সাজপোশাকে ২০১৯

নতুন বছরে কেমন হবে পোশাকের ধারা? সাজেই বা প্রাধান্য পাবে কি? জানিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও রূপবিশেষজ্ঞরা। লিখেছেন আতিফ আতাউর

প্রতিবছর ফ্যাশন দুনিয়ায় যোগ হয় অভিনব সব ভাবনা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নেই। পোশাক, সাজ, জীবনযাপন—সব কিছু মিলিয়েই খানিকটা ভিন্নতা দেখা যাবে ২০১৯ সালে।

নারীদের পোশাক

ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা জানালেন, ‘পোশাক মূলত দুই ধারায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আমরা একধরনের পোশাক পরি। আবার কোনো পার্টি, বিয়ে, গায়েহলুদ, জন্মদিনসহ নানা উত্সব-পার্বণে আলাদা রকমের পোশাক পরি। বাঙালি হিসেবে নারীদের সাজে শাড়ি এখন অনেকটাই উত্সবকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। নারীরা এখন সাধারণত শাড়ি পরে খুব কমই বাইরে বের হচ্ছে। তবে ফ্যাশন হাউসগুলো এ নিয়ে এখন খানিকটা তত্পর। শাড়ির ব্যবহার যাতে আরো একটু বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। এ জন্য শাড়ির ডিজাইনেও নতুন নতুন মোটিফ যুক্ত হচ্ছে। এই চেষ্টা সফল হলে এ বছর শাড়ির প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করি। এতে তাঁতশিল্পেরও উপকার হবে।’

দিন যত এগোচ্ছে, ব্যস্ততা তত ঘিরে ধরছে আমাদের। এ জন্য সময় বাঁচাতে পোশাকের প্রতি বেশ সচেতন হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। অল্প সময়ে পরা যায় এমন পোশাকের প্রতি আগ্রহ তাদের। এ বছরও এই ধারা থাকবে বলে জানালেন বিপ্লব। ‘সালোয়ার-কামিজে সব সময়ই বেশ মানিয়ে যান নারীরা। নতুন বছরে তাঁরা সালোয়ার-কামিজ থেকে বের হয়ে কুর্তি, শার্ট টাইপ টিউলিপ পোশাকের দিকে ঝুঁকবে। এই ঝোঁক বেশি দেখা যাবে শহরকেন্দ্রিক তরুণীদের। শহুরে তরুণীদের মধ্যে প্যান্ট, প্যান্ট কাট সালোয়ার পরার প্রবণতা বাড়বে।’

উত্সব-পার্বণ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লং ড্রেস, লেয়ার কাট, ঘেরওয়ালা গাউন টাইপ পোশাকের কদর দেখা যাবে নতুন বছরেও। তবে রাতারাতি কোনো ফ্যাশন বদলায় না বলে জানালেন বিপ্লব সাহা। তিনি বলেন, ‘ফ্যাশনে পরিবর্তন আনতে ১৫ থেকে ২০ বছর সময় পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এখন যে ধারা চলছে তা রাতারাতি বদলে যাবে না। আগের বছরের অনেক কিছুই নতুন বছরেও দেখা যাবে। তবে পোশাকের কাটে বা প্যাটার্ন কাটে খানিকটা পরিবর্তন হবে নতুন বছরে। এটা প্রতিনিয়তই হচ্ছে।’ ঈদ, পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুনসহ নানা উপলক্ষে পোশাকের কাটে পরিবর্তন আনেন ডিজাইনাররা। সেটাই বছরজুড়ে ব্যবহূত হয়। হালকা রঙের পাশাপাশি গাঢ় রঙের কাপড়ও এ বছর তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকবে। বিশেষ করে ঈদ, বিয়েসহ নানা উত্সবে উজ্জ্বল রঙের কদর বাড়বে। পোশাকের সিকোয়েন্সে গোল্ড প্রিন্ট ছিল আগের বছরও বেশ এগিয়ে। এ বছর সিলভার প্রিন্ট সেটাকে ছাপিয়ে যাবে বলে ডিজাইনাদের ধারণা। লোয়ারে স্কার্ট, প্লাজো, শর্ট প্যান্টের ব্যবহার বাড়বে নতুন বছরে। তবে নকশা ও কারুকাজে ভিন্নতা দেখা যাবে। লং কটির সঙ্গে শাড়িও থাকবে বেশ এগিয়ে।

পুরুষের পোশাক

ছেলেদের পোশাকে প্যাটার্নে বৈচিত্র্য দেখা যাবে বলে জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক। তাঁর মতে, ‘এখনকার তরুণরা অনেক ফ্যাশন সচেতন। নতুন বছরে ফ্যাশনেবল পোশাকের প্রতি ঝুঁকতে দেখা যাবে তাদের। বিশেষ করে যেসব পোশাকে প্যাটার্নে ভিন্নতা থাকবে। এ বছর পাঞ্জাবির প্যাটার্নে বড় পরিবর্তন আসবে। প্লেইন কাটের পাঞ্জাবি এখন কম পরা হচ্ছে। আগে স্ট্রেইট কাটের পাঞ্জাবির বেশ প্রচলন ছিল। এখন ভায়াস কার্ট করে পরা হচ্ছে। তিন-চারটা লেয়ার দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন রকম প্যাটার্ন দিয়ে পাঞ্জাবি পরার প্রবণতা দেখা যাবে। বিভিন্ন রকম প্রিন্টেট শার্ট, যেমন—ফ্লোরাল প্রিন্ট, টাইডাই, স্টোন ওয়াশ, কুলডাই শার্টের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। এগুলোই এখন পছন্দ করছে তরুণরা।’

পাজামার মতো প্যান্টের প্রতি তরুণদের কদর দেখা গেছে গত বছরে। নতুন বছরেও এই ধারাও বেশ বজায় থাকবে। পাঞ্জাবির সঙ্গে কায়দা করে স্কার্ফ পরা পছন্দ অনেকের। পাঞ্জাবির সঙ্গে কটিও চলবে বছরজুড়ে। ফ্যাশনে রেট্রো লুক মানে কিনা ষাট-সত্তর দশক ফিরে ফেরে আসবে।

 

কদর বাড়বে অনুষঙ্গের

জুতার ক্ষেত্রে পাম্প শু, স্লিপার, ব্যালেরিনায় আগ্রহ থাকবে নতুন বছরে। শাড়ির সঙ্গে উঁচু হিলের জুতা পরবেন নারীরা। তরুণরা বুট টাইপের জুতায় ঝুঁকবে। সঙ্গে আরামদায়ক কেডসও থাকবে। ঘড়ির প্রতি ফ্যাশনেবল তরুণ-তরুণীরা সব সময়ই সচেতন। তাদের নজর থাকবে এদিকটাতেও। চামড়ার ব্যাগের চেয়ে কাপড়ের ব্যাগের দিকে ঝোঁকার সম্ভাবনা নারীদের। নতুন মডেলের মোবাইলের প্রতিও ঝুঁকবে তরুণ-তরুণীরা। এখন সানগ্লাসের প্রতিও দারুণ ঝোঁক তরুণ-তরুণীদের।

Advertisement