:ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী:
দেশে গেলে প্রায়ই কিছু না কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হয়। মাঝে মাঝে এই অভিজ্ঞতা গুলো হয় খুব পীড়া দায়ক।
এই অভিজ্ঞতা শুরু হয় হিথরো এয়ারপোর্ট থেকে। বিমানের বোর্ডিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে খালি ডেস্কের অপেক্ষা করছি, দেখা গেলো ডেস্ক খালি হওয়ার সাথে সাথে পেছন থেকে একজন লাইন ভেঙে চলে গেলেন খালি ডেস্কে।
কিছু বলার নাই, কারণ বিমানের কর্মকর্তাদের তাদের ভালো জানাশোনা। ঐ লোকটি সারাজীবন ইউকেতে লাইন মানলেও বিমানের লাইন ভাঙার জন্য প্রয়োজনে দেখা যায় ১০ টি ফোনকল করবেন, একবার ও ভাববেননা তার পেছনে লাইনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির কষ্টের কথা।
বিষয়টি এরকম লাইন ভেঙে যদি উনি না যেতে পারেন তাহলে উনার পুরুষত্ব প্রকাশ পাবে কি করে।
বিমানের ভিতরের কথা না হয় বাদই দিলাম। সিলেট এয়ারপোর্টে নেমে এক বিশাল অবস্থা। সমস্ত রাস্তা এক ভদ্রলোকের সাথে গেলাম,এয়ারপোর্টে নেমে যখন ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি তখন দেখি ঐ ভদ্রলোক কিছু না বলে হুড়া হুড়ি দিয়ে আমার সামনে চলে গেলেন। শুধু যাবার সময় হাসি মুখে আমার কাছে লাইনে এসে বললেন চলে যাচ্ছি, আপনাদের অনেক দেরি হবে। বিমান বন্দরের পুলিশ অফিসার নাকি উনার খুব কাছের তাই উনাকে আগে আগে সীল দিয়ে বের করে দিবে।
ভদ্রলোক কি যে খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি শুধু উনার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। উনার দিল্লি জয়ের উল্লাস দেখে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
দেশে গেলেই আমার বোন আমাকে নিতে আসেন। প্রতিবারই উনার অভিযোগ আমি নাকি দেরিতে বের হই। এবার ও উনার অভিযোগ সবাই বাহির হবার পর তুই আসলি।
প্রতিবারের মতো আমার সমান উত্তর মহিলা, বাচ্চা, বয়স্ক লোক সবাইকে লাইনে রেখে পেছনে ফেলে বাহির হতে খারাপ লাগে।
আবার প্রায়ই বিমানবন্দরে ভিআইপি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। বিমানবন্দর একটা নিরাপদ জায়গা কিন্তু প্রতিবারই দেশে গেলে দেখা যায় ব্যনার ফেস্টুন আর গাড়ির বহর নিয়ে লোকে লোকারণ্য। কারণ ভিআইপি বরন।
তাদের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে অনেক বেগ পোহাতে হয়। আমার একমাত্র বোনকে এয়ারপোর্টে আসতে অনেক কষ্ট পেতে হলেও, ঐ ভিআইপিদের পঙ্গুপালরা কিভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনী বেদ করে ভিতরে ঢুকেন একমাত্ৰ আল্লাহ জানেন।
আরেকটি কথা আপনি ক্ষমতাধর হলে বিমানবন্দরের ভিতরের অতি স্পর্শকাতর এলাকায় ও প্রবেশ করতে পারেন। এটা শুধু সিলেট নয় ঢাকাতেও দেখেছি। আর আমার মতো সাধারণ নাগরিক হলে এয়ারপোর্টার বাহিরের লোহার গেইটের ধরে কাছে ও যেতে পারবেননা। বাংলাদেশের অনেক অভিধান খুঁজেও ঐ তথাকথিত ভিআইপির সংজ্ঞা আজ ও পাইনি।
শুধুমাত্ৰ সিলেট এয়ারপোর্টে যে পরিমান ভিআইপিদের আগমন হয় আমার মনে হয় পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এতো পরিমান ভিআইপি আমদানি হয় কিনা সন্দেহ। সেদিক থেকে আমাদের পুণ্য ভূমি সিলেট সত্যি ভাগ্যবান। তবে ভুক্তভোগীদের কথা সদয় বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ভিআইপিদের সংজ্ঞা নির্ধারণের।
এখানে সামান্য কিছু উদাহরণ দিলাম এরকম হাজারো উদাহরণ আমরা প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করি। ব্রিটেনে যে লোকটি আজীবন আইনমেনে চলে তার মধ্যে দেখা যায় আইন ভাঙার প্রবণতা, যখনি সে বাংলাদেশের সংস্পর্শে আসে। আসলে আমাদের সমস্যা আমাদের মানসিকতা।