ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ১. একবার এক সেমিনারে বসে আছি। ইংল্যান্ডের হাউস অব লর্ডসের স্পিকার এসেছেন বক্তব্য দিতে। নানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে। আমার পাশের আসনে বসা ছেলেটির সঙ্গে আলাপ হলো। নাম জিজ্ঞেস করার পর সে দেশ না জিজ্ঞেস করে আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, সেটা জিজ্ঞেস করল। আমি বলার পর তারটা জিজ্ঞেস করলাম। সে দেখি একটু ভাব নিয়ে বলল, ‘কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘বাংলাদেশে আমি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির আওতায় একটা কোর্স করেছি।’ সেই ছেলে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী কোর্স?’ আমি বললাম, ‘আইইএলটিএস!’
২. সৌদি আরবের এক ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর বলল, তার দেশের মানুষ বিশ্বাসই করবে না যে বাংলাদেশ থেকে এত ছেলেমেয়ে এ দেশে পড়তে আসে। কারণ, তাদের ধারণা, বাংলাদেশের সবাই দরিদ্র। আমি তাকে বললাম, ‘তুমি কি বিবাহিতা?’ সে ‘হ্যাঁ’সূচক মাথা নাড়ল। আমি বললাম, ‘তোমার স্বামীর কয়টা স্ত্রী?’ সে অবাক হয়ে বলল, ‘কেন, আমি একাই!’ আমি বললাম, ‘বাংলাদেশের কেউই এটা বিশ্বাস করবে না যে সৌদি আরবের কোনো পুরুষের মাত্র একটাই স্ত্রী থাকে। সবার ধারণা, ৮-১০টা করে থাকে!’
৩. গত বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আগের কথা। আর্জেন্টিনার এক ছেলে বলল, সে বাংলাদেশের নাম শোনেনি। কিঞ্চিৎ আহত হয়ে বললাম, ‘তুমি এই দেশে জামাকাপড় কি কখনো কোনো ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কেন না?’ সে বলল, ‘কেন?’ আমি বললাম, ‘এ দেশের ব্র্যান্ডের দোকানের অর্ধেকের বেশি জামাকাপড় “মেড ইন বাংলাদেশ”। ব্র্যান্ডের কিছু কেনার অভ্যাস থাকলে তো জানার কথা।’
৪. একবার এক ব্রিটিশ ছেলে বলল, তাদের পাঠ্যবইয়ে নাকি বিশ্বের বন্যাপ্রবণ দেশের উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের নাম বলা আছে। আমি তাকে বোঝালাম, বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যা হয় না; আর হলেও এটি দেশের ক্ষুদ্র কিছু অংশে হয়। কিন্তু সে ক্রমাগত উদ্ভট প্রশ্ন করে যাচ্ছে বন্যা নিয়ে। আমি না পেরে বললাম, ‘জানো, আমাদের দেশে “ব্রিটিশ” শব্দটাই একটা গালি!’ ছেলেটা বন্যা বাদ দিয়ে সোজা ‘কেন এটা গালি?’ এই প্রশ্নে চলে গেল।
৫. বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৩ মিলিয়ন শুনে ব্রিটিশ এক ছেলে আমাকে বলল, ‘সমস্যা কী তোমাদের, এত মানুষ কেন?’ আমি বললাম, ‘আমার দেশের মতো এমন রোমান্টিক আবহাওয়া তোমার দেশে হলে তোমাদের জনসংখ্যা ২০০ মিলিয়ন হতো কমপক্ষে!’
৬. একবার ভারতীয় এক ছাত্র খুব আফসোস করে বলছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা উন্নতি হচ্ছে না দেখে ভারতীয়রা চিন্তিত।’ আমি বললাম, ‘বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয়দের অন্য বিষয় নিয়ে চিন্তিত।’ বিষটা কী জানতে চাইলে বললাম, ‘এখনো এত মানুষ কেন খোলা স্থানে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়?’ তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পেলাম না।
৭. ইংল্যান্ড যখন বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে এল, তখন এক ব্রিটিশ ভদ্রলোকও এসেছিলেন। তখন তিনি ঢাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের মূত্রত্যাগ করার দৃশ্য দেখেছিলেন। তাই জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা নিয়ে কেউ কিছু বলে না কেন?’ এ প্রশ্নের আসলে কোনো জবাব নেই। তবুও বললাম, ‘আমিও প্রথম তোমাদের দেশে এসে মনে মনে ভাবতাম, এই যে ছেলেমেয়েরা জনসম্মুখে রোমান্স করে, কেউ কিছু বলে না কেন? তোমাদের কাছে এটা যেমন স্বাভাবিক, আমাদের কাছে ওটাই স্বাভাবিক।’