বিজয় উল্লাসের সাথে বাঁশের ব্যবহার, অশ্লীল শব্দের সমন্বয়ে বাক্য চয়ন অপ্রত্যাশিত !

নজরুল ইসলাম

প্রসঙ্গঃএশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের কাঙ্খিত বিজয়

ক্রিকেট এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের কাঙ্খিত বিজয় ও আমাদের ব্যাঙ্গাত্মক অশ্লীল রুচিহীন ক্যাপশন সম্প্রীতিতে আঘাত হানতে পারে । বিজয় উল্লাসের সাথে বাঁশের ব্যাবহার, অশ্লীল শব্দের সমন্বয়ে বাক্য চয়ন ও একটি দেশ বা জাতিকে নিয়ে বিশ্রী বাজে মন্তব্য বহিবিশ্বে আমাদের অতিউৎসাহী প্রতিহিংসাপরায়ণ হিসাবে পরিচিত করতে পারে। অতীত নিয়ে ঘাটাঘাঁটি এমন একটি উদাহরনের প্রসঙ্গ টেনেই আমার মতামতটি ব্যাক্ত করতে চাই।

বছর খানেক পূর্বে লন্ডনে কর্মপরিসরে দায়িত্ব কার্য সম্পাদন নিয়ে আমার এক কলিগের সাথে ভুল বুঝাবুঝির সূত্রপাত হয়েছিল। আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির মাত্রা যাতে গন্ডি পেরিয়ে না যায় সেই চিন্তা থেকেই আমাদের ম্যানেজার আমাদের ডাকলেন তিনির অফিসে। বললেন, আপনারা সিনিয়র স্টাফ আপনাদের কাছ থেকে শুনতে চাই কি এমন ঘটনা ঘটেছে যা আপনাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবতারণা করেছে ? আমার কলিগ আর আমি আমরা একজন অন্য জনকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য ঘটনা প্রবাহ বর্তমান অতীত গত সপ্তাহে গত মাসে বা ৬ মাস পূর্বে কি হয়েছিল অবতারণা শুরু করেছি যা অনেকটা পুথিপাঠের মত অবস্থা।
আমাদের দুই পক্ষের পুথিপাঠ বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে আমাদের ম্যানেজার বললেন অতীতে কি হয়েছিল তা শুনতে চাই না। আজ কি হয়েছে তা শুনতে চাই।

বললেন,আমাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনাদের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝি সালিশ বিচার করার মত কোন বিষয় না। আপনাদের সমস্যা হচ্ছে অতীত নিয়ে ঘটে ঘাঁটি। দেখেন আপনারা সিনিয়র ষ্টাফ, হাতে হাত মিলান আর অতীত ভুলে যান, সামনে হাঁটেন।

কিন্তু ,আমরা কি অতীত ভুলতে পারি? না, এখানেই আমাদের সমস্যা ! জাতীয় স্বার্থ বাদ-ই দেন ,আমাদের ব্যাক্তি স্বার্থে একটু আঘাত পড়লে আমরা এখনোও একে অন্যেকে বলি রাজাকারের বাচ্চা রাজাকার। যাই হোক, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ক্রিকেট ছিল উৎসবমুখর। যেখানে ছিল শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা। প্রতিবেশী রাষ্ট পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার সাথে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ পাকিস্তান স্বাধীনতা সংগ্রামের কোন সম্পর্ক ছিল না। আছে বলে আমি মনেও করি না। রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালির অহংকার। কিন্তু আমাদের আচার আচরণের স্বস্তা বহিঃপ্রকাশ আমাকে প্রায়ই ভাবায়, প্রশ্নবিদ্ধ করে যে আচার আচরণে আমরা কি এখনোও পরাধীন ?

যেমন ধরেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এশিয়াকে কাপে পাকিস্তানকে হারায়ে জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। সাবাস বাংলাদেশ ! অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে ! সারাবিশ্ব রয়েল বেঙ্গলদের অভিনন্দন জানিয়েছে- এমনকি পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রিও যা আমাদের জন্য গৌরবের।

কয়েকদিন পূর্বের এশিয়াকাপ সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিজয়কে উৎযাপন করতে গিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের বাঁশের ব্যবহার দৃষ্টিকটু হয়েছে। যেমন ফটো সম্বলিত বাঁশ যা বিজয় উল্লাসের সাথে সাঙ্গরসিক ,প্রতিকৃতি ফটো যা রুচিতে বাধে, বিশ্রী শব্দের সমন্বয়ে বাক্য চয়ন করে পাকিস্তান টিম ও দেশের বিরুদ্ধে বিজয়ের উল্লাস করছি ,যেখানে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খাঁন ও সাবেক অধিনায়েক ওয়াসিম আকরাম বাঙাল রয়েল বেঙ্গলদের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। তাহারা বাংলাদেশ এবং মাশরাফিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়ে সর্বশেষ চার এশিয়া কাপে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে গোটা বাংলাদেশ জুড়েই বইছে এখন উৎসবের জোয়ার। চরম হতাশ পাকিস্তানের সাবেক বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমরান খান মাশরাফি-মুশফিকদের জয়ের কৃতিত্ব দিতে মোটেও ভুল করেননি। ম্যাচ শেষেই এক বার্তায় তিনি বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে একই বার্তায় পাকিস্তান দলকে কামব্যাক করার জন্য আরও বেশি অনুশীলনের পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির এই তারকা ক্রিকেটার বৰ্তমান প্রেসিডেন্ট।

ইমরান খাঁন তার বার্তায় লিখেন,-অভিনন্দন বাংলাদেশ, এত সুন্দর ভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে যা দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত। তিনি বলেন এই বাংলাদেশ নিয়ে ভবিষ্যত বাণী করা যায় সামনে তাদের জন্য মহা আনন্দের দিন আছে। আমি চাই বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে এশিয়ার রাজত্ব করুক। তবে পাকিস্তানের সর্বোপরি পারফরম্যান্স খুব হতাশ করেছে।পুরো মাঠেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার মানসিকতার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। তিনি আরো বলেন,মাশরাফি থেকে সকলকে শিক্ষা নেওয়া দরকার কিভাবে দলের প্রয়োজনে নিজের জীবন বাজি রেখে খেলে যায়। গতকাল তার এই অসাধারন পারফরম্যান্স-ই বলে দেয় এবারের এশিয়া কাপের যোগ্য দাবিদার মাশরাফি বিন মর্তুযাই।

ওয়াসিম আকরাম আমার ফেভারিট ক্রিকেট ষ্টার। তিনি পাকিস্তানকে তুচ্ছ করে বাংলাদেশকে শক্তিশালী আখ্যা দিয়ে যা বললেন,এশিয়া কাপের সুপার-ফোর পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানকে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে বলে আমি মনে করেছিলাম। তিনি বলেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে নিজ দল পাকিস্তানকে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। পাকিস্তান দলকে ভীতসন্ত্রস্ত মনে হচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক এ পেস গ্রেট বলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। তিনি বলেছেন পাকিস্তানের পারফরমেন্সে আমি হতাশ।

বিজয়ের আনন্দ উল্লাস যাতে করে প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয় সে দিকে আমাদের সকলের মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বিজয় উল্লাস করতে গিয়ে বা অভিনন্দন জানাতে গিয়ে একটি জাতিকে জাতিকে আমরা কোন ভাবেই হেয় ব্যাঙ্গ করতে পারিনা। একটি সহকর্মি ক্রিকেট টিমকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে পারিনা। কারন এই ক্রিকেট গেইমের সাথে ৪৭ বছর পূর্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের কোন সম্পর্ক নেই।

খেলাধুলার সাথে জাতি ধর্ম বর্ণের কোন মাপকাঠি থাকার কথা নয়। ফুটবলে আমরা ব্রাজিল আর্জন্টিনাকে সাপোর্ট করি। তাদের জন্য আমাদের সহায় সম্পত্তি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে পারি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে আবারো অভিনন্দন। পাগলা সাপোর্টারদের উৎসাহ সাপোর্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের জন্যেই সব সময়ই ছিল যা অব্যাহত থাকবে যুগ যুগ ধরে এটাই আমার প্রত্যাশা। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে বহিবিশ্বে নতুন ভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে
বেঙ্গল টাইগারদের হুঙ্কার প্রশংসনীয়। বিজয় উল্লাসের শব্দ চয়ন ও বাক্য হোক শান্তি ও সম্প্রতির। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ও পাগলা সাপোর্টারদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

নজরুল ইসলাম
ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস ( NHS) লন্ডন
মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিষ্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম
আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন।
trade.zoon@yahoo

Advertisement