ধান মাড়াই এবং স্মৃতিগুলি

।। মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম রাজু ।।

চৈত্র এবং বৈশাখ আসলেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে। মনের আয়নায় উদয় হয় ঝাঁকেঝাঁক স্মৃতি। আমাদের এলাকায় দেশি-বিদেশি নানান প্রজাতির ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে এক প্রকার ধান আছে, যেটি একদিকে কিছুটা খড়া সহিষ্ণ অন্যদিকে অন্যান্য ধানের চেয়ে কম দিনে চলে আসে। আর লাগানো হয় তুলনামূলক উঁচু জমি যেখানে পানি টিকে না এবং বিল বাদালের চরা এসব স্থানে,যেটা তলিয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ধানটির নাম হচ্ছে বোরো। চৈত্র মাসের দ্বিতীয়ভাগে পাকতে শুরু করে। সেজন্যে তাকে নিদান বা অভাবের বন্ধু বলা হয়।

ধানটি পাকতে শুরু করার সাথে সাথে গৃহস্থ্যরা আনন্দের সাথে কাঁটার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অন্যদিকে প্রথম প্রথম মাড়াই করার কাজ। সেটাও মহা আনন্দের। আর তা কিন্তু আজকের মত যন্ত্র বা মেশিন দ্বারা নয়। নিচে তেরপাল বিছিয়েও নয়। বাঁশের বেত দিয়ে হাতে বানানো স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে ধারী বা ডাম, কয়েকটি বিছানো হত, তার উপর গরু-মহিষ দিয়ে মাড়াই বা মলনের কাজ করা হত। বৈশাখে যেদিকে চোখ যেত এরকম মাড়াই দেখা যেত। দিন হোক আর রাত হোক, যার যখন সুবিধা তখন মাড়াই শুরু করতো।হাওড়ের মাঠ কিংবা গুপাটে, খলা হোক আর বাড়ির উঠান, কম বেশি সবখানেই ধান মাড়াইয়ের চক্কর দিতে দেখা যেত। ছোট বড় অনেককেই গরুর সাথে সাথে চক্কর দিত। নিজেও করেছি এই কাজ।

তখনকার দিনে মাড়াইয়ের কাজ করলে অথবা পাশদিয়ে হেঁটে গেলে ধানের সুগন্ধ নাকে অনুভূত হত। পাশাপাশি মাড়াইয়ের চক্করে একে অপরকে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করা, গরু-মহিষ তাড়ানো, হৈ হুল্লুর যেন বৈশাখের আনন্দটা বাড়িয়ে দিত।

চৈত্র বৈশাখ ভাদ্র কিংবা অগ্রহায়ণ
গরুর মাড়াই চোখে পড়তো সর্বক্ষণ।

দিন বদলাতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে। যার ছোঁয়া কৃষিতেও লেগেছে। মাড়াই করার মেশিন আবিস্কার হয়েছে বেশ আগেই। অন্যদিকে মানুষের রুচিও বদলেছে। সময়ে সাথে তাল মিলিয়ে মানুষও হয়ে পড়েছে আধুনিক ও যান্ত্রীক। এখন আর কেউ বাঁশের বেত তুলে না, ধারীও বানায় না। তিরপাল বিছিয়ে মেশিন লাগিয়ে দেয়।

হাওড়ের পর হাওড় গরুর মাড়াই চোখে পড়ে না এখন আর। আধুনিক যন্ত্রের কাছে হেরে গিয়ে সনাতনি গরুর মাড়াইয়ে চিত্রের ঠাই হয়েছে বাস্তবে দেখা মানুষের মনের মণিকোটা। কোনো জাদুঘর কিংবা মোবাইলের মেমোরীতে।

লেখক : সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী

Advertisement