ছড়িয়ে পড়ুক গারো সুর

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: গানের প্রতি ভালোবাসা ক্যানি ডেভিড রেমার। সেই ভালোবাসা থেকেই জড়িয়েছেন সাক্রামেন্ট ব্যান্ডের সঙ্গে। সাক্রামেন্ট ব্যান্ড একটু আলাদা। এর সঙ্গে যুক্ত সবাই গারো সম্প্রদায়ের মানুষ। রেমার এই ব্যান্ডের গিটারিস্ট। মূলত রক ধাঁচের গান করলেও নিজের শিকড়ের প্রতি একটা টান অনুভব করতেন প্রতিনিয়ত। নিজের সম্প্রদায়ের গান নিয়ে তাঁর ভাবনা ছিল শৈশব থেকেই। সমৃদ্ধ এই ধারা চর্চার অভাবে ঠিকমতো আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে না, এ ভাবনাটা সব সময় তাড়া করত তাঁকে। নিজের ব্যান্ডের গানগুলোর সঙ্গে ফিউশন করে গারো ভাষার গানকে তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন রূপে নিয়ে আসার একটা চেষ্টা তাই শুরু থেকেই করছিলেন।

গান নিয়ে কাজ করতে করতেই খোঁজ পেলেন গারো সম্প্রদায়ের আরও কয়েকটি ব্যান্ডের। একটা তাগিদ অনুভব করলেন মান্দি ভাষার (গারো সম্প্রদায়ের কথ্য ভাষা) গানগুলোকে আরও ব্যাপকভাবে প্রকাশের। কথা বললেন সবার সঙ্গে। গড়ে উঠল আচিক ব্যান্ড কমিউনিটি বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। যাত্রাটা খুব যে একটা সহজ ছিল তা কিন্তু নয়। অনেক ব্যান্ড প্রথমে রাজিই হয়নি। তাদের কথা ছিল, নিজেরা নিজেরা গান করছি এই তো ঢের, এত মাতামাতির কী দরকার। এসব দেখে মনে বেশ কষ্টও পেয়েছিলেন ডেভিড রেমা। কিন্তু দমে যাননি। ভেঙেও পড়েননি। ভাবনার শুরুটা একা হলেও কাজে নেমে সঙ্গীর অভাব হয়নি তাঁর। রেরে ব্যান্ডের ওয়ারী তাদের একজন যে সব সময় সাহস জুগিয়ে গেছেন। কাজ করেছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

তরুণ শিল্পীরা এভাবেই মঞ্চ মাতান গারো সুরেশুরুটা ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি। আচিক শব্দের অর্থ হলো গারো। বাংলাদেশের আচিক ফোক, রক ও মেটাল ব্যান্ডগুলোকে একত্র করা এবং তাদের গানগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ করছে ভিন্নধারার এই সংগঠন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবছর একটি কনসার্টের আয়োজন করছে। রক ও ফোন নামের এই আয়োজনটির প্রথম দুই বছর আয়োজন করার পর পরের বছর নানা জটিলতায় আর আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এক বছরের বিরতি শেষে এ বছর আবারও আরও বড় পরিসরে কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের কনসার্টের ভেন্যু ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়াম।

তরুণ শিল্পীরা এভাবেই মঞ্চ মাতান গারো সুরেআয়োজনে গান পরিবেশন করেছে ১১টি গারো ব্যান্ড। পাশাপাশি ইন্দালো ও দুর্গ নামের দুটি অতিথি ব্যান্ডও এসেছিল আকর্ষণ বাড়াতে। তিনটি কনসার্টই করতে হয়েছে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে। অংশগ্রহণকারী ব্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কিছু কিছু টাকা নিয়েছেন আয়োজকেরা। সর্বশেষ আয়োজনটির সাড়া পড়েছে বেশ। গত ১৩ জুলাইয়ের অনুষ্ঠানের রেশ রয়ে গেছে এখনো। ‘গারো সম্প্রদায়ের অনেক তরুণের কাছেই নিজের সংস্কৃতির গান এখনো অচেনা। এই আয়োজনের কারণে তারা নিজেদের সংস্কৃতির সমৃদ্ধি কতখানি এটা বুঝতে পারবে। নিজের সংস্কৃতি জিইয়ে রাখতে আগ্রহী হবে।’ বলছিলেন আচিক ব্যান্ড কমিউনিটি বাংলাদেশের সভাপতি ক্যানি ডেভিড রেমা।

তরুণ শিল্পীরা এভাবেই মঞ্চ মাতান গারো সুরেকোড ব্যান্ডের ভোকাল ম্যাথিউজ চিরান জানালেন তাদের এক হওয়ার কারণ, ‘এই কমিউনিটিতে যুক্ত হওয়ার পেছনে একটাই কারণ, নিজের সম্পদ দিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করা। মান্দি ভাষায় গারো সম্প্রদায়ের অনেক গান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যেহেতু মান্দি ভাষার কোনো বর্ণমালা নেই, মুখে মুখে প্রচলিত গানগুলো সংরক্ষণের এর চেয়ে ভালো কোনো পথ আপাতত নেই।’

শুধু গান সংরক্ষণ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজই তারা কাঁধে তুলে নেননি। নিজের সংস্কৃতির বাইরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্যান্য সম্প্রদায়ের ব্যান্ডগুলোকেও যুক্ত করে একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ব্যান্ড কমিউনিটি গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশের বাইরেও তাঁরা কাজ করে চলেছেন। ভারতের মেঘালয়ে নামকরা কিছু গারো ব্যান্ডের সঙ্গেও তাঁদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। সংগঠনের ইচ্ছা এ বছর তাদের নিয়ে এসে বড় একটি আয়োজন করার।

আচিক ব্যান্ড কমিউনিটির সদস্যদের সঙ্গে জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীতশিল্পী জন কবির (মাঝে দাঁড়ানো)আচিক ব্যান্ড কমিউনিটি বাংলাদেশের সঙ্গে এখন অবধি ১৪টি ব্যান্ড যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্রেমলিন নামে একটি ব্যান্ড আছে, যা মেয়েদের নিয়ে গঠিত। জাগরিং, র‍্যা থ অফ ক্রোনাস, ক্রেমলিন, তান্ত্রিক, ক্রিটিকলিস্ট, বিফোরএস, দ্য কোড, অ্যালায়েন্স, রে রে, জুমাং, সাক্রামেন্ট, পাড়ড়লী গেটস, আইএও এবং থার্টি ফার্স্ট সেকেন্ড। সামনের কয়েক বছরের মধ্যে ফোক ফেস্টিভ্যালের মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগীত নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক আয়োজন করার লক্ষ্য নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে সংগঠনটি। গারো গান নিয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতেই তাদের এত আয়োজন।

Advertisement