পাখির বাড়ি সাতছড়ি উদ্যান

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) ::  পাখির বাড়ি হবিগঞ্জের সাতছড়ি উদ্যান। ২২০ প্রজাতি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত উদ্যানটি। রয়েছে দুই শ’র অধিক প্রজাতির বৃক্ষ। ডালে ডালে ডাকতে থাকে পাখিরা। তাতে মুগ্ধ হয় জাতীয় উদ্যানে আসা পর্যটকরা।

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর ও চুনারুঘাট এই দুই উপজেলার সীমান্ত। সেখানে রঘুনন্দন পাহাড়। পাহাড়ের ছয় হাজার ২০৫ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমির অভ্যন্তরে ২৪৩ হেক্টর বনভূমি। এই বনভূমি নিয়েই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটি। ২০০৫ সালে উদ্যানটি গড়ে ওঠে। নিসর্গ নামক এনজিও বনবিভাগের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করে আসছে সাতছড়ি উদ্যানের।

পাহাড়ি সাতটি ছড়া এই বনভূমির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে। এ কারণে উদ্যানের নামকরণ হয়েছে সাতছড়ি। বন্য কুকুর, কালো ভাল্লুক, চিতা বিড়াল এবং বনরুইসহ জীব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বনাঞ্চলটি পাখি প্রেমীদের স্বপ্নভূমি। ১৯৮৩ সালে এ উদ্যানে রোপণ করা পাঁচ হাজারেরও বেশি পামগাছ। এ ছাড়া সেগুন, গর্জন, চাপালিশসহ এ বনে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির ওষধি বৃক্ষ, লতাগুল্ম আর অর্কিড।

উদ্ভিদকে আকড়ে ধরে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে এ বনে বাস করছে বানর, হরিণ, অজগর, কিংকোবরার মতো বিষাক্ত সাপও। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়। চোখে পড়ে নয়নাভিরাম নানা রং এর প্রজাপতি। উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের সমন্বয়ে সাতছড়ি হয়ে ওঠেছে ভ্রমণ পিপাসুদের তৃপ্তির স্থান।

প্রাণীকূলের খাদ্য সরবরাহের জন্য বনবিভাগ গত অর্থবছরে বনের ভেতর ১৫ হেক্টর পশুখাদ্য উপযোগী ফল ফিডার ও মিশ্র বাগান তৈরি করেছে। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনের অপূর্ব সম্মিলন রয়েছে সাতছড়িতে। চলতি অর্থবছরে আরো ২০ হেক্টর পশুখাদ্য উপযোগী ফলবাগান করা হবে। সাতছড়ি বিট কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম সামসুদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছে। ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দদান ও শরীর চর্চার অংশ হিসেবে এখানে রয়েছে ট্রি অ্যাডভেঞ্চার।

বিশালাকৃতির বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ ঘন বনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাঠের খণ্ড পরিণত হয়েছে জীবাশ্মতে। অতি দুর্লভ প্রজাতির উল্লুকের ডাক এবং বনে বসবাসরত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারে পর্যটকরা। নিতে পারে প্রশিক্ষিত ইকো-ট্যুর গাইডের সহায়তা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে ডরমিটরি। দেশি বিদেশি পর্যটকদের জন্য এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশংসনীয়।

ঢাকার উত্তরা থেকে এসেছেন শাকিল আহম্মদ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনি। সাতছড়ির এক হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ শেষ করে বললেন, সাতছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তবে বনের ভেতর কিংবা আশপাশে কোনো কটেজ না থাকায় ইচ্ছের বিরুদ্ধেই ফিরতে হবে ঢাকায়। তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, চা বাগানবেষ্টিত সাতছড়িতে ভালো কোন টি স্টলও পাওয়া গেল না।

পশু পাখি ও বৃক্ষরাজির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশা দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৪২৫ টাকা। তারপরও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৪ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হোসেন এমনটিই জানিয়েছেন।

মাহমুদ হোসেন বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পাম প্রক্রিয়াকরণ কিংবা তেল উৎপাদন আমাদের দেশে আজও সম্ভব হয়নি। পাঁচ হাজারেরও বেশি পামগাছের ফলগুলো থেকে তেল উৎপাদন করা গেলে এ থেকে অনেক টাকা আয় করা যেত। তবে পামগাছের ফলগুলো পশুপাখির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া ওই গাছগুলোতে প্রাণিরা আবাস গড়তে পারছে।

Advertisement