:ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী:
ইউকে ভিজিট ভিসা বরাবরই একটি জটিল প্রক্রিয়া হিসাবে আমরা মনে করি। আর এই জটিলতার মূল কারণ হলো আমাদের না জানা।
আমরা অনেকেই না জেনে এবং না বুঝে আবেদন করি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তথ্যগত ভুল কিংবা সঠিক ভাবে আবেদন না করার ফলে আমাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়।
তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক সঠিক ভাবে আবেদন কি ভাবে করতে হয় অথবা ভিজিট ভিসা আবেদনের মূল শর্ত গুলো কি কি?
১. আবেদন কারীকে অবশ্যই ভ্রমণের কারণ এবং তার প্রমান থাকতে হবে, অর্থাৎ উনি কি জন্য ভ্রমণ করবেন, তার একটা মোটামোটি ধারণা ভিসা অফিসারকে দিতে হবে। যেমন ধরেন কেউ কোন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখার জন্য অথবা কোন বিশেষ অনুষ্টানে বিয়ে কিংবা অন্য কোন উপলক্ষ্যে ভ্রমনের উদ্দ্যেশ্য হলে, অবশ্যই আবেদন পত্রের সাথে প্রমাণাদি সংযুক্ত করা বাঞ্চনীয়। এতে ভিসা অফিসার খুব সহজে জানতে এবং বুঝতে পারবে আপনার ভ্রমণের উদ্দ্যেশ্য। এমনকি যদি শুধুমাত্র দেশ ভ্রমণের উদ্দ্যেশ্য ও যদি হয় সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে আপনার ভ্রমণের বিস্তারিত বিবরণ লিখে এফিডেভিট আকারে দেয়া যেতে পারে। যাতে আপনার ভ্রমণের উদ্দ্যেশ্য নিয়ে ভিসা অফিসারের একটা ভালো ধারণা থাকে।
২. ভ্রমণ খরচ: প্রস্তাবিত ভ্রমণের খরচ কে বহন করবে এবং ভ্রমণকালীন সময় আবেদনকারী কোথায় থাকবেন?
খরচ আবেদনকারী অথবা স্পনসর যে কেউ বহন করতে পারেন। আবেদনে বিষয়টি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে এবং এর স্বপক্ষে প্রমাণাদি দাখিল করতে হবে।ভ্রমণের খরচ যিনি বহন করবেন তাকে ব্যংক একাউন্টে শুধু টাকা দেখলে চলবে না, এই টাকার উৎস অবশ্যই দেখতে হবে । আয়ের বিপরীতে আয়ের উৎস এবং সেই সাথে আয়ের যাবতীয় কাগজ জমা দিতে হবে।
৩. ভ্রমণ শেষে ফেরত যাবার নিশ্চয়তা:
এই বিষয়টি একটু জটিল, দেখা গেলো আপনি সব কাগজ পত্র জমা দিয়েছেন তারপর ও ভিসা অফিসার আপনাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে যদি আপনি ভ্রমণ শেষে ফেরত যাবার পক্ষে যথেষ্ট প্রমান দিতে ব্যর্থ হন। ইংরেজিতে বলা হয় “ইনসেনটিভ”। আর এই বিষয়টি নির্ভর করে অনেক গুলো বিষয়ের উপর । তবে নিম্নে কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে:
(ক) পরিবার : বিবাহিত আবেদনকারী বিয়ের সার্টিফিকেট, ছেলে মেয়ে থাকলে তাদের জন্ম সনদ, ছেলে মেয়ে অথবা আবেদন কারীর উপর কেউ নির্ভর থাকলে তার প্রমাণাদি, তারা যদি পড়াশুনায় থাকে তাহলে তার প্রমাণাদি জমা দেয়া যেতে পারে।(খ) ফুলটাইম কাজে থাকলে অথবা ব্যবসার মধ্যে জড়িত থাকলে তার বিস্তারিত কাগজপত্র জমা দেয়া যেতে পারে।
(গ) জমি জমা : বসতভিটা, কৃষি অথবা স্থাবর – অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানার কাগজপত্র, ব্যংকে টাকা জমা থাকলে তার প্রমান পত্ৰ জমা দেয়া যেতে পারে। জমিজমার কাগজপত্র জমাদিলে অবশ্যই সেই সাথে জমিজমার ভেলুয়েশন সার্টিফিকেট জমা দেয়া প্রয়োজন।
(ঘ) সামাজিক সম্পর্ক: আবেদনকারী যদি কোন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকেন তাহলে তার প্রমান পত্র সংযুক্ত করতে পারেন। যেমন স্থানীয় কোন চ্যারিটি সংগঠন, স্কুল – কলেজ অথবা মসজিদ কমিটির সাথে যুক্ত থাকলে তার প্রমান দেয়া যেতে পারে ।
সংবিধিবদ্ব সতর্কীকরণ: কখনোই কোন জাল কাগজ জমা দেয়া যাবেনা।
ভিসা অফিসার বিভিন্ন পন্থায় কাগজ পরীক্ষা করতে পারেন, সুতরাং কোন জাল কাগজ জমা দিলে আর তা ভিসা অফিসারের গোচরে আসলে আপনি শুধু প্রত্যাখ্যাত হবেননা, আপনাকে আগামী ১০ বছরের জন্য ব্যান্ড করা হবে। তার মানে আগামী ১০ বছর আপনি যেকোন ধরণের আবেদন করলে আপনি সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হবেন।
সুতরাং কোন ভাবেই অবৈধ কাগজ জমা দেয়া যাবে না। আর জমা দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেননা।
আপিল: এপ্রিল ২০১৩ সাল পর্যন্ত ফ্যমিলি ভিজিট ভিসা আপিল করার অধিকার ছিল কিন্তু বর্তমানে আপিল করার কোন সুযোগ নাই।
শুধু আপিল নয় রিভিউ করার ও কোন সুযোগ নাই। তবে ভিসা রিফুয়েজের ক্ষেত্রে যে যে কারণে রিফুয়েজ হবে তার স্বপক্ষে কাগজ পত্ৰ দিয়ে নতুন ভাবে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন আবেদন যেকোন সময় করা যেতে পারে। অথবা ইম্মিগ্রাশনের উচ্চতর আদালত যা “আপার ট্রাইবুনাল” হিসাবে পরিচিত, সেখানে ভিসা অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্বে জুডিশিয়াল রিভিউ করা যেতে পারে। তবে এ রকম রিভিউয়ের সময়সীমা হলো রিফুইজের দিন থেকে ৯০ দিন।
এর ভিতর আবেদন অবশ্যই জমা দিতে হবে। আইনের আরো একটি বিধান হলো জুডিশিয়াল রিভিউ জমা দেয়ার অন্তত ১৫ দিন আগে হোম অফিসে দরখাস্ত করতে হবে যাকে বলে “প্রি-অ্যাকশন-প্রোটোকল” লেটার, সেখানে আপনি বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলবেন আপনি কেন সংক্ষুব্দ এবং আপনার বক্তব্যের সাথে অবশ্যই প্রমাণাদি জমা দিবেন। তবে আবেদন করার আগে নিকটস্থ একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে কথা বলে এবং পরামর্শ করে করা খুবই উত্তম।
লেখক: ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী, প্রিন্সিপাল সলিসিটার, কে সি সলিসিটর্স, লন্ডন, ইউকে.