লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটিকে স্বাগতম অভিনন্দন

দেওয়ান ফয়সল

গত ২৭শে জানুয়ারী রোববার পূর্ব লন্ডনের ইমপ্রেশন ব্যাংকুয়েটিং হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যুক্তরাজ্যের সংবাদকর্মীদের একমাত্র সংগঠন “লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব” এর দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন।

দুটি প্যানেল এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। একটি হচ্ছে সৈয়দ নাহাস পাশার প্যানেল আর অন্যটি হচ্ছে এমদাদুল হক চৌধূরীর প্যানেল।

নির্বাচনের আগে এ দুটি.প্যানেলে ম্যানচেষ্টার, বার্মিংহাম সহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে গিয়ে সেখানকার সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করে প্রত্যেকেই নির্বাচনে তাদের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বিশ্লেষন করেছেন।

চেষ্টা করেছেন তাদের নিজেদের পক্ষে ভোটারদের মন আকৃষ্ট করতে, এই প্রচারে কেউ কোন কার্পন্যতা করেননি, একথা নির্দ্ধিধায় বলা যায়। যে কোন দেশে জাতীয় নির্বাচন এলে যে ভাবে প্রার্থীরা ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের প্রচার চালান, লিফলেট বিতরন করেন, ঠিক সে ভাবেই এবারের প্রেস ক্লাবের নির্বাচনও খুব জমাট ভাবে তারা করেছেন, এতে আমি খুবই আনন্দ পেয়েছি। আর যাই হোক অন্তত: আমাদের বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত সাংবাদিক সহকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা হয়েছে, একটা যোগাযোগ হয়েছে।

ভবিষ্যতেও কাজের ফাঁকে, অবসর মূহুর্তে সবাই এভাবে যোগাযোগ রাখবেন, আমার সহকর্মী সাংবাদিক ভাই বোনদের কাছে এটাই প্রত্যাশা থাকবে।
এই নির্বাচন খুবই আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবার মধ্যেই একটা প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে।

বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে সাংবাদিক ছাড়াও অনেকের সাথেই তাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনও এসেছেন নির্বাচন দেখতে। সাউথ ওয়েলস থেকে আমার সাথেও গিয়েছেন আমার বন্ধু অশোকা রেষ্টুরেন্টের একজন পার্টনার জনাব আব্দুল নূর ভাই।

এই নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখে তিনি খুবই আনন্দ উপভোগ করেছেন। আমার বিশ্বাস, মেহমান যারাই এসেছেন তারা সবাই প্রেস ক্লাবের শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল ভাবে, আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন উপভোগ করেছেন।
দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথমেই ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা স্বাগতম বক্তব্য রাখেন।

এরপর জেনারেল সেক্রেটারী মোহাম্মদ জুবায়ের তার রিপোর্ট পেশ করেন। এরপর ট্রেজারার পেশ করেন তার রিপোর্ট। ১টা ৩০ মি: থেকে আড়াইটা পর্য্যন্ত চলে দুপুরের খাবার। বেলা আড়াইটা থেকে ৬টা পর্য্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। ভোট গ্রহণকালে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি জনাব বজলুর রশিদ এমি বি ই।
প্রেস ক্লাবের এই নির্বাচন দু’টি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশার সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী মোহাম্মদ জুয়েরের পরিচালনায় প্রথম পর্বে ছিলো প্রেস ক্লাবের বিগত দু বছরের কার্য্যক্রম সবার সামনে তুলে ধরা এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্ব।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্লাবের সেক্রেটারী মোহাম্মদ জুবায়ের।
সভার শুরুতেই মোহাম্মদ জুবায়ের দু বছরের বিভিন্ন কার্য্যক্রম যেমন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নতুন অফিস উদ্বোধন।

অফিস উদ্বোধনের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, গত ১৬ই নভেম্বর শুক্রবার ২০১৮ সালে আমাদের বহু আকাঙ্খিত লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে অফিস উদ্বোধন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

ক্লাবের সকল সদস্যেরই দাবি ছিলো একটা অফিস করার, দীর্ঘ দিন পর তাদের এই প্রত্যাশা পুরণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত, দীর্ঘ ২৫ বছর পর আমরা পেয়েছি একটি স্থায়ী ঠিকানা।

তিনি আরও বলেন,কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্র পূর্ব লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী বাংলাটাউন সংলগ্ন প্রিন্সলেট স্ট্রীটে সন্ধ্যে সাড়ে ৫টায় ক্লাব সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা ও সাধারণ সম্পাদক আমি মোহাম্মদ জুবায়ের কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে ফিতা কাটার মাধ্যমে এর শুভ সূচনা হয়।

ক্লাবের সদস্যদের আকাঙ্খা পুরণ হয়। এছাড়াও অন্যান্য কার্য্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ফেইক নিউজ, ট্রু নিউজ শীর্ষক সেমিনার, স্বাধীনতা দিবসে ৫ প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা সংগঠককে সম্মামনা প্রদান, নর্থ ইংল্যান্ডে প্রথম মিডিয়া ট্রেনিং, বৈশাখী আড্ডা, বিমান এর সাথে কর্পোরেট চুক্তি (বিশেষ ডিসকাউন্ট সাধারণ ও জীবন সদস্যরা) সহ বিভিন্ন কার্য্যক্রম তুলে ধরেন তিনি। এরপর শুরু হয় পশ্নোত্তর পর্ব।
ফ্লোর থেকে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে মোহাম্মদ জুবায়ের খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে তাদের প্রশ্নের উত্তরগুলো দেন।

একজন সদস্য প্রশ্ন রেখেছেন ক্লাবের নামকরন নিয়ে। যেহেতু এই প্রেস ক্লাবে বিভিন্ন শহরের সাংবাদিকদের সমন্বয় ঘটেছে সুতরাং “লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব’ নাম পরিবর্তন করে এমন একটা নাম রাখা হোক যাতে বুঝা যাবে সারা বৃটেনের সাংবাদিকদের সম্মিলন কেন্দ্র এই প্রেস ক্লাব। এটা শুধু মাত্র লন্ডনের সাংবাদিকদের নয়। এই নামকরণের কারণে বাইরের সাংবাদিকরা কিছুটা মনক্ষুন্ন বলে আমার মনে হচ্ছে।

এই প্রশ্নের সাথে আমিও একমত। আমার মনে হয় এই নাম পরিবর্তন করে “ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব” নামকরন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে বর্তমানে নবনির্বাচিত কমিটি চিন্তাভাবনা করবেন বলে আশা রাখছি। এছাড়াও আর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। বিকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্য্যন্ত ছিলো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য এবং কবিতা আবুত্তি, গান ইত্যাদি। এই অনুষ্ঠ্ান পরিচালনা করেন জনাব মাহবুব রহমান। এতে লন্ডন সহ বাইরের শহর থেকে আসা ক্লাব সদস্যদের মধ্য থেকে শিল্পিরা ছাড়াও প্রেস ক্লাবের সদস্য জনাব তৌহিদ চৌধুরীর ছোট্ট দুটি মেয়ে তানিসা ও আনিসা গান পরিবেশন করে দর্শকদের প্রশংসা অর্জন করে। এছাড়াও গান পরিবেশন করেন প্রখ্যাত শিল্পি আলাউর রহমান ও শম্পা দেওয়ান। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, ৯৯ বছর বয়সের জনাব দবির চৌধুরীর কবিতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এই অনুষ্ঠান সবাই মিলে উপভোগ করেন।
বেলা ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় ভোট গ্রহণের পালা। লাইন বেধে ভোটাররা ভোট দিতে শুরু করেন। ভোট গ্রহণ শেষ হয় বিকাল ৬টায়। বিকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্য্যন্ত চলে রাতের খাবার। রাতের খাবারের ম্যানুতে ছিলো আখনি, সাদা ভাত, চিকেন কারী,কোফতা কারী, সাগ আলু আর সাথে ডিজার্ট ছিলো মোরব্বা। হল ভর্তি লোকে লোকারন্য হলেও খাবারের কোন ঘাটতি হয়নি। খাবার সার্ভিস হয়েছে খুবই সুন্দর ভাবে। সবাই মনের আনন্দে পেট ভরে খাবার খেয়ে প্রশংসাই করেছেন। যারা সার্ভিস করেছেন আমাদের পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে রেজাল্ট ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়া হয়। তখন মঞ্চে আসেন প্রিসাইডিং অফিসার বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ জনাব বজলুর রশিদ এম বি ই এবং তাঁর দুই সহযোগি আব্দুল আজিজ চৌধুরী ও ব্যারিষ্টার আনোয়ার বাবুল। তখন অনুষ্ঠানে উপস্থিত দুপক্ষের ভোটারদের মধ্যে ভীষণ উৎকন্ঠা লক্ষ্য করা যায়। জনাব বজলুর রশিদ এম বি ই নির্বাচন চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ভাবে তাকে সহযোগিতা করার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী উভয় পক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরপরই তিনি ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন। ফলাফলে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট পদে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী। তিনি ভোট পেয়েছেন মোট ১৬৩। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সাবেক প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা পেয়েছেন ১৫১ ভোট। অর্থাৎ ১২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন মো: এমদাদুল হক চৌধুরী। জেনারেল সেক্রেটারী পদে মোহাম্মদ জুবায়ের ১৯২ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আনিসুর রহমান পেয়েছেন ১১৩ ভোট। এছাড়াও অন্যান্য পদে যারা জয়ী হয়েছেন তারা হচ্ছেন সহ সভাপতি পদে বাংলা পোষ্ট পত্রিকার সম্পাদক তারেক চৌধুরী, এসিস্ট্যান্ট জে: সেক্রেটারী মো: মতিউর রহমান চৌধুরী, ট্রেজারার আবু সালেহ মোহাম্মদ মাসুম, কমিউনিকেশন সেক্রেটারী মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, ট্রেনিং এন্ড রিচার্স সেক্রেটারী ইব্রাহিম খলিল, ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি সেক্রেটারী সালেহ আহমদ, ইভেন্ট এন্ড ফ্যাসিলিটি সেক্রেটারী রেজাউল করিম মৃধা। এছাড়াও ৬ জন নির্বাহী সদস্য হলেন আব্দুল কাইয়ুম, ইমরান আহমেদ, পলি সুলতানা, রুপি আমিন, জে ইউ এম নজমুল হোসেন ও শাহনাজ সুলতানা।
নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণার পর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এমদাদুল হক চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং ক্লাবকে অগ্রগতির দিকে নিয়ে যেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশার বিগত দিনের কার্য্যকলাপের ভূয়সী প্রসংসা করেন এবং এবং সর্বক্ষেত্রে তাঁর এবং তাঁর সাথীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। উল্লেখ্য যে, উক্ত ক্লাবে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩১৮ জন।
প্রেস ক্লাবের সাথে আমরা যারা জড়িত আছি, আমি মনে করি আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। ক্ষমতা বদল হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আমরা দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছি। আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে যে, যারা আজ নির্বাচিত হয়েছেন তাদের উপর আমরা ক্লাবের গুরুদায়িত্ব অর্পন করেছি। ক্লাবকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা আন্তরিক ভাবে কাজ করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমি আরও আশা করবো, আমাদের সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের একে অন্যের সাথে যে একটা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে উঠেছে, ভবিষ্যতে তা আরও শক্তিশালী হবে এবং আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রেস ক্লাবকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিত ভাবে কাজ করে যাবার সুযোগ অবশ্যই আমাদের থাকবে।
সব শেষে নির্বাচনে বিজয়ী নতুন কমিটির প্রতি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে রইলো আন্তরিক অভিনন্দন।

Advertisement