কলার নাম ‘মেহের সাগর’

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: মেহেরপুরের মাটি কলা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন কলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছেমেহেরপুরের মাটি কলা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন কলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে

মেহেরপুরে কলা চাষ বাড়ছে। এখানকার মাটি কলা চাষের উপযোগী হওয়ায় দিন দিন কলা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুরে চাষ হওয়া একটি জাতের কলার নাম মেহেরপুরের নামানুসারে ‘মেহের সাগর’ কলা। রোগবালাই ও খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি, তাই মেহেরপুরের কৃষকরা নিয়মিত ফসল ছেড়ে কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। এ অঞ্চলে এখন কলা চাষ ও বিপণনের সাথে কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল।

মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, দারিয়াপুর, গৌরীনগর, পুরন্দরপুর, গোপালনগর, বাগোয়ান, আনন্দবাস, মহাজনপুর, গোপালপুর, কোমরপুর ও যতারপুর এবং মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর, আমদহ, চকশ্যামনগর, আশরাফপুর, নূরপুর, পিরোজপুর, টুঙ্গী, কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, বলিয়ারপুর, গহরপুর, কলাইডাঙ্গা, যুগিন্দা, রাজনগর, আমঝুপি ও চাঁদবিল গ্রামের মাঠে তিন ফসলি জমিগুলোয় এখন কলার ক্ষেত। ইদানীং গাংনী উপজেলার কিছু মাঠেও কলাচাষ শুরু হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, গত মৌসুমে জেলায় কলা চাষ হয়েছে দুই হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে। এ মৌসুমে দুই হাজার সাত শ’ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে।

কৃষকরা জানান, আশির দশক থেকেই মেহেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে কলার চাষ শুরু হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কলার দাম বেড়ে যাওয়ায় কলাচাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।

মহাজনপুর গ্রামের চাষি মুন্নাফ আলী জানান, এক বিঘা জমিতে কলা চাষে প্রথম বছর ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় প্রতি বছর চার শ’ থেকে সাড়ে চার শ’ কাঁদি কলা পাওয়া যায়, যা ক্ষেত থেকেই পাইকারি বিক্রি হয় লক্ষাধীক টাকায়।

কৃষি কর্মকর্তারা একই জমিতে বারবার কলা চাষের নেতিবাচক দিক নিয়ে কথা বলেছেন, একই জমিতে টানা দু-তিন বছরের বেশি একই ফসল চাষ করতে চাইলে পর্যাপ্ত জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। টানা ছয় বছরের বেশি চাষ করলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। এ কারণে মাঝে মাঝে অন্য ফসলও চাষ করা উচিত। ইতোমধ্যে অর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন অনেক কলা চাষি। মেহেরপুরের বিখ্যাত কলা মেহেরসাগর সহ দুধসর, সবরি, চাঁপা, ঠঠে, কাঁচকলার চাষ হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে এখানকার কলার চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন ৪০-৫০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়। মেহেরসাগর, দুধসর, সবরি, চাঁপা, চিনিচাঁপা, বাইশছড়ি ও ঠটেসহ বিভিন্ন ধরনের পাকা কলার চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষি বিভাগ রান্না করে খাওয়ার জন্য উন্নত জাতের কাঁচকলার চারা সরবরাহ ও চাষ করার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে।

মেহেরপুরের ইতিহাস রচয়িতা প্রবীন সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম জানান, ৭১ সালের বন্যায় ভারত থেকে ভৈরবনদে ভেসে আসে একটি জাতের কলাগাছ। মেহেরপুরের ভৈরব নদপাড়ে আটকে যাওয়া সেই কলাগাছ থেকে অনেক কলাগাছ হয়। এভাবেই গাছটি ছড়িয়ে পড়ে। ইসরাইল হোসেন নামের এক যুবক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রথম মেহেরসাগর কলাটি আবাদ করে। সেই থেকে মেহেরপুরে চাষ শুরু এবং কলাটির নাম হয়ে যায় মেহেরসাগর। কলাটি পাকলেও সবুজ এবং গাছটি সাধারণ কলা গাছের থেকে উচ্চতায় অর্ধেক। তবে কলাটি এখন কৃত্রিম পদ্ধতিতে হলুদ রং ধারণ করানো যায়।

সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কলা চাষি হাসেম আলী বলেন, পাঁচ বছর আগে তিনি দুই বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছিলেন। খরচবাদে ৬৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এরপর তিনি তিন বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেন। বর্তমানে তিনি বারো বিঘা জমিতে কলার চাষ করছেন। ধান, পাট চাষে লোকসান হয় কিন্তু কলা চাষে কোন লোকসান নেই বলে জানালেন তিনি। একই কথা বললেন গ্রামের বকুল, জুয়েল, সজলসহ আরো অনেকে।

টুঙ্গি গ্রামের কলা চাষি আব্দুর রশিদ জানান, পৌষ মাসে কলার চারা রোপণ করার উপযুক্ত সময়। কলা লাগানোর পর জমিতে সেচ দিতে হয়। মাটি ঝরঝরে হলে জমি কুপিয়ে দিতে হবে। গাছ একটু বড় হলে গাছের গোড়া থেকে বের হওয়া চারা কেটে দিতে হয়। কলার জমিতে ঘন ঘন সেচ দিতে হয়। মাঝে মাঝে সার দিতে হয়। প্রতিবিঘা জমিতে কলা চাষে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ভালোভাবে যত্ন নিলে বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কলা চাষে বিঘা প্রতি ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মো. অক্তারুজ্জামান জানান, মেহেরপুরের মাটিতে সোনা ফলে। এখানকার মাটি অত্যন্ত শক্তিশালী। এখানে যে কোন ফসলই চাষ করা যায়। একই জমিতে পর পর দুই থেকে তিন বারের বেশি কলা লাগানো উচিত না। এত জমির উর্বরা শক্তি কমে যায়। কয়েক বছর বাদে আবার ওই জমিতে কলা চাষ করা যায়।

Advertisement