বলিউড অভিনেত্রী কারিনা কাপুর যখন ‘জিরো ফিগার’ হয়েছিলেন তখন এসেছিলেন ইয়াসমিন করাচিওয়ালার কাছে। ইয়াসমিনের প্রথম তারকা প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন কারিনা। ইয়াসমিন করাচিওয়ালা ও জিনা ধাল্লার লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরেক বলিউড তারকা আলিয়া ভাট বলেছিলেন, তিনি ক্যাটরিনার মতো হতে চান। ইয়াসমিন যেন তাঁকে ক্যাটরিনার মতো করে দেন। ঢাকার বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৫০ নম্বর বাড়ির সাততলায় চালু হয়েছে ইয়াসমিন করাচিওয়ালার পিলাটিস স্টুডিও। নিজস্ব ফটোশুট শেষ করে দুপুরের খাবার খেলেন। তাঁর খাবারের তালিকায় ছিল সেদ্ধ সবজি, মুরগি, পনির ও কাঠবাদাম। কথা বলার শুরুতেই বলেন, ‘আমি যেখানেই যাই, নিজের খাবার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। বিশেষ করে বিমান ভ্রমণের সময় অন্য সময়ের চেয়ে বেশি খিদে পায়। আর অতিরিক্ত তেল-মসলার কোনো খাবার আমি খাই না।’
এরপর শুরু হলো তড়িৎগতির প্রশ্নোত্তর পর্ব।
অধুনা: এত বড় বড় তারকাকে সামলান কীভাবে? সময় মেলান কীভাবে?
ইয়াসমিন করাচিওয়ালা: এটি খুবই কঠিন বিষয়। তাঁদের প্রত্যেকের লক্ষ্য আলাদা থাকে। তাঁদের লক্ষ্য শুনে–বুঝে সেই মোতাবেক আমাকে পরিকল্পনা করতে হয়। তারকারা যাতে তাঁদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা ভীষণ পরিশ্রমের কাজ। একই সঙ্গে তাঁদের গ্ল্যামার যেন ঠিক থাকে, তা–ও ভাবনায় রাখতে হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই খুব ব্যস্ত। তাঁদের জন্য আলাদা করে সময় বের করতে হয়। একেক সিনেমার জন্য তাঁরা একেক রকম ফিটনেস চান। ইতিবাচক বিষয় হচ্ছে, তাঁরা আমার কথা মানেন। আমার কাছে তাঁরা ক্লায়েন্ট, বড় তারকা কি না সেটি মাথায় রাখি না। আমার স্টুডিওর ধরনই তাই, ব্যক্তিকে বুঝে, তাঁর জীবনযাপন বুঝে, তবেই তাঁকে ফিটনেস প্রশিক্ষণ দেওয়া। একই সঙ্গে আমি অনেক প্রশিক্ষক তৈরি করেছি, যাঁরা আমার নির্দেশমতো কাজ করেন। ওঁরা জানে, প্রশিক্ষক হিসেবে আমি বেশ কঠোর, কোনো অনিয়ম, অজুহাত মানি না। সে কারণে অসুবিধা হয় না।
অধুনা: কোনো অভিজ্ঞতার কথা বলতে চান তাঁদের নিয়ে?
ইয়াসমিন: আমি কখনোই কোনো ক্লায়েন্টের কথা বাইরে বলি না। ব্যায়াম করার জায়গাটি খুব ব্যক্তিগত জায়গা, তাঁদের গোপনীয়তা রক্ষা করব আমি, সেই স্বাচ্ছন্দ্য ও আস্থা দিয়ে থাকি। বরং দেখা গেছে তাঁরাই আমাকে নিয়ে কোথাও গিয়েছেন, সেখানে মজা করেন, গল্প বলেন। আমার পিলাটিস স্টুডিও থেকে ছবি, ভিডিও শেয়ার করেন। আমাকে যখন বলেন শেয়ার করতে তখন আমি দিই। তবে তাঁরা খুব পরিশ্রমী ও ফিটনেসের বিষয়ে সচেতন।
অধুনা: পিলাটিস নিয়ে যদি কিছু বলতেন। পিলাটিস ও যোগব্যায়ামের মধ্যে পার্থক্য আছে কোনো?
ইয়াসমিন: যাঁরা ডায়েট, শরীরচর্চা ও ফিটনেস নিয়ে ভাবেন তাঁদের কাছে পিলাটিস শব্দটি চেনা। স্ট্রেচ ও স্ট্রেন্থের সমন্বয়কে পিলাটিস বলে। শরীরের নিয়ন্ত্রণ, কাঠামো ঠিক রাখা, ক্ষমতা, ভারসাম্য ও নমনীয়তা ধরে রাখে পিলাটিস। এটি পুরোপুরি কার্ডিও ব্যায়াম না। পিলাটিসের প্রবর্তক জার্মান বংশদ্ভুত জোসেফ পিলাটিস বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এটি চালু করেন। যোগব্যায়াম শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বেশি জড়িত। তবে বাংলাদেশে এটিই প্রথম ইকুইপমেন্টকেন্দ্রিক পিলাটিক স্টুডিও এবং ফিটনেস সেন্টার। এখানে কার্ডিও করা যাবে।
অধুনা: কোনটি ভালো বলে আপনি মনে করেন?
ইয়াসমিন: একেক জনের পছন্দ একেক রকম। শরীরচর্চা করাই আসল বিষয়, কোনটি করল, সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ইয়াসমিন: খাবারের ব্যাপারে খুব সচেতন, তবে খুব খেতে ইচ্ছে করলে মায়ের হাতের বিরিয়ানি খাই। এটাই একমাত্র ভারী খাবার, যা আমি খাই।
অধুনা: বাংলাদেশে তো আগেও এসেছিলেন, কেমন লেগেছে?
অধুনা: এখানকার মানুষ খুব ভালো, আন্তরিক। এর আগে আমি দুবার এসেছি। সে কারণে এখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করলাম। আমি চাই, তাঁরা আরও নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হবে। পিলাটিস করবে।
অধুনা: সুস্থ, সুন্দর ও ভালো থাকার টিপস কী?
ইয়াসমিন: ব্যায়াম করা, ব্যায়ামের উপকারিতা জানা, ব্যায়ামের বিষয়ে সিরিয়াস হওয়া ও ব্যায়াম না করার জন্য কোনো অজুহাত না খোঁজা। অনেকে আছেন, ঠিক করেন নতুন বছর থেকে শুরু করব; কাল ছুটি তো পরশু থেকে করব। সারা দিন কাজ করি, নিজের জন্য সময় কোথায়, বাচ্চা সামলিয়ে কীভাবে করব—এগুলো কোনো কাজের কথা নয়, নিছকই অজুহাত। সুস্থ থাকতে, সুন্দর থাকতে অজুহাত বাদ দিতে হবে। আর খাবার খাওয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ, জিম বা পিলাটিস স্টুডিওতে থাকবেন দুই-তিন ঘণ্টা। বাকি সময়টা নিজের ঘরে বা কাজের জায়গায়। তখন কী খাবার খেলেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ডায়েট মেনে খাবার খেতে হবে। এমনকি ভ্রমণের সময়ও। আমি নিজেও তা–ই করি। যা সামনে পাই, যত সুস্বাদই হোক না কেন, খাই না।
আশফারিয়া খায়ের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বেঙ্গল ওয়েলবিং
ইয়াসমিন করাচিওয়ালার জনপ্রিয়তা দেখে, তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনে একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা। প্রত্যেকের জীবনযাপন বুঝে এখানে পিলাটিস করানো হবে। পিলাটিসের নানা রকম যন্ত্র আছে, এ ছাড়া কার্ডিও ব্যায়াম, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করা যাবে। একক, যুগল ও দলে—এভাবে এখানে সেবা দেওয়া হচ্ছে। কার জন্য কোন ধরনের ডায়েট লাগবে, আমাদের বিশেষজ্ঞরা সেটি জানিয়ে দেবেন। ইয়াসমিন করাচিওয়ালার কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছয়জন আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষক আছেন, যাঁদের ৫ থেকে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ঢাকার পিলাটিস স্টুডিও। আপাতত শুক্রবার বন্ধ। তবে ভবিষ্যতে সাড়া দেখে শুক্রবারেও চালু করব আমরা।
ইয়াসমিন করাচিওয়ালা’স বডি ইমেজের সঙ্গে যোগাযোগ: ০১৩০৭১৫৩০৮০