২০১৮’-তে অংশ নিতে এসেছি কুনমিং শহরে। দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ইয়ুথ ক্যাম্প। এবারের ক্যাম্পে অংশ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী। এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক চীনা দূতাবাস, আয়োজক চীনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় এবং সহ-আয়োজক কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও শান্ত মারিয়াম কনফুসিয়াস ক্লাসরুম।

আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ভাইভা দিয়েছিলাম। এর মধ্য থেকে ৪৫ জনকে নির্বাচন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের মোট ৬০০ শিক্ষার্থী ৪ বছরে পর্যায়ক্রমে এই ইয়ুথ ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের ঢাকার চীনা দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকৃত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুজন প্রতিনিধি ভ্রমণ সামগ্রী গ্রহণ করেন। আমি ছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের দুজন প্রতিনিধির একজন। সেদিন থেকে সময় গণনা শুরু, কবে আসব চির বসন্তের নগরী কুনমিং শহরে।

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর চীনের সময় সন্ধ্যা ৭টায় এসে পৌঁছেছি কুনমিং শহরে। তখনো সন্ধ্যা নামেনি। কুনমিংয়ের প্রাকৃতিক রূপ অপূর্ব সুন্দর।

৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে আমরা ইউনান ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ করেছি। তখন দেশে বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণের কথা মনে পড়েছে খুব। বৃক্ষরোপণের আগে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল ধন ধান্য পুষ্প ভরা গানটি গেয়েছি।

এখানকার যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে অদ্ভুত লেগেছে তা হলো দিনের আলোতে নৈশভোজ। এখানে সন্ধ্যা নামে ৭টা ৩০ মিনিটে। অথচ এরা রাতের খাবার খায় বেলা ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে। বিকেল ৪টার পর এখানে রোদের তাপ বেশি হয়। একদিকে বাইরে ভরপুর রোদ, অন্যদিকে সবাই রাতের খাবার খাচ্ছে।

আমরা আছি ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে। চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছে ইউনান শহরে। তাই এই শহরকে বলা হয় ‘ইউনিভার্সিটি টাউন’।

এখানে এসে পেয়েছি চীন ও বাংলাদেশের অনেক বন্ধু। ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরা ইয়ুথ ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক। প্রথম দিনেই এদের সঙ্গে বেশ বন্ধুত্ব জমে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলকে ৫টি দলে ভাগে করা হয়েছে। আমি একটি দলের দলনেতা।

এমন একটি সময়ে চীনে এসেছি, যখন আমার প্রাণের সংগঠন বন্ধুসভায় সাংস্কৃতিক সপ্তাহ চলছে। এখানে আমি একাই বন্ধুসভার, তবে বন্ধুসভার ভবিষ্যৎ অনেক বন্ধু পেয়েছি। আমাদের ক্যাম্পের সদস্য জান্নাতুল তাজরিয়া, আল আমিন, সাদিয়া শারমিন, ওয়াংখাই, রিমন, সাজ্জাদ, জয় বণিক, সোহান, ওয়াকসা প্রত্যেকে দেশে ফিরে বন্ধুসভায় যুক্ত হতে আগ্রহী।

১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকব চীনে। এখনো অনেক কিছু দেখা ও জানা বাকি। এ দুই সপ্তাহে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হবে। পরিদর্শন করব কুনমিংয়ের কয়েকটি গ্রাম, স্টোন ফরেস্ট, ইউনিয়ন ব্রাদার টেকনোলজি কো. লিমিটেড, সিলিন ইউনেসকো গ্লোবাল জিও পার্ক, চি ওয়ান সুঁই প্রাচীন নগরসহ বিভিন্ন স্থান। এ ছাড়া বিভিন্ন সেমিনার, চীনা নাচ, চীনা সংগীত, খেলা প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করব। ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পারস্পরিক ভাষা ও সংস্কৃতির গল্প বিনিময় হবে।

চীনারা খুব স্বাভাবিক জীবনযাপন করে, তবে তাদের জীবন যাপনের কৌশল বেশ উন্নতমানের। তাদের কাছ থেকে যে জিনিসটি শেখা দরকার তা হলো নিয়মানুবর্তিতা। যেকোনো কাজ তারা খুব মনোযোগ সহকারে নিয়ম মেনে করে। আশা করি কুনমিংয়ের দিনগুলোতে অনেক কিছু শিখব এবং অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ করে দেশে ফিরব।

Advertisement